সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঈদের পর শিরোপার উৎসব

মনোয়ার হক

ঈদের পর শিরোপার উৎসব

একসঙ্গে শুরু না হলেও ঘরোয়া খেলার মর্যাদাকর তিন আসর ফুটবল, ক্রিকেট ও হকি লিগ এখন চলছে। ফুটবলে পেশাদার ও ক্রিকেটে ঢাকা লিগ মাঝপথে রয়েছে। হকির প্রিমিয়ারে উত্তেজনা তো তুঙ্গে। প্রথম পর্ব ছাড়িয়ে এখন সুপার সিক্সের সুপার লড়াই হচ্ছে। কে যে চ্যাম্পিয়ন হবে বলা মুশকিল। ঈদের কারণে তিন লিগই বন্ধ থাকবে। খেলোয়াড়রা ঈদের ছুটিতে উৎসবে দিন কাটাবেন, এরপরই শিরোপা লড়াই। তিন লিগে কারা যে শিরোপার উৎসবে মাতবে অপেক্ষায় থাকতে হবে।

একসঙ্গে সেরা তিন লিগ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে ক্রীড়াপ্রেমীরা দারুণ সময় পার করছেন। তবে তিন লিগে আবার পার্থক্য রয়েছে। ক্রিকেট ও হকিতে যারা শেষ পর্যন্ত শীর্ষে থাকবে তাদের ঢাকার সেরা বলা হবে। ফুটবলের পেশাদার লিগ আবার পুরো দেশকে ঘিরে। এখানে চ্যাম্পিয়ন হওয়া মানেই বাংলাদেশ সেরার খেতাব পেয়ে যাওয়া। বিস্ময় হলেও সত্যি যে, ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে অভিষেকের পর পেশাদার লিগে টানা চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে বসুন্ধরা কিংস গতবার ৭৫ বছরে ঘরোয়া ফুটবল ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়েছে। এবারও তারা শিরোপা জয়ের পথে রয়েছে।

১০ দলের লিগে ১১ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে বসুন্ধরা কিংস শীর্ষে থাকলেও তারা যে চ্যাম্পিয়ন হবেই এ কথা বলা যায় না। আবার এটাও ঠিক তাদের শীর্ষস্থান থেকে নামানোটা কঠিন। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান এখনো একমাত্র অপরাজিত থাকলেও ১১ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ২৩। অর্থাৎ কিংসের চেয়ে তারা পাঁচ পয়েন্টে পিছিয়ে রয়েছে। ঢাকা আবাহনীর সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট পাওয়ায় কিংসের চেয়ে তাদের পার্থক্য ৯ পয়েন্ট। তিন দলই শিরোপা রেসে থাকলেও কিংসকে সরাতে তাদের বাকি ম্যাচগুলো যেমন জিততে হবে তেমনি কিংসকেও একাধিক পয়েন্ট হারাতে হবে। মোহামেডানের চেয়ে পার্থক্য পাঁচ পয়েন্টের। দুই ম্যাচে কিংস হারলে একটি ড্র করলেই সাদা কালোরা এগিয়ে যাবে। সন্দেহ নেই দিয়াবাতে, মোজাফফরভরা ছন্দে রয়েছেন। তারপরও তারা যে পরবর্তী সব ম্যাচ জিতবে তা কি সম্ভব? রবসন, ডরিয়েলটন, মিগেল, রাকিবরা লিগে সেঞ্চুরি ম্যাচ পূরণের পর যে রূপ ধারণ করেছে তাতে সামনে ম্যাচেও আরও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন। এমনিতেই শক্তিশালী দল, এ অবস্থায় তীরে এসে কিংস তরী ডোবাবে তা মনে হয় না। ঈদের পর শিরোপার উৎসব করতে কিংস আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে।

ফুটবল লিগে ঢাকা আবাহনী টানা চার বছর শিরোপাহীন। এবারও ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে যাওয়ার শঙ্কাটাই বেশি। কিংসের চেয়ে ৯ পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে শিরোপা জিতবে তা আকাশ-কুসুম ভাবনায় বলা যায়। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্লাবটি তুলনাহীন তা একবাক্যে স্বীকার করতে হবে। লিস্ট ‘এ’সহ ১৯৭৫ সাল থেকে আবাহনীর ২১ বার ঢাকা ক্রিকেট লিগে শিরোপা জেতার রেকর্ড রয়েছে। এবারও তারা সবাইকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে। টানা ৯ ম্যাচ জিতেই তারা শীর্ষে অবস্থান করছে। তবে ট্রফি আবাহনীর ঘরেই থাকছে তা বলার সময় আসেনি। দুটি করে ম্যাচ হেরে শেখ জামাল ধানমন্ডি ও ঢাকা মোহামেডান তাদের ঘারেই নিশ্বাস ফেলছে। তারপর আবার ঈদের পর সুপার লিগ মাঠে গড়াবে। তবে সেরা দল গড়ে আবাহনীর ক্রিকেটাররা ব্যাটে বলে যে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করছে তাতে তাদেরই শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা বেশি।

অন্যদিকে হকি প্রিমিয়ার লিগে উত্তেজনা তো তুঙ্গে। ১০ দলের সুপার সিক্সে চার দলের লড়াই বেশ জমে উঠেছে। মোহামেডান, আবাহনী, মেরিনার্স বা ঊষার মধ্যে কে চ্যাম্পিয়ন হবে বলা যাচ্ছে না। অনেক দিন পর লিগ মাঠ গড়িয়েছে। দর্শকরা চার দলের দারুণ লড়াই উপভোগ করছেন, এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কি হতে পারে। আবাহনী সবার সেরা দল গড়ার পর শুরু থেকে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল লিগে শিরোপা জেতাটা সহজ হবে মনে হচ্ছিল। এখন তারা বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে গেছে। প্রথম পর্বে শীর্ষে থাকার কথা থাকলেও শেষ ম্যাচে মেরিনার্সের কাছে হেরে হিসেব বদলে যায়। সুপার সিক্সেও মেরিনার্সের কাছে ফের হার। এই হারে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে গেছে মোহামেডান। ১২ ম্যাচে ৩২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। তবে খুব যে স্বস্তিতে আছে তাও বলা যাবে না। মেরিনার্স, আবাহনী ও ঊষার চেয়ে মাত্র চার পয়েন্টে এগিয়ে আছে। মোহামেডানের এখন তিনটিই বড় ম্যাচ। মেরিনার্স, ঊষা এরপর আবাহনী। শিরোপা উৎসবে মেতে উঠতে পারে চার দলের যে কোনো একটি।

ঈদ উৎসবে ক্লাবগুলো এখন ফাঁকা। তবুও চার দলের খেলোয়াড়দের মনোযোগ থাকবে লিগের দিকে। কারণ ঈদের পর যে আসল লড়াই।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর