মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

লিগ ঘিরে ঝুঁকিতে হকি!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

লিগ ঘিরে ঝুঁকিতে হকি!

হকি ঘিরে উত্তেজনা তুঙ্গে। অনেকদিন পর প্রিমিয়ার লিগ মাঠে গড়ালেও দর্শক খেলা দেখে তৃপ্তি পেয়েছিল। বড় ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। কে যে চ্যাম্পিয়ন হবে শেষ পর্যন্ত বলা যাচ্ছিল না। অথচ সৌন্দর্যময় লিগে কালিমা যুক্ত হলো। অবশ্য তা শুধু শেষ ম্যাচ ঘিরে নয়, লড়াই হয়েছে চোখে পড়ার মতো; তবে হট্টগোলও কম হয়নি। এমনও হয়েছে, এক ঘণ্টার ম্যাচ দুই ঘণ্টার বেশি লেগে গেছে। মোহামেডান-আবাহনী শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গেছে। খেলেছে দুই দল কিন্তু শিরোপার সম্ভাবনা ছিল মেরিনার্সেরও। ১৯ এপ্রিল দিনের প্রথম ম্যাচে মেরিনার্স হারায় পুলিশকে। তাদের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে ৩৭ পয়েন্ট। আবাহনী-মোহামেডান ড্র হলে মেরিনার্সই এককভাবে শিরোপা ধরে রাখতে পারত। আবাহনীও আট মৌসুম পর এককভাবে চ্যাম্পিয়ন হতে পারত। মেরিনার্স প্রথম ম্যাচে ড্র করলে আর মোহামেডানকে হারালে বিজয় নিশানা ওড়াত। অন্যদিকে মোহামেডান জিতলে তো কোনো সমীকরণের প্রয়োজনই পড়ত না।

শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ ঘিরে অনেক দিন পর দর্শকের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দেয়। কয়েকদিন ক্রিকেট ও ফুটবল পেছনে ফেলে হকিই ছিল আলোচনায়। যতই বিতর্ক থাকুক হকি যে শেষ হয়ে যায়নি তার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু লাভ হলো কী? তুচ্ছ ঘটনায় আবাহনী ও মোহামেডানের খেলোয়াড়রা যেভাবে মারামারি করেছেন তা শুধু দুই দল নয়, দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য বড় লজ্জা। সবচেয়ে অবাক কান্ড ঘটায় মোহামেডান। ম্যাচের ১৭ মিনিট বাকি থাকা অবস্থায় তারা ৩-২ গোলে এগিয়ে ছিল। অথচ শুরুতে আবাহনী ২ গোলে এগিয়ে যায়। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে এগিয়ে থেকেও মোহামেডান খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মাঠ ছাড়লে সবাই অবাক হয়ে যায়। মোহামেডানের কথা-আগে থেকেই বিপাকে ফেলতে ফেডারেশন ষড়যন্ত্রের জাল বুনে রেখে ছিল। শেষ পর্যন্ত বিশেষ মহলকে খুশি করতে তা-ই করেছে। এখানে নাকি গদি টিকিয়ে রাখারও ব্যাপার ছিল। মোহামেডানের দুজনকে লাল ও একজনকে হলুদ কার্ড দেখানো হয়। অন্যদিকে আবাহনীর একজন লাল ও আরেকজন হলুদ কার্ড দেখেন। অ্যাম্পায়ারের এ সিদ্ধান্ত মানতে পারেনি মোহামেডান। ভিডিও রেফারেল দেখেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে ওমানের অ্যাম্পায়ার জানান। মোহামেডানের কর্মকর্তারা একে ভিত্তিহীন বলছেন। তাদের অভিযোগ, ফেডারেশনের একজন কর্মকর্তার ইন্ধনে অ্যাম্পায়ার সিদ্ধান্ত দেন যাতে মোহামেডান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাক, অ্যাম্পায়ার বারবার মোহামেডানকে মাঠে ফেরার অনুরোধ করেও ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত নিয়ম অনুযায়ী ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে আবাহনীকে বিজয়ী ঘোষণা করে মাঠ ছাড়েন।

যেভাবেই বিজয়ী ঘোষণা করা হোক না কেন, আবাহনী ও মেরিনার্সের এখন সমান ৩৭ পয়েন্ট। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুমিনুল হক সাঈদ বলেছেন, ‘বাইলজ মেনেই শিরোপা নির্ধারণের জন্য আবাহনী ও মেরিনার্সকে প্লে-অফ ম্যাচ খেলতে হবে। দুই দলের খেলোয়াড়রা বিমান বাহিনীর হয়ে দেশের বাইরে খেলতে গেছেন। ফিরে এলেই প্লে-অফের তারিখ ঘোষণা হবে।’ প্রশ্ন হচ্ছে-আসলেও কি প্লে-অফ হবে, না যৌথ চ্যাম্পিয়নের ঘোষণা আসবে? যতটুকু জানা গেছে, দুই দলই নাকি প্লে-অফ খেলতে রাজি নয়। বিদেশিরা চলে গেছেন, তাদের ফিরিয়ে আনতে এবং স্থানীয়দের পেছনে দুই বড় দলের বড় অঙ্ক ব্যয় হবে। জানা গেছে, স্পন্সর থেকে ফেডারেশন ৪০ লাখ টাকা পেলেও কোনো দলকে লিগের জন্য অনুদান দেয়নি।

অর্থ তো আছেই, প্লে-অফে তো এক দলকে হারতেই হবে। সে ক্ষেত্রে কেউ ঝুঁকি নিতে চাইবে না। যৌথ চ্যাম্পিয়ন হলেই বরং দুই দলের লাভ। তা ছাড়া অতীতেও তো যৌথ চ্যাম্পিয়ন করা হয়েছে। অতীত আর এবারের বিষয়টি ভিন্ন। কেননা বাইলজে আছে প্লে-অফের কথা। এখন যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করলে মোহামেডান তো প্রশ্ন তুলতেই পারে বাইলজ পাশ কাটানো নিয়ে। সে ক্ষেত্রে মোহামেডানের বিষয়টি ডেড ইস্যু ধরা হলেও ঝামেলা থেকেই যাচ্ছে। শেষ দিকে এসে ফেডারেশন এখন নানা বিষয় নিয়ে চিন্তিত। শোনা যাচ্ছে, মোহামেডানে আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা ভাবছে।

সর্বশেষ খবর