রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

ধ্বংসস্তুপ থেকে সেরাদের আসরে

মনোয়ার হক

ধ্বংসস্তুপ থেকে সেরাদের আসরে

♦ লিগে টানা ৭৬ ম্যাচে অপরাজিত থাকা মোহামেডানকে পরাজিত করে ফকিরেরপুল

♦ ১৯৪৮ সালে ঘরোয়া লিগ শুরুর পর ঢাকা ওয়ান্ডারার্স প্রথম হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়। ছয়বার তাদের লিগ জেতার কৃতিত্ব রয়েছে

 

চ্যাম্পিয়ন্সশিপ লিগের গন্ডি পেরিয়ে ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল ও ওয়ান্ডারার্স এখন পেশাদার ফুটবল লিগে খেলবে। এখানে শিরোপা নয়, টিকে থাকতে হলেও কোটি কোটি টাকার প্রয়োজন পড়ে। মাঝারি মানের দল গড়তেই তো ৩ বা ৪ কোটি টাকা লাগে। এত টাকা তারা কীভাবে সংগ্রহ করবে? নাকি একবার খেলেই নেমে যাওয়ার মতো দল গড়বে? একসময়ে ওয়ান্ডারার্স ফুটবলে খুবই জনপ্রিয় দল ছিল। ১৯৪৮ সালে ঘরোয়া লিগ শুরুর পর তারাই প্রথম হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়। ছয়বার তাদের লিগ জেতার কৃতিত্ব রয়েছে। তাছাড়া অসংখ্য টুর্নামেন্টে শিরোপাও জিতেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪০ দশকে ওয়ান্ডারার্সে খেলেছেন। এত সাফল্য, এত সুনাম তারপরও নানা কারণে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি ক্রীড়াঙ্গন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল। কোন লিগে খেলছে না দল বিলুপ্ত হয়েছে তা অজানা ছিল। কিছু নিবেদিত সংগঠকের কারণে ওয়ান্ডারার্স কোনোমতে টিকে থাকলেও ক্যাসিনোকান্ডের পর ক্লাবে তালা ঝুলে প্রায় চার বছর। এ অবস্থায় ওয়ান্ডারার্স যে টিকেছিল এটাই বড় ব্যাপার। ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্সের প্রথম শ্রেণির আসরে বড় ধরনের সাফল্য না থাকলেও ১৯৮৮ সালে তাদের প্রিমিয়ার লিগে আগমন চমক দিয়ে। অভিষেক আসরেই তারা বড় দলগুলোকে পেছনে ফেলে ফেডারেশন কাপে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল। আবাহনীর কাছে হেরে ফাইনালে খেলতে পারেনি। ক্রীড়াঙ্গনে তারা বড় আলোড়ন তুলে ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে। ১৯৮৫ সালে সুপার লিগে আরামবাগের কাছে হারার পর মোহামেডান লিগে টানা ৭৬ ম্যাচে অপরাজিত থেকে উপমহাদেশের ঘরোয়া লিগে নতুন ইতিহাস গড়ে। সেই মোহামেডানের গর্ব ভেঙে দেয় ইয়ংমেন্স। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে লিগে তারা ২-১ গোলে মোহামেডানকে হারিয়ে হইচই ফেলে দেয়। ফকিরেরপুল চ্যাম্পিয়ন ও ওয়ান্ডারার্স বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে রানার্সআপ হয়ে পেশাদার লিগে প্রথমবার জায়গা করে নিয়েছে। দুই পরিচিত ক্লাবের এমন সাফল্যকে অনেকে রূপকথার কাহিনিও বলছেন। এর পেছনে কারণও রয়েছে। নিষিদ্ধ ক্যাসিনোকান্ডে জড়িয়ে দুই ক্লাব তো প্রায় ধ্বংস হতে চলছিল। ক্লাবের আসবাবপত্র থেকে এমন কিছু ছিল না যে লুট হয়নি। ক্লাবে খেলোয়াড়রা থাকবে সেই খাটও ছিল না। এদিক-সেদিক থাকার ব্যবস্থা করে দল মাঠে নেমেছে। ক্যাসিনোকান্ডের পর যে কালো অধ্যায় নেমে এসেছিল, তাতে দুই দলকে সহযোগিতার পথ বন্ধ হয়ে যায়। নিবেদিত কর্মকর্তারা যতটুকু পারেন সেই অর্থ জোগাড় করে চ্যাম্পিয়ন্সশিপ লিগ খেলেছে। সত্যি বলতে কি পেশাদার লিগে যোগ্যতা তো দূরের কথা, চ্যাম্পিয়ন্সশিপ লিগে তারা টিকে থাকবে কি না এ নিয়েও শঙ্কা ছিল। সেই অন্ধকার থেকে বের হয়ে ফকিরেরপুল ও ওয়ান্ডারার্স এখন দেশসেরা আসরে মাঠে নামার অপেক্ষায়। নতুন মৌসুমে তাদের পেশাদার লিগে যাত্রা হবে। যার দলবদল শুরু হবে ১ জুন থেকে। পেশাদার লিগ মানেই তো কোটি কোটি টাকার ব্যাপার। এ অবস্থায় দুই ক্লাব করবেটা কী? ফকিরেরপুল এর আগেও পেশাদার লিগে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। অর্থ সংকট দেখিয়ে সেবার তারা খেলেনি। এবার তো আর সম্ভব নয়। লিগ কমিটিই কড়া আইন করে দিয়েছে, না খেললে চার বছরের জন্য সাসপেন্ড। সুতরাং খেলতেই হবে। এ ব্যাপারে ফকিরেরপুল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাইনু বলেন, ‘সত্যি বলতে কি এখনো আমরা সংকটের মধ্যেই রয়েছি। ক্যাসিনোকান্ডের পর ক্লাবের ইমেজের যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেবে। তারপরও আমরা পেশাদার লিগ অবশ্যই খেলব। শক্তিশালী বা মাঝারি মানের দল গড়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। রেলিগেশন এড়ানোর টার্গেট নিয়েই আমরা দল গড়ব।’

‘ওয়ান্ডারার্সের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, ‘ঐতিহ্য বা অতীত সাফল্যের যত কথা বলি না কেন, ক্যাসিনোকান্ডে জড়িয়ে আমাদের ইমেজে বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। কোমর সোজা করে দাঁড়াতে সময় নেবে। আশা করছি, ওয়ান্ডারার্সকে যারা ভালোবাসেন, তারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। শক্তিশালী দল গড়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। আমাদের চেষ্টা থাকবে কীভাবে পেশাদার লিগে টিকে থাকা যায়, সেই মানের দল গড়তে। আকাশকুসুম চিন্তা করে লাভ নেই।’

সর্বশেষ খবর