১৯৭২ সালে ফুটবলের মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনে ঢাকা আবাহনী ক্রীড়া চক্রের আবির্ভাব ঘটে। এরপর ক্রিকেট ও হকিতেও দেখা মেলে। নতুন দল হলেও স্বাধীনতার পর সাফল্য দিয়েই ক্রীড়াঙ্গনে আলাদা জায়গা করে নেয়। পূর্ব পাকিস্তান আমলে মোহামেডানের পাশাপাশি ওয়ান্ডারার্সের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। এমনকি অফিস দল ইপিআই ডিসিরও (পরে বিআইডিসি, বিজেআইসি ও বিজেএমসি নামকরণ হয়) সমর্থকসংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু স্বাধীনতার পর আবাহনী হয়ে ওঠে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় দল। বড় তিন খেলায় পাল্লা দিয়ে শিরোপা জেতায় আবাহনী ও মোহামেডান দেশের সেরা ও দুই প্রধান দলে পরিণত হয়। ক্রিকেট ও হকিতে সাফল্য এলেও আবাহনীর পরিচিতিটা আসে মূলত ফুটবল থেকেই। তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গড়ে ফুটবলপ্রেমীদের নজর কাড়ে।
ফুটবল লিগে মোহামেডানের প্রথম শিরোপা আসে ১৯৫৭ সালে। অন্যদিকে ১৯৭২ সালে আবাহনীর অভিষেক হলেও সেবার হট্টগোলে লিগ পরিত্যক্ত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় বিআইডিসি। ১৯৭৪ সালে ফুটবলে প্রথম ট্রফি জেতে আবাহনী। এরপর আর তাদের পেছনে তাকাতে হয়নি। লিগ, বিভিন্ন টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতে দর্শকের মন জয় করে নেয়। পেশাদার লিগ শুরুর পর তো আবাহনীর ছিল একক রাজত্ব। মোহামেডানের কাছে পেশাদার লিগ জেতাটা স্বপ্নে পরিণত হলেও আবাহনী হ্যাটট্রিকসহ সর্বোচ্চ ছয়বার শিরোপা জেতার কৃতিত্ব অর্জন করে। পূর্ব পাকিস্তান আমল মিলিয়ে ফুটবল লিগে সর্বোচ্চ ১৯ বার লিগ জিতেছে মোহামেডান। সেখানে আবাহনীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭-তে। যে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল তা স্পর্শ করা তো বটেই, মোহামেডানকে ছাড়িয়ে যাওয়াটা সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল।
সেই আবাহনীই কি না থমকে আছে। টানা পাঁচ মৌসুম তারা লিগে শিরোপা জিততে ব্যর্থ। অথচ ২০১৮-১৯ মৌসুমে পেশাদার লিগে অভিষেকের পর বসুন্ধরা কিংস টানা পাঁচবার লিগ জিতে ৭৬ বছরের ঘরোয়া ফুটবলে ইতিহাস গড়েছে। মোহামেডান সেই মানের দল না গড়ায় তাদের শিরোপা না জেতাটা স্বাভাবিক ঘটনাই বলা যায়। কিন্তু আবাহনী কেন পারছে না? তারা কি কিংসের মতো শক্তিশালী দল গড়তে পারছে না? আসলে শক্তির দিক দিয়ে দুই দলের কোনো পার্থক্য নেই। লোকাল ও বিদেশি কালেকশনের দিক দিয়ে দুই দলই সমান। এর পরও ভরাডুবির কারণটা কী?আবাহনী হঠাৎ এতটা থমকে গেছে যা অবিশ্বাস্যই বলা যায়। গত মৌসুমে তারা শিরোপার কোনো ট্রফিই ঘরে তুলতে পারেনি। এবারও সেই বেহাল দশা। লিগে ব্যর্থতার পর তারা স্বাধীনতা ও ফেডারেশন কাপ কোনোটাতেই চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। গেল মৌসুমে তবু ফেডারেশন কাপে ফাইনালে উঠেছিল। এবার তা-ও সম্ভব হয়নি। এমন ব্যর্থতায় ক্ষুদ্ধ সমর্থকরা। কেন এ ব্যর্থতা-এ নিয়ে হয়তোবা ভিতরে ভিতরে টিম ম্যানেজমেন্ট আলোচনা করলেও প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলছেন না। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার শেখ মো. আসলাম বলেন, ‘আমার পরিচিতি এসেছে আবাহনীতে খেলেই। সুতরাং দলের প্রতি আমার আলাদা একটা টান থাকবেই। দলের এমন বিপর্যয়ে আমিও হতাশ। কেন বারবার এমনটি ঘটছে অবশ্যই কর্মকর্তাদের খতিয়ে দেখা উচিত। বসুন্ধরা কিংস যোগ্যতা প্রমাণ করে সাফল্য পাচ্ছে। দলটির প্রশংসা করতেই হয়। তবে এটাও মানতে হবে, ফুটবল জাগরণে আবাহনী ও মোহামেডানের সাফল্য পাওয়াটাও খুবই জরুরি।’