শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

কিংস থাকছে কিংয়ের মতোই

পেশাদার ফুটবলে দলবদল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

কিংস থাকছে কিংয়ের মতোই

২৯ মে পেশাদার লিগের পর্দা নামার পর ২ জুন নতুন মৌসুমের জন্য ফুটবলারদের দলবদল শুরু হয়ে গেছে। ঘরোয়া আসরে এত দ্রুত দলবদলের ঘটনা এই প্রথম। প্রায় দুই মাস ধরে এ কার্যক্রম চলবে বলে দলবদল ঘিরে ফুটবলপ্রেমীদের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। যতটুকু হইচই তা ঢাকা আবাহনীকে ঘিরেই। ক্লাবের কোনো কর্মকর্তা মুখ না খুললেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনার শেষ নেই। বলা হচ্ছে, নতুন মৌসুমে সাফল্য পেতে আবাহনী কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছে। দলের শক্তির বাড়াতে স্থানীয় মানসম্পন্ন খেলোয়াড়দের অবিশ্বাস্য পারিশ্রমিক দিয়ে দলে ভেড়াবে। তা ছাড়া বিদেশিও থাকবে চোখে পড়ার মতো। আবাহনী ক্লাব থেকে এ নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। একজন অবশ্য বলেছেন, ‘আমরা বরাবরই শক্তিশালী দল গড়ি। এবারও ব্যতিক্রম ঘটবে না। এ নিয়ে হইচইয়ের কী আছে?’

কৌশলগত কারণে ক্লাবগুলো দলবদল নিয়ে কখনো মুখ খোলে না। গোপনে কার্যক্রম চালিয়ে যায়। যাক, মুখ না খুললেও আবাহনী ঘর শক্তিশালী করতে লিগ চলা অবস্থায় কাজ শুরু করে দিয়েছে। আর তা আবাহনীর মতো বড় দলের জন্য স্বাভাবিকও। টানা পাঁচ মৌসুম তারা লিগে শিরোপাবঞ্চিত। আর গেল দুই আসরে কোনো ট্রফিই জিততে পারেনি। শেষ হওয়া মৌসুমে অবস্থা এতটা নাজুক ছিল যে, কোনো আসরে ফাইনাল খেলতে পারেনি। লিগেও তাদের অবস্থান ছিল ৩-এ; যা আবাহনীর জন্য সত্যিই প্রেস্টিজের। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার কথাটা আজগুবি হলেও এটা ঠিক, সেরা দল গড়তে যে অর্থের প্রয়োজন তা আবাহনীর রয়েছে। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি থাকলেও আবাহনী কিন্তু ঠিকই বিগ বাজেটের দল গড়েছিল; এবারও ব্যতিক্রম ঘটবে না।

গুঞ্জন ছিল, অভিষেকের পর থেকে টানা পাঁচ লিগসহ ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপ মিলিয়ে বসুন্ধরা কিংস ১১ শিরোপা জিতেছে। সে ক্ষেত্রে আবাহনীর টার্গেট থাকবে কিংসকে থামানো। এটাই স্বাভাবিক। সত্তর, আশি বা নব্বইয়ের দশকে মোহামেডান-আবাহনী একে অন্যের ফুটবলার টানতে রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়ত। এখন ভালো খেলোয়াড় টানতে আবাহনী যদি কিংসের ঘরে নজর দেয়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কিংসও তো প্রতি মৌসুমে আবাহনীর খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়েছে। এখন কিংসের কোনো খেলোয়াড় নতুন মৌসুমে আবাহনীতে যোগ দিতেই পারেন।

প্রশ্ন হচ্ছে, কিংস থেকে কার যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে? এ ক্ষেত্রে রাকিব হোসেনেরই নামটি বেশি শোনা যাচ্ছে। তিনি শুধু শেষ হওয়া লিগে স্থানীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতাই নন, তাকে এখন বলা হয় দেশের সেরা ফুটবলার। নতুন মৌসুমে তার পারিশ্রমিক নাকি কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যাবে। রাকিবকে ঘিরেই গুঞ্জন, তার সঙ্গে নাকি আবাহনীর কথাবার্তা চলছে। গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো ও ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষের নামও শোনা যাচ্ছিল। অথচ এদের কারওই কিংস ছাড়ার সম্ভাবনা নেই। লিগ চলা অবস্থায় তাদের সঙ্গে ফাইনাল কথা হয়ে গেছে কিংস ম্যানেজমেন্টের। এটা ঠিক, বসুন্ধরা কিংস থেকেও ফুটবলার বের হয়ে যাচ্ছেন। তবে এদের স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছে কিংস। ইতোমধ্যে কেউ কেউ নতুন ঠিকানাও খুঁজে পেয়েছেন।

বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, ‘আমরা যাদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট তাদের সঙ্গে চূড়ান্ত কথা হয়ে গেছে। যদি কোনো গ্যাপ থাকে অবশ্যই নতুনদের দিয়ে পূরণ করা হবে। আর বিদেশিদের ক্ষেত্রে আমরা লাতিনদেরই গুরুত্ব দিচ্ছি।’ অর্থাৎ কোনো বিদেশি ফুটবলার যদি ছেড়েও দেওয়া হয় আরও মানসম্পন্ন খেলোয়াড় আনবে। সুতরাং নতুন মৌসুমে কিংসের চেহারায় কোনো পরিবর্তন আসছে না। কিংস থাকছে কিংয়ের মতোই। সবচেয়ে বড় কথা, সামনে কিংসের টানা ছয় অর্থাৎ শিরোপার ডাবল হ্যাটট্রিক পূরণ করার সুযোগ। তা কাজে লাগাতে দল আরও শক্তিশালী হবে, এ নিয়ে সংশয় নেই।

কিংস থেকে কাউকে না পেলেও আবাহনী ঠিকই মানসম্পন্ন খেলোয়াড় টানছে। আর তা মোহামেডানের ঘর ভেঙে। আবাহনী থেকে এ বিষয়ে কোনো কিছু বলা না হলেও জানা গেছে, গত দুই মৌসুম দর্শকের নজরকাড়া মোহামেডানের মুরাদ, মেহেদী, শাহরিয়ার ইমন, কামরুল ও জাফর ইকবালকে নিশ্চিত করেছে আবাহনী। তবে মোহামেডানের ভাষ্য, মেহেদীর দল ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না। নতুন মৌসুমে তিনি মোহামেডানের অধিনায়ক হবেন। মুরাদ ও ইমনকে ধরে রাখার চেষ্টা চলছে। চেষ্টা আর লোভনীয় অফার পাওয়া এক কথা নয়। মোহামেডান যে এবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা অনেকটাই নিশ্চিত।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর