শনিবার, ১৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

রিশাদ এক জেনুইন ম্যাচ উইনার

আসিফ ইকবাল

রিশাদ এক জেনুইন ম্যাচ উইনার

একজন বিশ্বমানের লেগ স্পিনারের খোঁজে বহুবার ক্যাম্পের আয়োজন করেছে ক্রিকেট বোর্ড। এসব ক্যাম্প থেকে জুবায়ের হোসেন লিখন, আমিনুল ইসলাম বিপ্লবদের মতো লেগ স্পিনার বেরিয়ে এসেছেন। জাতীয় দলের হয়ে এরা খেলেছেনও। আবার হারিয়েও গেছেন। রংপুরের ছেলে দীর্ঘকায় রিশাদ হোসেন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। বয়স মাত্র ২২। শারীরিক গঠন যেরকম তাতে পেস বোলার হলে মানিয়ে যেত! হয়েছেন লেগ স্পিনার। একটু জোরে বোলিং করেন। বলে টার্ন, বাউন্স ও বৈচিত্র্য আছে। লেগ স্পিনের পাশাপাশি ফ্লিপার, গুগলি ও টপ স্পিন করেন। চলতি টি-২০ বিশ্বকাপে খেলছেন রিশাদ। শুধু খেলছেন বলে ভুল, টাইগারদের স্পিন বিভাগের মূল অস্ত্র। তার স্পিন ভেলকিতে বাংলাদেশ এখন সুপার এইটে খেলার পথে। বাংলাদেশ হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসকে। দ্বীপরাষ্ট্রের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করেন। টিউলিপ ফুলের দেশটির বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রু দেন। ১৭ জুন নেপালের বিপক্ষে সুপার এইট নিশ্চিতের ম্যাচ। সবাই তাকিয়ে আছেন রিশাদের দিকে।

টার্গেট ১৬০। জিততে মরিয়া নেদারল্যান্ডস ১৪ ওভারে ৩ উইকেট ১০৪ রান সংগ্রহ করে। সাইব্রান্ড অ্যাঙ্গেলব্রেখট ও স্কট এডওয়ার্ডস দারুণ খেলে চাপে ফেলেন টাইগার বোলারদের। ১৫তম ওভারে বোলিংয়ের আগে টাইগার অধিনায়ক দারুণভাবে উৎসাহিত করেন রিশাদকে। আত্মবিশ্বাসী রিশাদ ১৫ ওভারের প্রথম ৩ বলে রান দেন ৭। চতুর্থ বলে ফেরান অ্যাঙ্গেলব্রেখটকে। এক বল পর স্ট্যাম্পিং করেন বাস ডি লিডিকে। তার ওই ওভারের তিন বলে ঘুরে যায় ম্যাচ। চাপে পড়ে কমলাবাহিনী। সেখান থেকে আর বের হতে পারেনি। ৪৬ বলে ৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন সাকিব। অথচ রিশাদ ছিলেন ম্যাচ ঘুরানোর নায়ক। ম্যাচ শেষে তার স্পেল ৪-০-৩৩-৩। সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল ক্রিকইনফোকে জানান ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট রিশাদের ওই ওভার। তিনি বলেন, ‘রিশাদের তৃতীয় ওভার ম্যাচের চেহারা বদলে দিয়েছে। ওই সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সমানে সমানে লড়ছিল নেদারল্যান্ডস। নেদারল্যান্ডস ৩ উইকেটে ১১১ রান তুলেছিল তখন। খেলাটা কোন দিকে যাবে, সেটা নিশ্চিত ছিল না। ওই ওভারটা অবিশ্বাস্য ছিল।’ ভুল বলেননি সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক।

দলের সেরা স্পিনার সাকিব। অথচ তিন ম্যাচে বল হাতে পারফরম্যান্স করতে পারেননি। তার অভাব পূরণ করছেন প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে আসা রিশাদ। তিন ম্যাচে এখন পর্যন্ত ১২ ওভার বোলিংয়ে ৮৭ রানের খরচে নিয়েছেন ৭ উইকেট। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৭.২৫। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচসেরা হয়েছেন ৪-০-২২-৩ স্পেল করে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তার স্পেল ৪-০-৩২-১। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তার ম্যাচ ঘোরানো স্পেল ৪-০-৩৩-৩। সাকিব বল হাতে ব্যর্থ হলেও ডাচবাহিনীর বিপক্ষে অপরাজিত ৬৪ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছেন। ম্যাচ শেষে গোটা দলের প্রশংসা করেছেন। রিশাদকে আলাদা প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, ‘খুবই ভালো করছে রিশাদ। নতুন হিসেবে আমার মনে হয় সে যেভাবে নিজের জাতটা চেনাচ্ছে, সেটা খুবই ভালো।’ ক্যারিয়ারে ৩টি ওয়ানডে খেলেছেন। মূলত টি-২০ ক্রিকেটেই তাকে ব্যবহার বেশি করছেন কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। ২০ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ২২টি। বিশ্বকাপে দারুণ ধারাবাহিক নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে বলেন, ‘সব জয়ে ভালো লাগা কাজ করে। অবদান রাখতে পেরে ভালো লাগছে। সবার শরীরী ভাষা, সবার যে চেষ্টা, সেটা অনেক ভালো লেগেছে। ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করব আরও কীভাবে উন্নতি করা যায়। প্রতিটি ম্যাচেই নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছি। ভেবেছি, একটা-দুইটা উইকেট নিলে খেলাটা আবার আমাদের দিকে চলে আসবে। আমি এটা করার চেষ্টা করেছি।’

 

 

সর্বশেষ খবর