বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাছাই পর্ব হিসেবে পরিচিত ছিল আইসিসি কাপ। বাংলাদেশ শুরু থেকে এ আসরে অংশ নিলেও বিশ্বকাপ খেলাটা স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অথচ আইসিসি ট্রফিতে যেসব দেশ খেলত সেখানে বাংলাদেশের সামর্থ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন বা রানার্সআপ হয়ে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার। শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে তো আছেই, বাংলাদেশের আগে কেনিয়া, আরব আমিরাত এমনকি নেদারল্যান্ডসও বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে; যা ছিল বড় লজ্জার। যাক, শেষ পর্যন্ত এ দুর্নাম ঘোচে ১৯৯৭ সালে। সেবার কুয়ালালামপুরে আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালে স্বপ্নের বিশ্বকাপে অভিষেক হয় বাংলাদেশের। এর পর থেকে শুধু ওয়ানডে নয়, টি-২০ বিশ্বকাপেও নিয়মিত খেলছে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেললেও বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা তো ফুটবল। যে খেলা বাঙালির হৃদয়ে গেঁথে গেছে। বিশ্বকাপ এলে অন্য দেশের জয়পরাজয়ে যেমন আনন্দ করি, তেমন বেদনায়ও ভেঙে পড়ি। বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলবে কবে? এ ক্ষেত্রে কথা একটাই-এ স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। এ মান নিয়ে কখনো দুনিয়া কাঁপানো আসরে খেলা সম্ভব না। বাফুফের কর্মকর্তারা প্রায়ই বলেন, ‘আমরা বিশ্বকাপের ভিশন নিয়েই ফুটবল উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।’ একেবারে ফালতু কথা। ভ্যাগিস ফিফার সদস্য বলে প্রাক বা বাছাই পর্ব খেলছে, এটাই যথেষ্ট। ১৯৮৬ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব খেলছে। মাঝেমধ্যে জয় ছাড়া একটা দৃশ্যেরই দেখা মিলছে-লজ্জাজনক বিদায়। ২০২৬ সালে ৪৮ দেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেবে। বাংলাদেশ সে আসরেও মিশন শেষ করেছে। প্রাকবাছাইয়ে মালদ্বীপকে হারিয়ে বাছাই পর্ব খেললেও গ্রুপে সবার নিচে থেকেই মিশন শেষ করেছে।
শেষ ম্যাচে লেবাননের কাছে ০-৪ গোলে হেরে গেছে। অথচ একই দেশের সঙ্গে বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় ১-১ গোলে ড্র করেছিল। দুই লেগে অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিস্তিনের কাছে হার মেনেছে। কম গোল খাওয়াটাকে আমরা উন্নতি বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছি। বাছাই পর্বে এ দৃশ্য কি কখনো বদলাবে না? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাফুফের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যদি সব রকম সুযোগসুবিধা দিয়ে যত্ন নেওয়া হয়, অদূর ভবিষ্যত বাংলাদেশের মেয়েদের বিশ্বকাপ খেলা সম্ভব। কিন্তু পুরুষদের এ দৃশ্য কখনো বদলাবে না। বাছাই পর্ব আসরে যাবে আর আসবে। আমাদের হতাশায় বন্দি থাকতে হবে। কারণ এ বৃত্ত থেকে বের করবে কে? সে মানের ফুটবলার ও সংগঠক কখনো তৈরি হবে না। শুধু চেয়ার দখল ও কোচ বদলের প্রতিযোগিতা চলবে।