শিরোনাম
রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভারতের স্বপ্নপূরণের বিশ্বকাপ

আসলে আবেগটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছে। ---- হার্দিক পান্ডিয়া

রাশেদুর রহমান

ভারতের স্বপ্নপূরণের বিশ্বকাপ

আনন্দ-বেদনার চিত্র। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে বিরাট কোহলি উৎসবে মেতেছেন হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে (বামে)। ব্যর্থ ডেভিড মিলারের চোখে অশ্রু।

টি-২০ ক্রিকেটে শেষ ৩০ বলে ৩০ রান প্রয়োজন। হাতে ছয় উইকেট বাকি। উইকেটে টি-২০ স্পেশালিস্ট হেনরিখ ক্লাসেন এবং ‘কিলার’ খ্যাত ডেভিড মিলার। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষ দলের পরিস্থিতি যা হওয়ার কথা ভারতের তাই হয়েছিল। ড্রেসিং রুমে ক্রিকেটাররা থম মেরে বসেছিলেন। কেউ কারও দিকে তাকাতেও সাহস পাচ্ছিলেন না। মাঠের ক্রিকেটারদের বুক ধুঁকপুক করছিল। কী হবে! কিন্তু অধিনায়ক রোহিত শর্মা চাপটাকে এক পাশে রেখে নেতৃত্ব দিয়ে গেলেন দলকে। এগিয়ে নিলেন বিজয়ের পথে। স্বপ্নপূরণের পথে। বিশ্বকাপ জয়ের পথে।

আরও একবার বিশ্বসেরা ভারত। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ১৭ বছর পর। নিজেদের সেরা প্রমাণ করলেন রোহিত শর্মারা। ২০১৩ সালের পর ক্রিকেটের কোনো বিশ্ব আসরে এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত। ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করেছিল দলটা। এরপর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একবার (২০১৭), টি-২০ বিশ্বকাপে একবার (২০১৪) এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপে একবার (২০২৩) ফাইনাল খেলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ভারত। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও দুবার ফাইনাল খেলে শিরোপাবঞ্চিত হয়েছে। অবশেষে সাফল্য ধরা দিলো রোহিত শর্মাদের হাতে।

ভারতীয় ক্রিকেটারদের আবেগ উথলে পড়ছিল গতকাল ফাইনালের পর। প্রায় সবার চোখেই ছিল অশ্রু। হার্দিক পান্ডিয়া আনন্দের সে অশ্রু মুছতে মুছতেই বললেন, ‘আশা-নিরাশার দোলাচলে ছিলাম আমরা। তবে নিজেদের গেম প্ল্যান অনুযায়ী খেলে গেছি। বিশ্বাস হারাইনি নিজেদের ওপর থেকে।’ বিশেষ করে একজনের কথা বললেন পান্ডিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের ম্যাচ উইনার জসপ্রীত বুমরাহ। আমরা জানতাম, সে ম্যাচটাই ঘুরিয়ে দিতে পারে।’ শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস হারায়নি ভারত। তার ফলও পেয়েছে। কেবল পান্ডিয়াই নন, বুমরাহ নিজেও চোখের অশ্রু রোধ করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আসলে আবেগটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’ আরও কত কিছুই হয়তো বলার ছিল তার! মুখের ভাষায় না বললেও শরীরী ভাষায় কত কিছুই না বলে গেলেন বুমরাহ। তারপর কোহলি! ম্যাচ জয়ের নায়ক।

কোহলির দিন ফুরিয়ে গেছে বলে যারা গত কয়েক সপ্তাহে আলোচনা করেছেন তারা কী লজ্জাটাই না পেলেন। ফাইনালের চাপ সামলে কী দূরন্ত একটা ইনিংস খেললেন কোহলি। ৫৯ বলে ৭৬ রান। ৬টা চার ও ২টা ছক্কা। তার এই ইনিংসটাই ভারতকে জয়ের পথে এগিয়ে দেয়। ম্যাচের পর কোহলিকে ম্যাচসেরা ঘোষণা করতে দুবার ভাবতে হয়নি। বিরাট প্রমাণ করে দিলেন, কেন তাকে ‘বিগ ম্যাচ প্লেয়ার’ বলা হয়। ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে কোহলি বলেন, ‘টি-২০ ক্রিকেটে এটাই আমার ভারতের হয়ে শেষ ম্যাচ ছিল। বিশ্বকাপ জিততে পেরে আমি দারুণ আনন্দিত।’ এরচেয়ে ভালো বিদায় আর কী হতে পারত কোহলির জন্য! ২০১১ সালে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে একটা বিশ্বকাপ জয় করেন তিনি। শেষ বেলাতেও বিশ্বকাপ জয় করলেন। এমন ক্যারিয়ার সব ক্রিকেটারের জন্যই স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটাই বাস্তব হলো কোহলির জন্য।

অধিনায়ক হিসেবে রোহিত শর্মার জন্য গত কয়েক বছর ছিল বেশ কষ্টকর। গত বছর নিজেদের দেশে ফাইনালে তার নেতৃত্বেই হেরে যায় ভারত। সেই ফাইনাল হেরে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া কতটা কঠিন ছিল! রোহিত সেসবের পরোয়া করেননি। নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিল। ভারতের ক্রিকেট কর্তারাও তার ওপর আস্থা রাখে। সেই আস্থারই প্রতিদান দিলেন তিনি। গতকাল ফাইনালের পর পুরস্কার নিতে এসে রোহিত বললেন, ‘গত তিন-চার বছর ধরে আমরা কঠির পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমরা আজ (গতকাল) যা করেছি তার পেছনে অনেক ঘটনা আছে। অনেক চাপের ম্যাচ খেলেছি আমরা। যেগুলোতে সফল হতে পারিনি। তবে আমরা শিখেছি চাপের মুখে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হয়। কীভাবে নিজেদের সামলাতে হয়। আমরা একটা উদাহরণ তৈরি করেছি।’ সত্যিই তো! ভারত কী দারুণ এক উদাহরণই না তৈরি করল। ভবিষ্যতে এই ম্যাচটা নিঃসন্দেহে প্রেরণা যোগাবে অনেক দলকে। অনেক চ্যাম্পিয়নদের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর