সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিশ্বকাপের রঙে রঙিন তাদের বিদায়

রাশেদুর রহমান

বিশ্বকাপের রঙে রঙিন তাদের বিদায়

রোহিত শর্মা টি-২০ বিশ্বকাপের ট্রফিটা কোলে নিয়ে সন্তানের মতোই আদর করলেন। চোখ বন্ধ করে ট্রফির স্পর্শটা অনুভব করলেন মনের গভীরে। বিরাট কোহলিও ট্রফি নিয়ে উচ্ছ্বাস করলেন। তবে রোহিত শর্মার উদযাপনটা ছিল খুবই ব্যতিক্রমী। সাধারণত এমনটা চোখে পড়ে না। রোহিত যে ব্যতিক্রমী সে তো এক যুগেরও বেশি আগে ক্রিকেট কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার বলে গেছেন।

এক যুগেরও বেশি আগে ২০১১ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর শচীনকে তার উত্তরসূরি নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। দুজনের নাম বলেছিলেন ক্রিকেট কিংবদন্তি। বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা। দুজনেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। গত দেড় দশকে কত অর্জনই না আছে দুজনের। লাল বলে কোহলি আর সাদা বলে রোহিতের ব্যাট কেবল চওড়া থেকে আরও চওড়াই হয়েছে। রানের খাতায় সংখ্যাটা ঊর্ধ্বগামী থেকেছে সব সময়। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটার প্রায় একই সঙ্গে যাত্রা করেছিলেন। রোহিত শর্মা ২০০৭ সালে টি-২০ ক্রিকেট দিয়ে। এক বছর পর কোহলি শুরু করেন ওয়ানডে দিয়ে। একসঙ্গে যাত্রা, একসঙ্গে বিশ্বকাপ জয় এবং একসঙ্গে বিদায়। আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন দুজনেই। তাদের সঙ্গী হলেন আরেক বিশ্বকাপজয়ী রবীন্দ্র জাদেজা। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ভারতের জার্সিতে এই তিনজনকে আর দেখা যাবে না।

রোহিত শর্মা ১৫৯ টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। রান করেছেন ৪২৩১। গড় ৩২.০৫। স্ট্রাইকরেট ১৪০.৮৯। সেঞ্চুরি করেছেন ৫টি। হাফসেঞ্চুরি আছে ৩২টি। বল হাতে একটা উইকেটও শিকার করেছেন রোহিত। বিরাট কোহলি ১২৫ টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। রান করেছেন ৪১৮৮। গড় ৪৮.৬৯। ১টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৩৮টি হাফসেঞ্চুরি করেছেন কোহলি। তার স্ট্রাইকরেট ১৩৭.০৪। বল হাতে ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ৪টি উইকেট শিকার করেছেন কোহলি। রবীন্দ্র জাদেজার টি-২০ ক্যারিয়ার ৭৪ ম্যাচের। ৫৪টি উইকেট শিকার করার পাশাপাশি ৫১৫ রান করেছেন তিনি।

ক্রিকেটে ক্যারিয়ার শুরু হলে শেষ তো হবেই। কত কত কিংবদন্তি ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। তাদের বিদায় কতজন মনে রেখেছে! খুব কম ক্রিকেটারের বিদায় ছিল মনে রাখার মতো। যেমন মাইকেল ক্লার্ক। অস্ট্রেলিয়ান এই ক্রিকেটার ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ জয় করে ওয়ানডে থেকে অবসর নেন। তার বিদায়ে সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল। তবে ক্লার্কের বিদায়টা সত্যিই স্মরণীয় ছিল। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। ফাইনালে খেলেছিলেন ৭৪ রানের এক ঝলমলে ইনিংস। বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মার বিদায়টাও স্মরণীয় হয়ে থাকল। বিরাট কোহলি পারফর্ম করলেন। ম্যাচসেরা হলেন। অন্যদিকে দলকে কঠিন পরিস্থিতিতে কৌশলী নেতৃত্ব দিয়ে শিরোপা এনে দিলেন রোহিত শর্মা। দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের শেষ পাঁচ ওভারেই ম্যাচটা জেতে ভারত। আগের ১৫ ওভারে তো দক্ষিণ আফ্রিকারই আধিপত্য ছিল। এমনকি অনেকে ভারতের পরাজয়টা দেখে নিয়েছিলেন! কিন্তু রোহিত শর্মা বিশ্বাস হারাননি। সাহস হারাননি। সতীর্থদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। নিজে সব চাপ সামলে দলকে বিজয়ের পথে এগিয়ে নিয়েছেন। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভারতের বিজয়ে তাই রোহিতের প্রশংসাই সর্বত্র। একজন পারফর্ম করে দলকে জিতিয়েছেন। আরেকজন নেতৃত্ব দিয়ে। বিশ্বকাপের অধরা ট্রফিটা হাতে নিয়ে বিদায়ের বাণী শুনিয়েছেন। এমন বিদায় কজনের ভাগ্যে জোটে! কোহলি-রোহিতের ভাগ্যে জুটল। চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ক্রিকেট ইতিহাসে। তাদের সঙ্গে অবশ্য রবীন্দ্র জাদেজার নামটাও উচ্চারণ হবে।

ভারতকে আকাশের উচ্চতায় উঠিয়ে বিদায় বলে দিলেন বিরাট-রোহিত। শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড়, অনিল কুম্বলেদের পর এ দুজনের কাঁধেই তো ছিল ভারতের ক্রিকেট এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব তারা ভালোভাবেই পালন করেছেন। এবার ভারতকে নিজ স্থানে ধরে রাখার দায়িত্ব তরুণদের। বুমরাহ, আর্শদ্বীপ, রিশাবরা নিশ্চয়ই সেই দায়িত্ব পালন করবেন!

সর্বশেষ খবর