বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

মেসির রেকর্ড ফাইনালে আর্জেন্টিনা

রাশেদুর রহমান

মেসির রেকর্ড ফাইনালে আর্জেন্টিনা

আন্তর্জাতিক ফুটবলে আর্জেন্টিনার শিরোপা খরা নিয়ে কত খোঁচাই না দিয়েছেন সমালোচকরা। বারবার ফাইনাল খেলেও অধরা ছিল বিশ্বকাপ আর কোপা আমেরিকা। লিওনেল মেসিই কতবার ফাইনাল খেলেছেন। বারবার ব্যর্থ হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নিজেকে সরিয়েই নিয়েছিলেন তিনি। ফিরেছেন ভক্তদের অনুরোধে। এরপর লিওনেল স্কালোনি এলেন। তরুণ এই কোচকে ঘিরে নতুন করে নিজেদের গড়ে তুলল আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসিকে কেন্দ্র করে এক নতুন শক্তিতে রূপান্তরিত হলো দলটি। তারপর আর পেছন ফিরে কে দেখে! ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে গেল। কোপা আমেরিকা জয় করল দলটি ২০২১ সালে। পরের বছরই বিশ্বকাপ। অধরা স্বপ্নগুলো একে একে বাস্তব হতে শুরু করল। আর্জেন্টাইনরা একসময় সুর করে কেবল ‘ম্যা-রা-ডো-না’ কোরাস গাইত। এখন সেখানে যোগ হয়েছেন লিওনেল মেসি। তিনি কি আরও একটি কোপা আমেরিকা উপহার দেবেন আর্জেন্টিনাকে?

যুক্তরাষ্ট্রে চলছে কোপা আমেরিকার লড়াই। গতকাল সেমিফাইনালে কানাডাকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। আরও একটি ফাইনাল আলবেসিলেস্তদের সামনে। কোপা আমেরিকায় এটা তাদের ৩০ নম্বর ফাইনাল। অন্য যে কোনো দলের চেয়ে অনেক বেশিবার কোপা আমেরিকার ফাইনাল খেলেছে আর্জেন্টিনা। তবে ফাইনালের পথটা মসৃণ ছিল না। গতকাল কানাডা বারবারই আর্জেন্টাইন ডিফেন্স লাইন এলোমেলো করে দিয়েছে। আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে বেশ চাপ সামলাতে হয়েছে। বল দখলের লড়াইয়েও কানাডা ছিল সমানে সমান। আর্জেন্টিনা ৫১, কানাডা ৪৯। বল পাসিংয়ে আর্জেন্টিনা ৪৮০, কানাডা ৪৫৫। আক্রমণের সংখ্যায় আর্জেন্টিনা ১১, কানাডা ৯। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থাকা আর্জেন্টিনা সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও কানাডা তাদের ফুটবলশৈলী জানিয়ে গেল।

অবশ্য কানাডার এসব আক্রমণ ঠেকানোর প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। ম্যাচের আগে অধিনায়ক লিওনেল মেসি ডি মারিয়াকে বলেছিলেন, ‘আমরা তোমার জন্যই ফাইনালে পৌঁছাতে চাই।’ ডি মারিয়া কোপা আমেরিকা খেলেই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাবেন। তার বিদায়টা স্মরণীয় করে রাখতে চান মেসিরা। ম্যাচে খেলতে নেমে তারা সেটা প্রমাণও করলেন। ২২ মিনিটে জুলিয়ান আলভারেজের গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এরপর ৫১ মিনিটে মেসির গোলে ব্যবধান বাড়ায়। এ গোলটা মেসিকে রেকর্ডবুকে এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এটা তার ১০৯ নম্বর গোল। এ তালিকায় তিনি এখন এককভাবে ২ নম্বরে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ১৩০ গোল নিয়ে শীর্ষে আছেন। ৩-এ ইরানের আলি দাইয়ি (১০৮ গোল)।

লিওনেল মেসি আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছিলেন ২০১৬ সালে। সেবার ফাইনালে চিলির বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারেননি। ব্যর্থতার জ্বালায় আকাশি-নীল জার্সি তুলে রেখেছিলেন। সেই মেসি আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরে কত রেকর্ডই না গড়লেন! মজার ব্যাপার হলো, নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামেই ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছিলেন মেসি। সে মাঠেই গতকাল জিতলেন সেমিফাইনাল। রেকর্ড গড়লেন তিনি। ২০১৬ সালে পুনরায় আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফেরার পর মেসি ৭৩ ম্যাচ খেলে ৫৩ গোল করেছেন। জয় করেছেন কোপা আমেরিকা এবং বিশ্বকাপ।

কোপা আমেরিকা-বিশ্বকাপ-কোপা আমেরিকা জয়ের এক বিরল রেকর্ড গড়ার পথে ছুটছেন মেসি। ইউরোপে এ রেকর্ড ছিল কেবল জাভি-ইনিয়েস্তাদের স্পেনের। কোপা আমেরিকায় এমন রেকর্ড নেই। ব্রাজিল ২০০২ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর ২০০৪ সালে কোপা আমেরিকা জয় করেছিল। তবে বিশ্বকাপ জয়ের আগেরবার কোপা আমেরিকা জিততে পারেনি (২০০১ সালে কোপা আমেরিকা জেতে কলম্বিয়া)। আর্জেন্টিনা এবার এক মাইলফলকই স্থাপন করতে পারে। ফাইনালে আলবেসিলেস্তদের দেখা হতে পারে উরুগুয়ে অথবা কলম্বিয়ার সঙ্গে। আজ সকালে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছে উরুগুয়ে-কলম্বিয়া। উরুগুয়ের সামনে ২২ নম্বর ফাইনাল খেলার সুযোগ। অন্যদিকে কলম্বিয়া জিতলেই খেলবে তৃতীয় ফাইনাল। উরুগুয়ে আগের ২১ বারে ১৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কলম্বিয়া কোপা আমেরিকা জয় করেছে একবার। আর্জেন্টিনা এখন ফাইনালের প্রতিপক্ষের অপেক্ষা করছে। ফ্লোরিডার হার্ড রক স্টেডিয়ামে আগামী সোমবার সকালে হবে ফাইনাল।

 

সর্বশেষ খবর