শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঘরোয়া ফুটবলে মাঠ কাঁপানো বিদেশিরা

মনোয়ার হক

ঘরোয়া ফুটবলে মাঠ কাঁপানো বিদেশিরা

পেশাদার ফুটবল লিগে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ক্লাবেই বিদেশিরা খেলছেন। দলের শক্তি বাড়াতেই মূলত বিদেশিদের আনা হয়। একেক দলে সেরা একাদশে চারজন করে ১০ দলে ৪০ জন বিদেশি ঘরোয়া ফুটবলে খেলছেন। কারও কারও আবার এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে। তাদের কথা, একাধিক বিদেশির কারণে স্থানীয় ফুটবলাররা ঘরোয়া আসরে খেলার সুযোগ হারাচ্ছেন। এতে দেশের ফুটবলেরই ক্ষতি। বিশ্বে এখন প্রতিটি লিগেই বিদেশিদের পদাচরণ। উপায়ও নেই, সাফল্য পেতে হলে তো মানসম্পন্ন বিদেশি ফুটবলার আনতেই হবে। স্পেনে ভালোমানের খেলোয়াড় কম নেই। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেশ, তার পরও তাদের ফুটবলে প্রধান আসর লা-লিগার জনপ্রিয়তার পেছনে বিদেশিরাই ভূমিকা রেখে চলেছেন। এভাবেই ইউরোপিয়ান লিগের প্রতিটি ক্লাবে বিদেশিরা খেলছেন।

পেশাদার ফুটবলে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ জনপ্রিয় হওয়ার পেছনেও বিদেশিদের পারফরম্যান্স বিশেষ ভূমিকা রাখছে। প্রশ্ন হচ্ছে-সব দলই কি মানসম্পন্ন বিদেশি আনছে? যাদের নৈপুণ্য দেখে দেশি ফুটবলাররা ভালো কিছু শিখতে পারবেন? পেশাদার লিগে সনি নর্দে, ওয়েডসন, সানডে চিবুজার পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। বসুন্ধরা কিংস পেশাদার ফুটবলে আগমনের পর থেকেই ভালো মানের বিদেশি ফুটবলার আনার ব্যাপারে মনোযোগী। দলটির লক্ষ্য দুটি-এক. দলীয় সাফল্য এবং দুই. স্থানীয়রা যেন ভালো কিছু শিখতে পারে।

পেশাদার ফুটবলে বিভিন্ন দলে অসংখ্য বিদেশির দেখা মিলেছে। তাদের নৈপুণ্যে দল শিরোপাও জিতেছে। কিন্তু আলোড়ন তোলার মতো প্রথম বিদেশির দেখা মেলে ২০১৮-১৯ মৌসুমে। সেবার অভিষেকের পরই বসুন্ধরা কিংস উড়িয়ে আনে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিন ড্রেসকে। তার চোখধাঁধানো খেলা দর্শকের নজর কাড়ে। নিজে মাঠ কাঁপিয়েছেন, সতীর্থদের খেলিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে কিংস টিম ম্যানেজমেন্ট ধন্যবাদ পেতেই পারে। কারণ কলিন ড্রেসকে আনার পর পেশাদার লিগের প্রতি দর্শকের আগ্রহ বেড়েছে। পরে কলিন ড্রেস ঢাকা আবাহনীতে যোগ দিলেও মাঠ কাঁপানোর মতো খেলাটা খেলতে পারেননি।

পেশাদার লিগ বললে ভুল হবে। ঘরোয়া ফুটবলের ইতিহাসে নিজেকে সেরা বিদেশি ফুটবলার প্রমাণ করেছেন ব্রাজিলের রবসন রবিনহো। সাবেক তারকা ফুটবলার, কোচ ও বিশ্লেষক গোলাম সারোয়ার টিপুর মতে, ‘অনেক বিদেশির খেলা আমার ভালো লেগেছে। কিন্তু বসুন্ধরা কিংসে রবসন যেভাবে খেলে চলেছেন তাতে আমি মুগ্ধ। মাঝেমধ্যে ওর নৈপুণ্য দেখে মনে হয় ফুটবল একজনেরও খেলা হতে পারে। অসাধারণ, এমন মাঠকাঁপানো ফুটবলার বাংলাদেশের লিগে দেখিনি। নির্ভর করার মতো সব গুণই তার মধ্যে রয়েছে।’ রবসন অনেকের চোখে সেরা হলেও মোহামেডানের গাম্বিয়ান ফুটবলার সুলেমান দিয়াবাতের নৈপুণ্যও প্রশংসিত হচ্ছে। দল লিগ চ্যাম্পিয়ন না হলেও দিয়াবাত যেভাবে মাঠ কাঁপান তা সত্যিই অসাধারণ। পেশাদার ফুটবল থেকে তো আর ঘরোয়া আসরে বিদেশিরা খেলা শুরু করেননি। ১৯৭৪ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ লিগে প্রথম বিদেশির দেখা মেলে। সেবার মোহামেডান দুই ভারতীয় ফুটবলার প্রসাদ ও মিশ্রকে দলভুক্ত করে। এরপর ১৯৭৭ সালে আবাহনীতে প্রথম বিদেশি হিসেবে খেলেন শ্রীলঙ্কার মাহিন্দর পালা। সুপার লিগে আবার লঙ্কান গোলরক্ষক লাওন পিরিচ আবাহনীতে খেলেন।

১৯৮১ থেকে শ্রীলঙ্কার ডিফেন্ডার পাকির আলি টানা সাত বছর আবাহনীতে খেলেছেন। রক্ষণভাবে তার দৃঢ়তা সবারই নজর কাড়ে। আস্থার সঙ্গে খেলে গেছেন তিনি। মোহামেডান থেকে লোভনীয় অফার পেয়েও তিনি আবাহনী ছাড়েননি। শ্রীলঙ্কার প্রেমলাল আবাহনী ও নেপালের গণেশথাপা মোহামেডানে খেলে আস্থার পরিচয় দেন। ১৯৮৭ সালে ঢাকা লিগে বেশ কজন মানসম্পন্ন বিদেশির দেখা মেলে। ইরানের নালজেগার, গোলরক্ষক নাসের হেজাজি কোচ কাম গোলরক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালে আবাহনীর বিপক্ষে খেলার সময় কানন আহত হয়ে মাঠ ত্যাগ করলে হেজাজি গোলরক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। সে বছরই নাইজেরিয়ার এমেকা মোহামেডানে খেলেন। আবাহনী আবার উড়িয়ে আনে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইরাকের হয়ে খেলা দুই ফুটবলার শামির সাকি ও করিম মোহাম্মদকে। সংক্ষিপ্ত সময়ে হলেও তাদের নৈপুণ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে নালজেগার ও এমেকা টানা দুই মৌসুম মোহামেডানে খেলে মাঠ কাঁপিয়ে যান। অনেকের দৃষ্টিতে বিদেশিদের ৫০ বছরের আগমনে সবসেরা যদি বেছে নেওয়া হয় তাহলে রবসন, নালজেগার ও নব্বইয়ের দশকে আবাহনীতে খেলে যাওয়া রাশিয়ার ঝুকভের নাম থাকবে। ১৯৯২ সালে উজবেবিস্তানের রহিমভ মোহামেডানের হয়ে ছয় ম্যাচ খেলেই দর্শকদের নজরে আসেন। অভিষেক ম্যাচ থেকে টানা তিন হ্যাটট্রিক করে রেকর্ডও গড়ে যান। কিন্তু এত কম ম্যাচ খেলায় তাকে তো আর সেরার তালিকায় রাখা যায় না।

ঘরোয়া ফুটবলের ইতিহাসে একসঙ্গে তিন বিদেশি এনে সবচেয়ে আলোড়ন তুলেছিল আবাহনী। টানা চতুর্থ শিরোপা নিশ্চিত করতে ১৯৮৬ সালে সুপার লিগে মোহামেডানের বিপক্ষে খেলতে গোলরক্ষক ভাস্কর গাঙ্গুলি, মনোরঞ্জন ধর ও চিমাওকোরিকে উড়িয়ে আনে। তবে লাভ হয়নি। ম্যাচ জিতে যায় মোহামেডান। ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে চিমা মোহামেডানে খেলতে এসেও বেশ আলোড়ন তোলেন। আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচ খেলেই তাকে চলে যেতে হয়। কারণ তার ছাড়পত্র নিয়ে আবাহনী আপত্তি তোলে।

সর্বশেষ খবর