বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইউরো সেরাদের রাজকীয় সংবর্ধনা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ইউরো সেরাদের রাজকীয় সংবর্ধনা

ইউরো সেরা লামিন ইয়ামাল, আলবার্তো মোরাতা, উইলিয়ামস, দানি আলমোরারা বর্ণিল সংবর্ধনা পাবেন। ইউরো চ্যাম্পিয়ন দলকে রাজকীয় সংবর্ধনা দিতে স্পেনের রাজা, সরকার, দেশটির ফুটবল অ্যাসেসিয়েশন, ফুটবলপ্রেমীরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। সোমবার দুুপুরে দেশে ফেরার পর রাত পর্যন্ত ৫ লাখ ফুটবলপ্রেমী রঙিন পোশাকে বরণ করে নিয়েছেন প্রিয় ফুটবলারদের। ফুটবলাররা ইংরেজি অক্ষর ‘৪’ লেখা সাদা পোলো শার্ট পরেছিলেন। আগের স্ক্যাজুয়ালে গতকাল দেশে ফেরার কথা ছিল দে লা ফুয়েন্তেসহ শিষ্যদের। একদিন আগে সোমবার ফিরেছে চারবারের ইউরো সেরা ফুটবলাররা। জার্মান থেকে মাদ্রিদ শহরে পৌঁছার পর ফুটবলাররা পাখির চোখে দেখেন লাল-হলুদ জার্সিতে ছেয়ে আছে চারদিক। মাদ্রিদের পথে পথে লাখো মানুষ। সবাই পড়ে আছেন প্রিয় দলের জার্সি, প্রিয় ফুটবলারের নম্বর সংবলিত জার্সি, হাতে স্পেনের পতাকা, পতপত করে উড়াচ্ছেন। অনেকেই আবার স্পেনের পতাকার রঙের বিশাল বিশাল চশমা পড়ে আছেন। সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে বরণ করে নেন ইউরো চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে। রবিবার বার্লিন অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে এক যুগ পর ইউরো সেরার মুকুট জিতে নেয় লা রোজারা। দলটি এর আগে ১৯৬৪, ২০০৮ ও ২০১২ সালে ইউরোর শিরোপা জিতেছিল। ১৯৬০ সালে শুরু ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের পর ১৭ আসরে রেকর্ড চারবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন। 

ফেবারিট হয়ে ইউরো চ্যম্পিয়ন হয়েছে স্পেন। গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচ, নকআউট, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল- টানা ৭ জয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন স্পেন। তারকা কোনো স্ট্রাইকার না থাকার পরও দলটি গোল করেছে ১৬টি। অখ্যাত কোচ দে লা ফুয়েন্তের কোচিংয়ে স্পেন চ্যাম্পিয়ন হবে- টুর্নামেন্ট শুরুর পর থেকে স্পষ্ট হচ্ছিল। ফাইনালে অলআউট ফুটবল খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সোমবার দুপুরে চ্যাম্পিয়নরা বার্লিন থেকে মাদ্রিদে পা রাখে। বিমানবন্দরে তাদের বরণ করা হয় নানা আনুষ্ঠানিকতায়। অল্প সময় বিশ্রাম নিয়ে ফুটবলারদের বহনকারী বাসটি সোজা চলে যায় রাজা ষষ্ঠ ফিলিপের রাজপ্রাসাদ সারসুয়েলা প্যালেসে। সেখানে ‘গোল্ডেন বল’ জয়ী রদ্রি, ‘গোল্ডেন বুট’ জেতা দানি আলমো, সেরা ‘তরুণ ফুটবলার’ ইয়ামালদের বরণ করেন রাজা ও রানি। বার্লিনে দুজনে স্পেনের জার্সি গায়ে ফাইনাল উপভোগ করেন। ফুটবলারদের সংবর্ধনা দিয়ে রাজা বলেন, ‘আপনারা চেষ্টা করে যে আনন্দ দিয়েছেন এবং গোটা দেশকে খুশিতে ভাসিয়েছেন, এ জন্য আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’ রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে দল যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন মনক্লোয়া প্যালেসে। প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সাঞ্চেজ সংবর্ধনা দেন।

রাজপ্রাসাদ ও প্রধানমন্ত্রীর প্রাসাদ থেকে বেরোনোর পর শুরু স্প্যানিশ ফুটবলপ্রেমীদের উৎসব। ফুটবলারদের নিয়ে ছাদ খোলা দোতলা বাস শহরের চারদিক প্রদক্ষিণ করেন মোরাতারা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে, বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে স্পেনের পতাকা উড়িয়ে ফুটবলারদের বরণ করেন। রাস্তায় দাঁড়ানো অনেকেরই গায়ে চড়ানো ছিল স্পেনের জার্সি, গায়ে লেখা ছিল ‘ইউরোপের রাজা’, কিংবা ইংংরেজিতে লেখা ‘৪’। ছেলে, মেয়ে, বুড়ো-সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করেন। ছাদ খোলা দোতলা বাস পুরো মাদ্রিদ ঘুরে শেষ করে শহরের কেন্দ্রস্থল সিবেলেস প্যালেসে। প্রাসাদের চারদিকে লাখ লাখ লোক দাঁড়িয়ে তখন ‘চ্যাম্পিয়ন’, ‘চ্যাম্পিয়ন’ বলে কোরাস গেয়েছে। রাজকীয় সংবর্ধনার পর চ্যাম্পিয়ন কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে বলেন, ‘এমন দলের কোচ হয়ে আমি গর্বিত। স্পেন এমন একটি প্রজন্ম পেয়েও গর্বিত। দেশের প্রতি তাদের যে ভালোবাসা ও মূল্যবোধ, তারা গোটা দেশের আদর্শ।’ অধিনায়ক মোরাতা বলেন, ‘আমরা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন। এ দলের গর্বিত অধিনায়ক আমি। কখনো গোল করতে পারি, কখনো পারি না। কিন্তু চেষ্টার কমতি থাকে না। সবাই ইউরো জিততে সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে। আশা করি, সবাই  উপভোগ করেছেন। এটা জাদকুরী অনুভূতি।’ ২০০৮ সালের আগে যে স্পেনের ঝুলিতে ছিল সাকল্যে একটি মেজর ট্রফি। এখন সেটা ৫টি। ১৯৬৪, ২০০৮, ২০১২ ও ২০১৬ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়ন ও ২০১০ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। তারুণ্যের দলটি এখন তাকিয়ে ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের দিকে। 

সর্বশেষ খবর