১৯৭২ সালে নবাগত দল হিসেবে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে ঢাকা আবাহনীর অভিষেক হয়। আবদুস সাদেকের নেতৃত্বে দলটি উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয় বিআইডিসির সঙ্গে। ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়। চার ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়েই টেবিলে শীর্ষে ছিল আবাহনী। পঞ্চম ম্যাচে তারা মুখোমুখি হয় ওয়ান্ডারার্সের বিপক্ষে। অমলেশ সেন ও গোলাম সারোয়ার টিপুর গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকে নবাগত দলটি। পেনাল্টি থেকেই টিপু ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। ওয়ান্ডারার্সের গোলরক্ষক শহীদুর রহমান শান্টুকে পরাস্ত করে শট জালে জড়ানোর পরই মাঠে বড়ু ধরনের হাঙ্গামা বেধে যায়। পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ ছিল যে, আহত হয়ে আবাহনীর বেশ কজন ফুটবলার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অসংখ্য দর্শকও হাঙ্গামায় মারাত্মক জখম হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় রেফারি জেড আলম ম্যাচ আর শুরু করতে পারেননি। এ ঘটনার পর সে বছরের লিগই স্থগিত করে দেয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ১৯৭৩ সালে লিগ শুরু হলে সেবার চ্যাম্পিয়ন হয় বিআইডিসি। আবাহনী, মোহামেডান ও ওয়ান্ডারার্স তিন দল সমান পয়েন্ট পেয়ে রানার্সআপ হয়।
সেরা দল গড়েও সেবার আবাহনীর চ্যাম্পিয়ন না হওয়াটাকে অঘটনই বলা যায়। যাক আবাহনীকে খুব একটা অপেক্ষা করতে হয়নি। ১৯৭৪ সালে তারা ফুটবল লিগে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়। বিআইডিসির পর আবাহনী চ্যাম্পিয়ন। অর্থাৎ স্বাধীনতার পর আবাহনীই দ্বিতীয় দল যারা শিরোপার কৃতিত্ব অর্জন করে। ঘরোয়া ফুটবলে সে বছরই প্রথম বিদেশি কোচের দেখা মিলে আবাহনী থেকে। ব্রিটিশ কোচ বিলহার্ট আবাহনীর দায়িত্বে ছিলেন। আবাহনীর প্রথম চ্যাম্পিয়ন দলে খেলে ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছেন গোলরক্ষক নিজাম, আবদুস সাদেক, শেখ আশরাফ, জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা, বাটু, শামসুল আলম মঞ্জু, মনোয়ার হোসেন নান্নু, অমলেশ সেন, কাজী সালাউদ্দিন, জামিল আক্তার, গফুর (ঢাকার মাঠে যিনি স্কুটার গফুর বলে পরিচিত ছিলেন), শামসু ও গোলাম সারোয়ার টিপু (অধিনায়ক)।
সাদেক বলেন, ‘৫০ বছরের আগের ঘটনা। তারপরও ফুটবল ক্যারিয়ারে অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। বয়স বাড়ুলেও ১৯৭৪ সালের সেই আনন্দময় দিনের কথা ঠিকই মনে রয়েছে। সেবার আমাদের কোচ বিল হার্ট। তিনি আবাহনীর চেহারা পাল্টে দেন। টেকনিক, পাসিং, বল কন্ট্রোল বা পোস্টে শর্ট মারা আমাদের এত নিখুঁতভাবে শেখান যে, শিরোপা জিততে সহযোগিতা করেছে। সেবার তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে বসেছিল বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। ফাইনালে খেলে জার্মানি ও হল্যান্ড। বিল হার্ট অনেকটা হল্যান্ডের টেকনিক ধরে আমাদের প্রশিক্ষণ দেন। যা দর্শকের কাছেও প্রশংসিত হয়েছিল। সেবার লিগে প্রথম পর্বের শীর্ষ ছয় দলকে নিয়ে পরবর্তীতে সুপার লিগ হয়। তাও আবার প্রথম পর্বের পয়েন্ট ধরা হবে না। সুপার লিগে যারা শীর্ষে থাকবে তারাই চ্যাম্পিয়ন হবে। তাতেই সফল হয়ে শিরোপা এলো আবাহনীর ঘরে। মনে আছে সুপার লিগে আমাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল দিলকুশা। সবাইকে টপকে আমরাই সেরা। শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর অনেকে আমরা আবেগে কেঁদেও ফেলেছিলাম। অশ্রুভেজা চোখে শেখ কামাল আমাদের জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, আমি জানতাম আবাহনী পারবে।’
৫০ বছরের আগের হলেও সেই সুখ স্মৃতি এখনো আমার চোখে ভাসে।’