একদিন আগেই পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ এক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানকে হারিয়েছে টাইগাররা। এ জয়ের আনন্দের মধ্যেই আরও একটা দারুণ খবর দিলেন ফুটবলাররা। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ১-১ গোলে ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে প্রতিবেশী দেশের যুবাদের পরাজিত করেছে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। কাল ফাইনালে স্বাগতিক নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের যুবারা।
গতকাল নেপালের ললিতপুরে অবস্থিত আনফা কমপ্লেক্স স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ভারত। প্রতিবেশী এ দেশের সঙ্গে খেলতে নামলেই বাড়তি উত্তেজনা বিরাজ করে। গতকালও সেই উত্তেজনা দেখা গেল। ফুটবলাররা নিজেদের উজার করে খেললেন। ম্যাচের ৩৬ মিনিটেই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। বাম দিক থেকে রাব্বি হোসেন রাহুলের জোরালো আড়াআড়ি ক্রস গোলরক্ষকের গ্লাভস ছুঁয়ে চলে যায় আসাদুল মোল্লার কাছে। আলতো ছোঁয়ায় বল জালে জড়ান আসাদুল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকেও গোলের সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। এরপর অবশ্য ভারতও জোরালো আক্রমণ করে গোলের জন্য। তবে প্রতিবারই ভারতীয় ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থ করে দেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা ও গোলরক্ষক মেহেদি হাসান শ্রাবণ। অবশ্য গোল বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। বদলি গোলরক্ষক হিসেবে মাঠে আসেন আসিফ। গোলরক্ষক বদল হওয়ার কিছুক্ষণ পরই গোল করে সমতায় ফেরে ভারত। ৭৫ মিনিটে বক্সের ভিতর থেকে নিচু শটে বল জালে জড়ান রিকি মিতেই। এরপর আর কোনো পক্ষই গোল করতে পারেনি।
টাইব্রেকারের শুরুতেই আসিফ হাসি ফোটান বাংলাদেশের সমর্থকদের মুখে। থাংলাংসুন গাঙ্গতের প্রথম শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে আটকে দেন তিনি। এরপর চার শটে বাংলাদেশের পিয়াস আহমেদ নোভা, মইনুল ইসলাম মইন, শাকিল আহাদ তপু ও আশরাফুল হক আসিফ লক্ষ্যভেদ করেন। ভারতের তিনজন জালের দেখা পাওয়ার পর আকাশ তিরকে আসেন পঞ্চম ও শেষ শট নিতে। আসিফ তা ফিরিয়ে দিতেই জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠেন ফুটবলাররা। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্ট এর আগে ২০২২ সালে হয়েছে। সেবার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার সেই ভারতকে হারিয়েই ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অপেক্ষা। আগামীকাল শিরোপা লড়াইয়ে স্বাগতিক নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরেছিল মারুফুল হকের দল। সেই হারের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগও এখন নোভা-আসিফদের সামনে।গতকাল ফাইনাল নিশ্চিত করার পর কোচ মারুফুল হক সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল, ফাইনাল খেলব। যদিও আমরা গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে হেরেছি। তবে আমরা ফুটবলারদের মোটিভেট করতে পেরেছি। আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। খুবই শক্তিশালী দল। আমরা ভালো খেলেছি। তবে আরও গোল করতে পারতাম। গোল না পাওয়াটা আমাদের বড় সমস্যা। একটা গোল করার পর আক্রমণাত্মক খেলে আরও একটা গোল করার জন্য মানসিকতা তৈরি করতে হবে। আমাদের এটা নিয়ে আরও অনেক কাজ করতে হবে।’ ভারতের বিপক্ষে জয়ের পর দেশের তরুণ প্রজন্মের কথা স্মরণ করে কোচ বলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে জয়টা আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মকে নিশ্চয়ই অনেক আনন্দিত করবে।’ ফাইনাল নিয়ে মারুফুল হক বলেন, ‘নেপাল অনেক ভালো দল। বেশ শক্তিশালী। তবে ফাইনালে ভালো খেলে আমরা চ্যাম্পিয়ন হব আশা করি।’
বাংলাদেশের প্রথম লক্ষ্য ছিল, ফাইনাল নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। এবার ফাইনালে নেপালকে হারাতে পারলেই চূড়ান্ত লক্ষ্য পূরণ হয়। সাফের বয়সভিত্তিক এ টুর্নামেন্ট ২০১৭ ও ২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ ফরম্যাটে হয়। সেই দুবার ফাইনাল খেলেও শিরোপা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথমবার নেপালের কাছে, দ্বিতীয়বার ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হয় বাংলাদেশ। অনূর্ধ্ব-২০ ফরম্যাটেও ফাইনাল খেলে ২০২২ সালে। তবে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। অতীতের সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে এবার কি চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে বাংলাদেশ!