রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
সংস্কার

এবার বদলে যাবে ক্রীড়াঙ্গন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সবার চোখ এখন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার দিকে। অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। এর আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাজনীতিমুক্ত হতে পারেনি ক্রীড়াঙ্গন। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে প্রতিটি ফেডারেশনই ছিল অনিয়ম-দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। দায়িত্বের এক মাসও যায়নি, এরই মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় ফেডারেশন ক্রিকেট বোর্ডে পরিবর্তন এসেছে। কাজটি বড্ড কঠিন হলেও সফল হয়েছেন আসিফ। এখানেই তিনি থেমে থাকতে চান না। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনতে দরকার সংস্কার। এমন কিছু করা দরকার যাতে ক্রীড়াঙ্গন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়। এজন্য পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। যাদের কাজ হবে ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন, বোর্ড ও সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনা করে সংস্কারের পথ দেখানো। কাজের সময় দেওয়া হয়েছে দুই মাস।

দুই মাসে এত বড় কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা মুশকিল। সময় যে বাড়াতে হবে তা নিয়ে সংশয় নেই। প্রশ্ন উঠেছে যাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। অল্প দিনের দায়িত্ব পেয়ে সার্চ কমিটি গঠন করে ক্রীড়া উপদেষ্টা প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু সংস্কারের মতো বড় কাজের কৌশল ঠিক করতে গ্রহণযোগ্য ও অভিজ্ঞ সংগঠকদের দরকার তা অনেকেই বলছেন। যেমন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ব্যাডমিন্টনের সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন জোবায়দুর রহমান রানাকে। নন্দিত খেলোয়াড় হলেও তাঁর সাংগঠনিক ক্যারিয়ার কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ। এখনো তিনি ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সহসভাপতি। তা ছাড়া পতন হওয়া আওয়ামী সরকার আমলে ২০০৮-২০১০, ২০১২-২০১৬ পর্যন্ত ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পদে থাকতেই পারেন কিন্তু তাকে ঘিরে তো বিতর্ক একেবারে কম নয়। অস্ট্রেলিয়ার এক টুর্নামেন্টে ভুয়া শার্টলার বানিয়ে আদম পাচারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনেও তাকে ঘিরে ছিল বিতর্ক।

ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে কমিটিতে রয়েছেন মহিউদ্দিন আহমেদ বুলবুল। তিনি বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ব্যাডমিন্টনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। যোগ্যদের ডিঙিয়ে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়ায় ওই সময় বিতর্ক হয়েছিল। সবচেয়ে বড় বিতর্ক বিএনপি সরকারের সময় জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠকের মহাসচিব ছিলেন তিনি। যা বর্তমানে ফোরাম নামেই পরিচিত। বুলবুল এখন আবার ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদ নামে একটি সংগঠন দাঁড় করানোর চেষ্টায় রয়েছেন। ২০০২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত  জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক-সংস্থাকে নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে বিতর্কের ঝড় বয়েছিল। অবশ্য সার্চ কমিটি এখনো কাজ শুরু করেনি। তাই তারা কি করবে অপেক্ষা করতে হবে। এখানে আবার লোক বাড়ানো ও কমানোর কথাও বলা হয়েছে।

ক্রীড়া উপদেষ্টা ক্রীড়াঙ্গনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন; যা অতীতে কেউ নেননি দলীয় স্বার্থে। এত বড় কাজে আরও অভিজ্ঞ সংগঠকদের অন্তর্ভুক্ত করা যেত। যেমন অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনরে সাবেক মহাসচিব বশির আহমেদ, মুনিরুল হক চৌধুরী, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান, দেশের প্রথম গ্রান্ড মাস্টার নিয়াজ মোরশেদ ও জোবেরা রহমান নিলুর নাম উঠে আসছে। এখানে অভিজ্ঞ সাংবাদিকদেরও প্রয়োজন রয়েছে। জন্ম থেকেই জ্বলছে ক্রীড়াঙ্গন। এ ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পর থেকেই যারা ক্রীড়াঙ্গনের সবকিছু দেখেছেন বা সাক্ষী হয়ে আছেন এমন সাংবাদিক থাকা দরকার। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক শেখ মো. আসলাম বলেছেন, ‘সার্চ কমিটি গঠন করায় ক্রীড়া উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই। তার পরও বলছি, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি করার আগে উচিত ছিল মতবিনিময় করার। সেখানে ক্রীড়া উপদেষ্টাই বুঝতে বা চিহ্নিত করতে পারতেন সমস্যাগুলো কোথায়। আমি এখনো বলব দেশের খেলাধুলা সম্পর্কে যাদের ভালো জ্ঞান বা জানা রয়েছে সে ধরনের অভিজ্ঞ সংগঠকদের কমিটিতে আনা উচিত।’

 

সর্বশেষ খবর