শিরোনাম
সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম

আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে বগুড়ার শহীদ চাঁন্দু ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামে দেড় যুগেও কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের আসর বসেনি। ২০০৬ সাল থেকে স্টেডিয়ামটি অবহেলায় পড়ে থাকার পর এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের বল গড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন উত্তরের ক্রিকেটপ্রেমীরা। মুশফিকুর রহীম মিতু, তৌহিদ হৃদয়, তানজিদ তামিমদের জন্মভূমিতে আবারও আন্তর্জাতিক ম্যাচের চার-ছক্কার বাউন্ডারি দেখার অপেক্ষায় রয়েছে হাজারো দর্শক।

বগুড়ার ক্রীড়া সংগঠকরা বলছেন, আরাফাত রহমান কোকোর হাতে গড়া বগুড়ার শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম গত ১৮ বছর ছিল অবহেলিত। বগুড়ার স্টেডিয়ামটি শুধু রাজনৈতিক কারণে প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। এ মাঠের উইকেট অত্যন্ত ভালোমানের হওয়ার পরও বিসিবি নেতৃবৃন্দ এ মাঠ সরিয়ে নিয়ে যায়। বগুড়ায় আন্তর্জাতিক ম্যাচের আইসিসির স্বীকৃতি তুলে নেওয়ার আগেই সিলেটে নির্মাণ করা হয় স্টেডিয়াম। ওই সময় বিসিবির কয়েকজন কর্মকর্তা প্রতিহিংসাবশত বগুড়ার মাঠ থেকে বিএনপির নামটি মুছে দিতেই এমনটি করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। ম্যাচ না থাকায় সংস্কারসহ অবকাঠামোর কোনো উন্নয়নও করা হয়নি। লাখ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখা হয়েছে। ফ্লাড লাইট স্ট্যান্ড থেকে দামি লাইটগুলোও খুলে নেওয়া হয়েছে। মাঠটি সংস্কার করে এখন এই মাঠে আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করা হোক। 

জানা যায়, ১৯৬২ সালে নির্মিত স্টেডিয়ামটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭০ সালে যাত্রা শুরু হয়। ওই সময় ফুটবল, ক্রিকেটসহ স্থানীয় বিভিন্ন দিবসের অনুষ্ঠান হতো এ স্টেডিয়ামে। দীর্ঘদিন এভাবে চলার পর ২০০৩ সালের ৩ জুন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বগুড়া শহীদ চাঁন্দু ক্রীড়া কমপেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয় করে ২০০৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি স্টেডিয়ামের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিশ্বকাপের ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় বগুড়ার এই স্টেডিয়ামের। আইসিসির স্বীকৃতি পাওয়ার পর একটি মাত্র টেস্ট ম্যাচ আর ৫টি ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। যার মধ্যে টেস্টে বাংলাদেশের পরাজিত এবং চারটি ওয়ানডে ম্যাচে জয় এবং একটি ম্যাচে পরাজিত হয়। এর মধ্যে শ্রীলংকাকে এক ম্যাচে হারিয়ে পরের ম্যাচে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। অবশ্য শ্রীলংকাকে হারানোর প্রথম স্বাদটা বগুড়ায় নিয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। এ ছাড়া কেনিয়ার বিরুদ্ধে একটি এবং জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচে জয় পায় বাংলাদেশ।

১৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামটিতে সেই জয়ের সঙ্গে বগুড়া এবং উত্তরাঞ্চলের ২৪ হাজার দর্শক নাচেগানে আনন্দের সেই দিনটিকে নিয়ে গিয়েছিল মধ্যরাত পর্যন্ত। বগুড়ার মানুষ ক্রিকেটের জন্য এর পর আর আনন্দে মাতেনি। ২০০৬ সালে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় বগুড়ায়। এর পর টানা ১৮ বছর বগুড়ায় বসেনি কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। স্টেডিয়ামটি আইসিসির স্বীকৃতি নিয়ে এখন জায়গা দখল করে আছে। ম্যাচ অনুষ্ঠিত না হওয়ায় স্টেডিয়ামের বিদ্যুৎ বিল রয়েছে বকেয়া, স্টাফ বেতন পরিশোধ থাকলেও, আউটফিল্ড, পিচ, সংস্কার, ইনডোর, জিমনেসিয়াম এখন প্রায় অকেজো। স্টেডিয়ামের সঙ্গে গড়া নির্মাণ করা সুইমিং পুলটি মাঝে কয়েকবার চালু করার পর এখন সেটি প্রায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই মাঠে কুচকাওয়াজ, বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছে। পরে জেলা ক্রীড়া সংস্থা অলিখিত একটি কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক নির্বাহী সদস্য ও ক্রীড়া সংগঠক অ্যাথলেটার শাজাহান আলী বাবু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এই স্টেডিয়াম থেকেই উঠে এসেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীম মিতু, তৌহিদ হৃদয়, তানজিদ তামিম, শফিউল ইসলাম সুহাস, রয়েছেন কয়েকজন নারী ক্রিকেটার। সবাই সুনামের সঙ্গে জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করছেন। বগুড়া থেকে জাতীয় পর্যায়ে অসংখ্যা ক্রিকেটার, ফুটবলার ও অন্যান্য খেলোয়াড় তৈরি করা হয়।

অথচ সেই বগুড়াকে জাতীয় পর্যায়ে রাখা হয়েছিল অবহেলিত করে। বগুড়ার এই স্টেডিয়ামটি নষ্ট করেছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতৃবৃন্দ। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় থাকা এই স্টেডিয়ামের সংস্কারের হিসাব অর্থ নেই। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া, সুইমিং পুল বন্ধ, ইনডোর অবস্থা খুবই খারাপ, পিচ ঠিক থাকলেও এর আউটফিল্ড ঠিক নেয়। এই স্টেডিয়ামের পূর্ণাঙ্গ মেরামত করতে হবে। শুধু প্রতিহিংসার কারণে এই আধুনিক স্টেডিয়ামটি নষ্ট করা হয়েছে। এই স্টেডিয়ামটি সংস্কার করে আবারও আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করব। আগামী দিনে আরও ভালো খেলোয়াড় তৈরি হয় সে বিষয়ে কাজ করে যাব।

বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম জানান, আগামী দিনে আমরা এই মাঠে আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের জন্য যা যা করণীয় তার সবই করা হবে। বগুড়ার একঝাঁক ক্রিকেটার আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দায়িত্বতার সঙ্গে খেলে জাতীয় ক্রিকেট দলের জন্য অবদান রেখে যাচ্ছেন। ঢাকার বাইরে যেসব আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম আছে তার মধ্যে বগুড়া উল্লেখযোগ্য। বগুড়ার আবাসন ব্যবস্থা এখন অন্য জেলার চেয়ে অনেক উন্নত। বগুড়ায় বেশ আন্তর্জাতিকমানের হোটেল মোটেল চালু রয়েছে। দেশের অন্যান্য স্টেডিয়ামের চাইতে বগুড়ার স্টেডিয়ামের যোগাযোগসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বেশি রয়েছে। তার পরও বগুড়ার এই স্টেডিয়ামকে বঞ্চিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে এই বঞ্চনার শিকার হয়ে এসেছে।

সর্বশেষ খবর