বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

একই দিনে দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের হার

ক্রীড়া প্রতিবেদক

একই দিনে দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের হার

একই দিনে দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল হারল। দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের হার দেখলেন ফুটবলপ্রেমীরা। ব্রাজিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্বের দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের খেলায় ব্রাজিল ১-০ গোলে হেরেছে প্যারাগুয়ের কাছে। ব্রাজিলকে হারানো প্যারাগুয়ের জয়ের নায়ক দিয়াগো গোমেজ। অ্যাসুনসিওনে ২০ মিনিটের সময় প্রায় ২৫ মিটার দূর থেকে দারুণ এক শটে গোল করে গোমেজ স্তব্ধ করে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। বারানাকুইলাতে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়েছে কলম্বিয়া। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের পক্ষে গোল করেন নিকোলাস গঞ্জালেস। স্বাগতিক কলম্বিয়ার পক্ষে গোল দুটি করেন ইয়ের্সন মসকেরা ও জেমস রদ্রিগেজ। আর্জেন্টিনা তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। দলটি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ১৯৭৮, ১৯৮৬ ও ২০২২ সালে।   

ব্রাজিল সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০০২ সালে। এর আগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০ ও ১৯৯৪ সালে। ২২ বছর আগে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরের আসরগুলোর মধ্যে ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে সেমিফাইনাল খেলেছিল। বাকি আসরগুলোর কোয়ার্টার ফাইনালের গন্ডি পেরোতে পারেনি সেলেকাওরা। ২০২৬ সালে বিশ্বকাপ হবে ৪৮ দলের। আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো। পাশের মহাদেশে খেলা। অথচ হারের ধাক্কা সামলাতে না পেরে বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা শঙ্কায় পড়েছে ব্রাজিলের। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বের খেলায় সর্বশেষ ৫ ম্যাচের চারটিতেই হেরেছে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। টানা তিন হারের পর ইকুয়েডরকে কোনো রকমে হারিয়ে জয়ে ফিরেছিল সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এবার হারল প্যারাগুয়ের কাছে। ১-০ গোলে হেরে দরিভাল জুনিয়রের ব্রাজিল এখন ৮ ম্যাচে ৩ জয়, এক ড্র ও চার হারে ১০ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ নম্বরে অবস্থান করছে। লিওনেল মেসিকে ছাড়া বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়েছে কলম্বিয়া। কোপা আমেরিকা কাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হারের প্রতিশোধও নিয়েছে কলম্বিয়া। হারলেও ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে অবস্থান করছে আলবিসেলেস্তারা। কলম্বিয়া ১৬ পয়েন্ট নিয়ে দুই, উরুগুয়ের পয়েন্ট ১৫ এবং ইকুয়েডরের পয়েন্ট ১৪। আসরে প্রতিটি দল খেলবে ১৮টি ম্যাচ।

ইকুয়েডরকে হারিয়ে ব্রাজিলিয়ান কোচ দরিভাল জুনিয়র জানিয়েছিলেন, ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে ফাইনালে দেখতে চান ব্রাজিলকে। নেইমারকে চান বিশ্বকাপে। ৭৯ গোল করে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতা নেইমার। তাকে ছাড়া দলটি বড্ড বেসামাল। প্রতিপক্ষ দলগুলোর বিপক্ষে খেই পাচ্ছে না। হারের পর দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ফুটবলার মার্কিনিয়োস স্বীকার করেছেন, তারা আত্মবিশ্বাস হারিয়েছে, ‘কোচ (দরিভাল জুনিয়র) এখনো বের করার চেষ্টা করছেন, খেলার কোন ধরনটি আমাদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। সেটিই প্রতিফলিত হচ্ছে ফলাফলে। অনেক নতুন ফুটবলার এসেছে দলে। আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিও আছে আমাদের। মনে রাখতে হবে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলা কিন্তু সহজ নয়। আমরা আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি না। তবে কঠোর পরিশ্রম করব। মাঠে রেজাল্ট আনাই সবচেয়ে উপযুক্ত জবাব।’ দলের সবচেয়ে বড় তারকা ভিনিসিয়ুস ক্ষমা চেয়েছেন সমর্থকদের কাছে। তিনি বলেন, ‘সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, যারা সবসময় আমাদের পাশে থাকেন। কঠিন সময় কাটছে, আমরা কেবল উন্নতি করতে চাই। আমি আমার সামর্থ্য জানি। আত্মবিশ্বাস না থাকলে গোল পাওয়া যায় না। এমনকি ভালো খেলাও যায় না।’ ব্রাজিলের পরবর্তী ম্যাচ অক্টোবরে চিলি ও পেরুর বিপক্ষে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ব্রাজিলের এতটা বাজে সময় কখনই যায়নি। স্পোর্টস নেটওয়ার্কের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩-২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ৭১ ম্যাচ খেলে মাত্র ৫টিতে হেরেছিল ব্রাজিল। অথচ চলতি বাছাইপর্বে ৮ ম্যাচের ৪টিতেই হেরেছে।

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা সর্বশেষ হেরেছিল ১০ মাস আগে, গত নভেম্বরে। হেরেছিল দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের কাছে ২-০ গোলে। এরপর হারেনি লিওনেল স্কালোনির বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এর মধ্যে কোপা আমেরিকা কাপও জিতে নেয়। পরশু মধ্যরাতে মেসিবিহীন আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারের প্রতিশোধ নিয়েছেন জেমস রদ্রিগেজরা। ফাইনালে আর্জেন্টিনা জিতেছিল ১-০ গোলে। মেসিকে ছাড়া আগের রাউন্ডে চিলিকে ৩-০ গোলে হারালেও ১-১ গোলে ড্র করেছিল পেরুর সঙ্গে। ম্যাচে ২৫ মিনিটে এগিয়ে যায় কলম্বিয়া। দলের সেরা ফুটবলার রদ্রিগেজের কর্নারে হেডে ব্যবধান ১-০ করেন মসকেরা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সমতা আনে আর্জেন্টিনা। গঞ্জালেস বক্স থেকে মাটি কামড়ানো শটে গোলরক্ষকের হাত গলিয়ে ব্যবধান ১-১ করেন। ৬০ মিনিটে পেনাল্টিতে জয়সূচক (২-১) গোলটি করেন রদ্রিগেজ।

কলম্বিয়ার জয়সূচক গোলটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আর্জেন্টিনাই কোচ স্কালোনি। ‘বলেছেন রেফারি বিতর্কিত পেনাল্টি দিয়েছেন, পেনাল্টিই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। রেফারি এবং পাঁচজন ভিএআর অফিশিয়াল কেবল পেনাল্টিটি দেখেছে। ফুটবল এমন এক খেলা, যেখানে আশপাশে নজর রাখতে হয়। আর কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার মুনোজ ফাউল নিয়ে কোনো অভিযোগ করেনি। এখানেই বিষয়টা শেষ হওয়া দরকার ছিল। এটা নিয়ে বাড়তি কিছু করা উচিত ছিল না।’ 

২০২৬ সালের বিশ্বকাপে লাতিন অঞ্চল থেকে সরাসরি খেলবে পাঁচটি দল। পয়েন্ট টেবিলের ষষ্ঠ দলটি খেলবে প্লে অফ খেলে।

সর্বশেষ খবর