বায়ান্ন বছরে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল ইতিহাসে আরেকটি নতুন টুর্নামেন্টের দেখা মিলছে। ১১ অক্টোবর চ্যালেঞ্জ কাপ দিয়ে নতুন মৌসুমে ঘরোয়া ফুটবলের দেখা মিলবে। এক দিনের এ আসরে বসুন্ধরা কিংস ও ঢাকা মোহামেডান শুধু মুখোমুখি হবে। নতুন মৌসুমের পর্দা উঠবে নতুন টুর্নামেন্ট দিয়ে। ইউরোপকে অনুসরণ করে চ্যালেঞ্জ কাপের যাত্রা হবে। ইউরোপিয়ান ফুটবলের মৌসুমটা শুরু হয় লিগ চ্যাম্পিয়ন ও অন্য কোনো আসরে চ্যাম্পিয়ন দলকে নিয়ে। স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালিতে হয় সুপারকাপ। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয় কমিউনিটি শিল্ড। বাংলাদেশে হচ্ছে চ্যালেঞ্জ কাপ নাম দিয়ে। গেল মৌসুমে তিন আসরেই চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। আবার তিনটিতেই রানার্সআপ ছিল ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান। সেই হিসেবে বাংলাদেশে ইউরোপের আদলে চ্যালেঞ্জ কাপে খেলার সুযোগ পেয়েছে বসুন্ধরা কিংস ও মোহামেডান।
এক দিনের টুর্নামেন্ট তা আবার ফাইনাল। এমন ফুটবলে অভ্যস্ত নয় বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। আশা করা যাচ্ছে, শুরুতেই তা আলোড়ন তুলতে পারবে। বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনাকে ভেন্যু হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। নতুন এক টুর্নামেন্টের ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে কিংস অ্যারিনা। বাফুফের সহ-সভাপতি ও পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ইমরুল হাসানের চিন্তা থেকেই চ্যালেঞ্জ কাপ মাঠে গড়াতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা বেশ লম্বা। উপ-কমিটির সংখ্যাও কম নয়। এর মধ্যে ফুটবল উন্নয়ন নিয়ে ভেবেছেন কতজন? দেখা গেছে, যে কোনো টুর্নামেন্টে মঞ্চে উঠে ছবি তুলতেই কর্মকর্তারা ব্যস্ত থাকেন। এ ছাড়া তাদের কোনো কাজ ছিল না। যারা কাজ করেছেন তাদের মধ্যে ইমরুল হাসানের নামই বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়।
অনেকে বলেন, এক মেয়াদে বাফুফের নির্বাহী কমিটি থেকে ফুটবল উন্নয়ন ও নতুনত্ব আনা সম্ভব নয়। ইমরুলই তা মিথ্যা প্রমাণ করেছেন। ২০২০ সালে প্রথমবার বাফুফের সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করে সর্বোচ্চ ভোটে জয়ী হন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও দেশের ফুটবল নিয়ে ঠিকই ভেবেছেন। ঢাকা মহানগরী লিগ কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়ে অচল থাকা জুনিয়র লিগ পুরো সচল করেন। তার ওপর আস্থা রেখেই গতবারই তাকে পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। একবার খেলা আয়োজন করে বোঝাতে সক্ষম হন তারই মাধ্যমে ঘরোয়া ফুটবলে নতুনত্ব আনা সম্ভব। গতবার লিগ চলাকালেই তিনি ঠিক করে ফেলেন আন্তর্জাতিক উইন্ডোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলে দলবদল চলবে। শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছেন।ইমরুল হাসানের লক্ষ্য ছিল নতুন টুর্নামেন্ট চ্যালেঞ্জ কাপ ছাড়াও জনপ্রিয় আসর সুপারকাপ ফিরিয়ে আনা। সেইভাবে ঘরোয়া ফুটবলে ক্যালেন্ডার তৈরি হয়। টুর্নামেন্ট যত বাড়বে ততই ফুটবল ঘিরে আগ্রহ বাড়বে- এটাই ইমরুল হাসানের ফর্মুলা। যাক বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল ইতিহাসে চ্যালেঞ্জ কাপ অষ্টম টুর্নামেন্ট হিসেবে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে। ১৯৭২ সালে স্বাধীনতা কাপ দিয়েই ঘরোয়া ফুটবলের যাত্রা। ১৯৭৭ সালে লিবারেশন কাপের এক দিনের টুর্নামেন্টে ঢাকা আবাহনী ও রহমতগঞ্জ অংশ নেয়। ১৯৯০ সালে মা-মনি, ১৯৯১-৯২ মৌসুমে বিটিসি কাপ, ২০০০ সালে জাতীয় লিগ ও ২০০৯ সালে কোটি টাকার সুপার কাপ মাঠে নামে। লিবারেশন, মা-মনি ও বিটিসি একবার হয়ে আর মাঠে নামেনি। পাঁচবার ডামফা কাপ হয়েও এখন আর দেখা নেই। তিনবার জাতীয় লিগ ও সুপার কাপ আয়োজন করেই শেষ।