শিরোনাম
রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

খোলস বদলানোর প্রতিযোগিতা!

যখন যে দলই ক্ষমতায় থাকে তাদের সঙ্গে আঁতাত কিংবা সুর পাল্টে নেন নিজেদের অবস্থান। প্রতিটি খেলা শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলন কিংবা উদ্বোধন যে কোনো অনুষ্ঠানে মিডিয়ার নামে হাতিয়ে নেয় টাকা।

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

ক্রীড়াঙ্গনের উর্বর ভূমি চট্টগ্রাম। ঘরোয়া মাঠেই খেলে জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন চট্টল সন্তানেরা। সে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন থেকে প্রায় দুই দশক ধরে সৃষ্টি হয়নি নতুন খেলোয়াড়। বরং একে একে বন্ধ হয়ে গেছে খেলার মাঠ, নামকরা ক্লাবগুলো। গত ১৫ বছর ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে মিলে ক্রীড়াঙ্গন দখলে মেতে ওঠে একটি পক্ষ। সে চক্রটি এখন প্রতিযোগিতায় নেমেছেন খোলস পাল্টানোর লড়াইয়ে। ক্রীড়াঙ্গনে নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে চক্রটি ভিড়ছে রাজনৈতিক দলগুলোতে।

জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। সংস্কার করা হচ্ছে দেশের প্রতিটি সেক্টরকেও। তারই অংশ হিসেবে ২১ আগস্ট দেশের সব জেলা ক্রীড়া সংস্থা, বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং উপজেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রুত সময়ে অ্যাডহক কমিটি করার। এরপর থেকে জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সিজেকেএসসহ বিভিন্ন কমিটিতে কোণঠাসা থাকা বিএনপি ও জামায়াত ঘরানার ক্রীড়া সংগঠকরা তৎপরতা শুরু করেছে। পাশাপাশি ১৫ বছর ধরে কিছু সাংবাদিক সিজেকেএস থেকে নানা সুযোগসুবিধা নিয়েছেন তারাও এখন খোলস পাল্টিয়েছেন। সিজেকেএসের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সান্নিধ্যে টানা তিন মেয়াদে সিজেকেএস ও বিভিন্ন ইভেন্টভিত্তিক কমিটিতে থাকা সংগঠক এবং সাংবাদিক পরিচয়ে সুবিধা নেওয়া ব্যক্তিরা রং বদলে অ্যাডহক কমিটিতে স্থান পেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ধরনা দিচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপদেষ্টাদের কাছেও। এতদিন যাদের মুখে ছিল শুধু বিএনপি-জামায়াত বিরোধিতা আর হিংসাত্মক আক্রমণ তারা এখন সেজেছে বড় বিএনপি-জামায়াত সমর্থক।

ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠক ও সাংবাদিকদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থায় এক চক্র রয়েছে, যাদের ফাইভ এসএস নামে জানে স্টেডিয়ামপাড়ার সবাই। তারা যখন যে দলই ক্ষমতায় থাকে তাদের সঙ্গে আঁতাত কিংবা সুর পাল্টে নেন নিজেদের অবস্থান। প্রতিটি খেলা শুরুর পূর্বে সংবাদ সম্মেলন কিংবা উদ্বোধন যে কোনো অনুষ্ঠানে মিডিয়ার নামে হাতিয়ে নেয় টাকা। অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কথা স্টেডিয়ামপাড়ায় ওপেন সিক্রেট হলেও বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদকের আস্থাভাজন ও গণমাধ্যমকর্মী হওয়ার কারণে ভয়ে মুখ খুলে না কেউই।

এদিকে ক্রীড়া সংগঠক ব্যানারে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন, দুর্নীতি ও খোলস পাল্টানো যেন স্থান না পায় সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিগত দিনে স্টেডিয়াম দখল করেছিল যারা, তারা খেলোয়াড় ছিলেন না। আমরা খেলোয়াড় হয়েছি খেলাধুলা করে, অর্থের বিনিময়ে নয়। আগামীতে জেলা প্রশাসক যাদের অ্যাডহক কমিটিতে রাখবে তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে হবে। ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক ছাড়া কেউ চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন চালাতে পারবে না। দলবাজি দিয়ে খেলাধুলা চলে না। অতীতে যারা দায়িত্ব নিয়েছে তারাও নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। যারা চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের মেরুদন্ড ভেঙেছে তাদের বয়কটের মাধ্যমে তরুণদের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি সবাইকে মিলেমিশে আগামীতে একটি সুন্দর ও ক্রীড়াবান্ধব সিজেকেএস কমিটি করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

 

 

সর্বশেষ খবর