অ্যাডহক বা নির্বাচিত কমিটি ঘিরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) বিতর্ক বরাবরই। তবে একেবারে পেছনে না গিয়ে বাফুফের বর্তমান কমিটির কথা ধরা যাক। ২০২০ সালে যারা নির্বাচিত হয়ে ফুটবল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন তারা কী করেছেন? সভাপতিকে স্বাভাবিকভাবে কিছু দায়িত্ব পালন করতেই হবে। কাজী সালাউদ্দিন হয়তো বা তা করেছেন। সিনিয়র সহসভাপতি চেকে সই ছাড়া ফুটবল উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখতে পেরেছেন? সহসভাপতি ছিলেন চারজন। তারা আবার উপকমিটির প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কাজী নাবিল ও মহিউদ্দিন আহমেদ মহি আগেও এ পদে ছিলেন। সহসভাপতি হিসেবে নতুনভাবে ইমরুল হাসান ও আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক নির্বাচিত হয়েছিলেন। মানিক আবার ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। নাবিল ন্যাশনাল টিম ম্যানেজমেন্ট কমিটির দায়িত্ব পান। মহিউদ্দিনের কাজ তো ছিল ফটোসেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। মানিক আর নাবিল উল্লেখ করার মতো কোনো ভূমিকা রাখতে পেরেছিলেন কি?
ইমরুল হাসান ২০২০ সালেই প্রথমবারের মতো বাফুফে নির্বাচনে অংশ নেন। অভিষেকেই বাজিমাত, সর্বোচ্চ ভোটে জয়ী হয়ে সহসভাপতি নির্বাচিত হন। এর কারণ আগেই তিনি ফুটবলে বিভিন্ন সেবামূলক কাজে জড়িয়ে কাউন্সিলরদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছিলেন। বাফুফের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। ২৬ অক্টোবর নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটির দেখা মিলবে। চার বছরে বড় পদে থেকেও অনেকে বিতর্কিত। কিন্তু ইমরুল হাসানই ব্যতিক্রম। শুধু ফুটবল বললে ভুল হবে কাজের দক্ষতা দেখিয়ে তার গ্রহণ যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা ক্রীড়াঙ্গনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে।
সর্বোচ্চ ভোটে জয়ী হয়ে ইমরুলকে উপকমিটির ঢাকা মহানগরী লিগের চেয়ারম্যান করা হয়। তিনি ছোট বা বড় বিচার না করে কাজ করেন। তার নেতৃত্বেই প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পাইওনিয়ার লিগের অচল চাকা সচল হয়ে ওঠে। এ কাজে নির্বাহী কমিটির সদস্য ইলিয়াস হোসেন ও অন্যদের সহযোগিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সালাম মুর্শেদী তো ২০০৮ সালে সিনিয়র সহসভাপতি হওয়ার পর থেকেই পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। দীর্ঘদিন এ পদে থেকে সুনামের চেয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছেন বেশি। ক্লাবগুলো তার কর্মকান্ডে এতটা অসন্তুষ্ট ছিল যে, বার বার তারা লিগ বর্জনে চিঠি দিয়েছিল সভাপতিকে। শেষ পর্যন্ত সালামকে সরিয়ে সালাউদ্দিন নিজেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পরে দেখলেন ঝিমিয়ে থাকা লিগে নতুনত্ব আনা দরকার। তখনই দায়িত্ব তুলে দেন সহসভাপতি ইমরুলের হাতে।গত মৌসুমেই ইমরুল হাসান পেশাদার লিগের চেয়ারম্যান হন। তাকে ঘিরে কোনো বিতর্কের টু শব্দ কি পাওয়া গিয়েছিল? মেধা খাটিয়ে লিগে এনেছিলেন নতুনত্ব। তার লক্ষ্য ছিল সামনে লিগকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে। রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেও দল বদল সম্পন্ন করেন। কিন্তু নানা কারণে নতুন মৌসুম মাঠে গড়াতে সমস্যা হচ্ছে। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন তো আছেই এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভেন্যুর ব্যাপারটিও। বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনা ও ময়মনসিংহ রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়াম ছাড়া আর কোনো ভেন্যু এখনো নিশ্চিত হয়নি। সিডিউল অনুযায়ী ১১ অক্টোবর চ্যালেঞ্জ কাপ, ১৫ অক্টোবর ফেডারেন কাপ ও ১৮ অক্টোবর লিগের পর্দার উঠার কথা ছিল। ভেন্যুর কারণে সিডিউল রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। নভেম্বরের শেষের দিকে ঘরোয়া আসর মাঠে গড়াবে। তাও নিশ্চিত নয়।
আসলে বাফুফের যে অবস্থা তাতে ফুটবল জাগিয়ে রাখার একক দায়িত্ব যেন ইমরুলের মনে হচ্ছে। অনিশ্চয়তায় ঘরোয়া আসর এ নিয়ে কারোর মাথা ব্যথা নেই। সালাউদ্দিন নির্বাচন করবেন না বলে আগেই গা ছাড়া দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ পতনের পর সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী পদত্যাগ করেছেন। তিন সহসভাপতি নাবিল, মানিক ও মহিউদ্দিন কোথায় আছেন হদিস মিলছে না। সদস্যরা আবার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। তাই বলে কি তাদের কোনো দায়িত্ব নেই? ইমরুল হাসানও তো সিনিয়র সহসভাপতি পদে প্রার্থী হবেন বলে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তারপরও তিনি ফুটবল মাঠে নামাতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফেডারেশনে দায়িত্ব নেবে অথচ ফুটবল ঘিরে ভাবনা নেই। সব ভাবনা কি শুধু ইমরুলেরই?