৩০ জুলাই, ২০২০ ২১:৩৩

করোনাকালে ক্রিকেটারদের রক্ষাকবচ ‌'বায়ো-বাবলস' আসলে কী?

অনলাইন ডেস্ক

করোনাকালে ক্রিকেটারদের রক্ষাকবচ ‌'বায়ো-বাবলস' আসলে কী?

দরজায় কড়া নাড়ছে আইপিএল-২০২০। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত দুবাইতে আসর বসতে চলেছে চলতি মৌসুমের আইপিএলের।  আইপিএল নিয়ে বিশেষ আলোচনা করতে গভর্নিং কাউন্সিলের মিটিং বসতে চলেছে আগামী রবিবার। সেখানেই যাবতীয় ধন্দ্বের বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে। যেমন ক্রিকেটারদের সুরক্ষার জন্য কী কী ব্যবস্থা থাকছে, ফ্র্যাঞ্চাইজি নাকি বিসিসিআই হোটেলের আয়োজন করবে- এমন সব বহুমুখী দিক উঠে আসবে আলোচনায়। 

শোনা যাচ্ছে, আইপিএলের ফাইনাল ম্যাচটিও পিছিয়ে যেতে পারে। তাও চূড়ান্ত হবে রবিবারের মিটিংয়েই। তবে ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট সিরিজের সময়েই আমাদের নজরে করোনা সংক্রমণকালে ক্রিকেটারদের বিশেষ রক্ষাকবচ। যাকে বলা হচ্ছে 'বায়ো-বাবল' বা 'জৈব সুরক্ষা বলয়'। কী এই বায়ো-বাবল? আর কীভাবেই বা এই জৈব সুরক্ষিত পরিবেশ করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচাবে ক্রিকেটারদের? এমনই নানা তথ্যে নজর রাখা যাক।

​এই বায়ো-বাবল আসলে কী?

কোভিড সংক্রমণকালে মূলত বাস্কেটবল খেলা আয়োজন করতে গিয়েই প্লেয়ারদের সুরক্ষায় সর্বপ্রথম ক্রীড়াঙ্গনে বায়ো-বাবল বা জৈব সুরক্ষিত পরিবেশের চিন্তাভাবনা করা হয়। এর নাম বাবল হলেও মনে রাখতে হবে, সচরাচর যে ধরনের বাবল বা বুদবুদ আমরা দেখে থাকি, তা একেবারেই নয়। স্যানিটাইজড করে রাখা পরিবেশ, সেখানে খেলোয়াড় ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশও করতে পারবেন না। আবার কেউ সেখান থেকে বেরিয়ে যেতেও পারবেন না।

​জৈব সুরক্ষিত পরিবেশে কঠিন নিরাপত্তা

আইসোলেটেড রাখতেই এই পরিবেশের চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল। সেই মোতাবেক ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই দলেরই খেলোয়াড়দের মাঠ আর হোটেলের বাইরে কোথাও যেতে দেওয়া হয়নি। আসলে দুটি দলের মধ্যে টেস্ট সিরিজে এই জৈব সুরক্ষিত পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় কোনও অসুবিধা হয় না। কারণ, সাউদ্যাম্পটনের পাশেই রয়েছে এজিয়াস বাউল হোটেল। অন্যদিকে আবার ম্যাঞ্চেস্টারের ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশেই রয়েছে হিল্টন হোটেলস। এখন দুবাইতে এই ধরনের পরিস্থিতি আদৌ তৈরি করা যাবে কি না এবং আইপিএলের এতগুলো ফ্রাঞ্চাইজির জন্য কীভাবে এই বায়ো-বাবলসের ব্যবস্থা করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

​পরিবার-বন্ধুবান্ধব কারও সঙ্গে দেখা করা যাবে না

জৈব সুরক্ষিত পরিবেশে থাকার বেশ কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। তার মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য নিয়মটি হল, কারও সঙ্গে দেখা করা চলবে না। অর্থাৎ টুর্নামেন্ট যতদিন চলবে, ততদিন পর্যন্ত পরিবারের কেউ বা কোনও বন্ধুবান্ধব-- কেউই ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। সুতরাং আইপিএলে বিরাট-রোহিত-ধোনিদের দুই মাস টানা পরিবার বা প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করার কোনও সুযোগ নেই। ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে টেস্ট ম্যাচ চলাকালীন ব্রিটিশ ফাস্ট বোলার জোফ্রা আর্চার সেই জৈব সুরক্ষিত পরিবেশ থেকে বেরিয়ে গিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলেন।

​জৈব সুরক্ষিত পরিবেশে থাকার আগেই কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে

করোনার আবহে বহু দিন ধরেই ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরা প্র্যাকটিস করেননি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্রিকেটারদের অবস্থাও কিছুটা একই রকম। তাই আইপিএল শুরু হওয়ার কিছু দিন আগেই ক্রিকেটারেরা দুবাই পৌঁছে যাবেন প্র্যাকটিস করতে। কিছু প্র্যাকটিস ম্যাচও খেলা হবে। তবে সর্বপ্রথম ক্রিকেটারদের দুবাইতে পা রাখতেই আগে কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে। কোনও এক হোটেলেই কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন তারা। আর তারপরেই সেই ক্রিকেটারেরা মাঠে প্র্যাকটিস করার অনুমতি পাবেন।

​বায়ো-বাবলসে দর্শকশূন্য গ্যালারি

এই জৈব সুরক্ষিত পরিবেশে মাঠে খেলা দেখতে আসতে পারবেন না কোনও দর্শক। ঠিক এই নিয়ম মেনেই খেলা হয়েছে ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে। আর আইপিএলও হবে কোনও দর্শক ছাড়াই। জৈব সুরক্ষিত পরিবেশে খেলা আয়োজন করার অন্যতম মূল নিয়ম এটি। কৃত্রিম আওয়াজ সৃষ্টি করাই যেতে পারে, যেমনটা লা লিগার ক্ষেত্রে হয়েছিল। চলতি আইপিএল মৌসুমে বহু দিন পরে মাঠে নামবেন ক্রিকেটারেরা। দেড় বছর পর ব্যাট ধরবেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। কিন্তু 'মাহি মাহি' করে চিৎকারের সেই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখার জো নেই এবারের আইপিএলে।

​দুবাইতে আইপিএল আর কমেন্ট্রি ভারত থেকেই

ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে টেস্ট সিরিজে লাইভ কমেন্ট্রি দেখা গিয়েছে। জৈব সুরক্ষিত পরিবেশে এমনটা বলা নেই যে, মাঠে লাইভ কমেন্ট্রি করা যাবে না। কিন্তু আইপিএল-এর ধারাভাষ্য নিয়ে বিসিসিআই ভাবনা-চিন্তা কিছুটা সেরেই ফেলেছে। আইপিএল ম্যাচগুলো দুবাইতে খেলা হলেও তার কমেন্ট্রি হবে ভারত থেকেই। বেশি লোকজনের ঝক্কিতে না গিয়েই এমনতর সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড। অন্যদিকে ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট সিরিজের মতোই কোনও ক্রিকেটার বল করতে আসার আগে তার সোয়েটার বা টুপি বা সানগ্লাস-- কোনও কিছু আম্পায়ারের হাতে ধরাতে পারবেন না। জৈব সুরক্ষিত পরিবেশে খেলার এটিও একটি নিয়ম।

​সত্যিই কি কাজে আসবে বায়ো-বাবলস

এই প্রশ্নটা একবার তুলেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের 'দ্য ওয়াল' অর্থাৎ রাহুল দ্রাবিড়। রাহুলের প্রশ্ন ছিল মূলত, ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ম্যাচকে ঘিরেই। তার কথায়, "যদি টেস্টের দ্বিতীয় দিনে কোনও ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হন, সে ক্ষেত্রে কী হবে?" পাশাপাশিই রাহুল দ্রাবিড় সে দিন এ-ও বলেছিলেন যে, ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের ক্ষেত্রে বায়ো-বাবলসে খেলা শুরু করা সম্ভব হলেও, ভারতে তা কখনই সম্ভব নয়। আর সে দিক থেকে দেখতে গেলে, বায়ো-বাবলসে খেলা শুরু করে একপ্রকার সফল ইংল্যান্ড। কারণ টেস্ট ম্যাচ চলাকালীন ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা ইংল্যান্ডের কোনও ক্রিকেটার করোনা আক্রান্ত হননি। সেক্ষেত্রে বায়ো-বাবলসে যে এক্কেবারেই কাজ হয় না, সে কথা বলা চলে না। সূত্র: এই সময়

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর