অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেট তারকা এলিস পেরির ক্যারিয়ার অনেক সমৃদ্ধ। অনেক ইতিহাস, রেকর্ড আর অর্জনে সমৃদ্ধ তার ক্যারিয়ার। এবার আরও এক ‘প্রথম’ অর্জন করলেন তিনি। রবিবার (০৭ জানুয়ারি) মুম্বাইয়ে ভারতের বিপক্ষে নেমে প্রথম নারী অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে খেললেন তিনশ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তবে পেস বোলিং অলরাউন্ডার পেরি চারশ ম্যাচ খেলতে চান। নারী ক্রিকেটে তিনশ ম্যাচ খেলার মাইলফলক ছুঁয়েছেন ভারতের মিতালি রাজ, ইংল্যান্ডের শার্লট এডওয়ার্ড ও নিউজিল্যান্ডের সুজি বেটস।
সেই ২০০৭ সালে ১৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক পেরির। ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সর্বকনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার তিনি। তখন ফুটবল-ক্রিকেট, দুটিই খেলতেন সমান তালে। ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক অভিষেকে সপ্তাহ দুয়েক পর আন্তর্জাতিক ফুটবলেও মাঠে নামেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। ডিফেন্ডার হয়েও অভিষেক ম্যাচে গোলের দেখা পেয়ে যান হংকংয়ের বিপক্ষে।
প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পান ক্রিকেটেই। ২০০৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নেন তিনি। পরের বছরই প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পান টি-টোয়েন্টিতে। ফুটবলও তখন চালিয়ে যাচ্ছেন দারুণভাবেই। ২০১১ সালে জার্মানিতে ফুটবল বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া দলে জায়গা পান। নরওয়ের বিপক্ষে ম্যাচে বদলি হিসেবে প্রথমবার মাঠে নামেন বিশ্বকাপে। কোয়ার্টার-ফাইনালে গোলও করেন সুইডেনের বিপক্ষে। একটা পর্যায়ে পেশাদার জগতের দাবি মিটিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে হয় একটি খেলাকে। ক্রিকেটকে বেছে নিয়ে যে ভুল করেননি, তা প্রমাণ হয় ক্রমেই। অসাধারণ পারফরম্যান্সে দারুণ সব অর্জনে রাঙান নিজেকে।অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এখনও পর্যন্ত দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ছয়টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছেন তিনি। জিতেছেন কমনওয়েলথ গেমসের সোনা। ব্যক্তিগত অর্জন তো বলে শেষ করা যাবে না। আইসিসির বর্ষসেরা নারী ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতেছেন ৩ দফায়, আইসিসির দশক সেরা (২০১১-২০) ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারও তিনিই, উইজডেনের লিডিং উইমেন ক্রিকেটার হয়েছেন ২ বার। উইজডেন অ্যালমানাকের বর্ষসেরা তো হয়েছেনই। অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরা হয়েছেন ৩ দফায়, অ্যাশেজের প্লেয়ার অব দা সিরিজ জিতেছেন ৩ বার। এছাড়াও পরিসংখ্যানের পাতায় রেকর্ড, অর্জন তার অসংখ্য। সেখানেই এবার যোগ হলো এবার ৩০০ ম্যাচের মাইলফলক। ৪০০ ম্যাচেও দৃষ্টি আছে কি না, এই প্রশ্নে পেরি বললেন, এভাবেই তিনি ছুটে যেতে যান আরও অনেক দূর।
ক্যারিয়ারে গত কয়েক বছর কিছু উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। ২০২০ সালে বেশ বাজে চোটের শিকার হতে হয়েছিল। ফিরে এসেছেন সেখান থেকে। ২০২২ সালের শুরুর দিকে টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা হারিয়ে ফেলেছিলেন। পরে আবার নিজের খেলা শানিত করে দলে ফিরেছেন এবং টি-টোয়েন্টি দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছেন।
পেরির এই সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারের পথচলায় মেয়েদের ক্রিকেটও অনেক বিবর্তনের পালায় গিয়েছে। মেয়েদের ক্রিকেটে অর্থের সংযোগ বেড়েছে, ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বেড়েছে, দল বেড়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে এবং জনপ্রিয়তাও এখন বেড়েছে তুমুলভাবে। ২০২০ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ৮৬ হাজার দর্শকের সামনে খেলেছেন পেরিরা। শুরুর সময়টার কথা ভাবলে এসব এখন অবিশ্বাস্য লাগে পেরির। তিনি জানান, আমার অভিষেক ম্যাচের দিন ডারউইনে সম্ভবত ৩০ জন দর্শক ছিল। সেখান থেকে এখন যে পর্যায়ে এসেছি আমরা, বিস্ময় ও মুগ্ধতার শেষ নেই আমার, সত্যিই দারুণ ব্যাপার এটি।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ