২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ১৩:০২

আমার পিছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই : সানজিদা আক্তার

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

আমার পিছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই : সানজিদা আক্তার

সানজিদা আক্তার

ভারতের ঐতিহ্যবাহী ফুটবল টিম ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে খেলতে গিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় সানজিদা আক্তার।

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের নারী ফুটবল টিমের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে ইতোমধ্যেই প্র্যাকটিস সেরেছেন সানজিদা। খেলেছেন একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচও, সেই ম্যাচটিতে দল জিতেছে। দলে সানজিদার পারফর্মেন্স নিয়ে অনেকেই খুশি।

ম্যাচ শেষে অনেকেই এগিয়ে এসে তার সাথে সেলফিও তুলেছেন। বিষয়টি বেশ ভালো লেগেছে সানজিদার। তবে ফুটবল যেহেতু একটি দলগত খেলা তাই কেবল তাকে ভালো খেললেই হবে না, দলকেও দলগতভাবে ভালো খেলতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

সানজিদা বলেন, ‘জার্নি করে নতুন একটি জায়গায় এসেও আমি আমার স্বাভাবিক খেলা খেলেছি। দলের অনেকেই আমার খেলার প্রশংসা করেছে। খেলা শেষে অনেকে আমার সাথে সেলফিও তোলে।’

আগামী ৩০ জানুয়ারি পরবর্তী ম্যাচ খেলতে নামছে ইস্টবেঙ্গল দল। কিন্তু প্রতিটি ম্যাচের আগেই খেলোয়াড়দের যে মানসিক চাপ নিতে হয় তা নিয়ে সানজিদার বক্তব্য, ‘এত চাপ নিয়ে তো খেলোয়াড়রা খেলতে পারে না, তবুও চাপ নিতে হয়। যেহেতু আমি এখানে এসেছি, আমি চেষ্টা করব আমার সেরাটা দেওয়ার। এর সাথে আমার দেশের সুনাম জড়িত রয়েছে। সেটা আমি রক্ষা করার চেষ্টা করব। তাছাড়া আমার পিছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই, আমাকে ভালো কিছু করতে হবে।’

শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার সেন্ট জেমস স্কুল অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরস্কার-২০২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সানজিদা।

ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে অনেক খ্যাতনামা বাংলাদেশের খেলোয়াড়ই খেলে গেছেন। যাদের মধ্যে অন্যতম খন্দকার ওয়াসিম ইকবাল (১৯৮৬), মোনেম মুন্না (১৯৯১ ও ১৯৯৩), রিজভী করিম রুমি (১৯৯১), গোলাম মোহাম্মদ ঘাউস (১৯৯১), শেখ মোহাম্মদ আসলাম (১৯৯১), রাকিব হোসেন (১৯৯৫) ও মিনাজুর রহমান (১৯৯৫)। দেশ স্বাধীনের আগেও বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে খেলে গেছেন, তবে নারী বিদেশি ফুটবলার এই প্রথম।

একজন নারী বিদেশি ফুটবলার হিসেবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে তার যোগদান নিয়ে সানজিদা বলেন, ‘ইস্টবেঙ্গলের পুরুষ টিমে আমাদের বাংলাদেশের অনেকেই খেলে গেছেন, এর ইতিহাসও আছে। কিন্তু একজন বিদেশি হিসেবে ইস্টবেঙ্গলের নারী টিমে এই প্রথম আমি যোগদান করেছি, এটা অনেক ভালো লাগে। বিশেষ করে নারী ফুটবলারদের কাছে গর্বের বিষয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অনেক ফ্যান-ফলোয়ার আছে। আমি এখানে যোগ দেওয়ার আগে যেভাবে আমাদের দেশে এটা নিয়ে মাতামাতি হয়েছে এটি আমার অনেক ভালো লেগেছে।’

অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, রাইট উইংগার হিসেবে খেলা ২২ বছর বয়সী সানজিদা বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের বয়সভিত্তিক সব বিভাগে কৃতিত্বের সাথে খেলেছেন। অনূর্ধ্ব ১৪, অনূর্ধ্ব ১৬, অনূর্ধ্ব ১৮, অনূর্ধ্ব ১৯ বিভাগে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলা সানজিদা বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। ২০২২ সালে বাংলাদেশের সাফ ওমেনস চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে সানজিদার অবদান অনস্বীকার্য।

নতুন ক্লাবে নিজের ও দলের পারফরমেন্স নিয়ে সানজিদা বলেন, ‘ফুটবল একটা দলগত খেলা, একা ভালো খেলে কেউ দলকে জেতাতে পারে না। দলের বাকি খেলোয়াড়রা তাদের ১০০ শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করছে, আমিও ভালো কিছু করার চেষ্টা করব। তবে একা তো সবকিছু করতে পারব না।’

বাংলাদেশের ফুটবল ভবিষ্যৎ নিয়ে বসুন্ধরা কিংস নারী দলের খেলোয়াড় সানজিদা বলেন, ‘বাংলাদেশ ফুটবল আগে থেকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমাদের দেশে অনেক ভালো ভালো ফুটবলার আছেন। আমার মনে হয় পরবর্তীতে আরো অনেক খেলোয়াড়ই বিদেশের মাটিতে খেলতে যাবেন। আমাদের দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ভারতীয় মহিলা লীগ ক্লাব কিকস্টার্টে খেলছেন, আমি নিজে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলছি।’

তার মতে, ‘আমার কখনোই মনে হচ্ছে না যে আমি বিদেশে এসে খেলছি। কারণ, এখানকার ভাষা এক।’

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তাদের থেকে সব রকম সহযোগিতা পাচ্ছেন বলেও জানান বাংলাদেশের ময়মনসিংহের বাসিন্দা সানজিদা।

‘আসলে ফুটবলের ভাষা বিশ্বজুড়েই এক’, অভিমত তার।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর