সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার কয়েক মাস পর রিশাভ পন্তের সঙ্গে দেখা হয় রিকি পন্টিংয়ের। এই কিপার-ব্যাটারের অবস্থা দেখে তখন প্রবল ভয় চেপে বসেছিল পন্টিংয়ের মনে। দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচ ভেবেছিলেন, পন্তের খেলোয়াড়ি জীবন শেষ!
কিন্তু সব শঙ্কাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন পান্ত। দুর্ঘটনার পর সুস্থ হয়ে ম্যাচ খেলার মতো ফিট হয়ে উঠেছেন এবং এবারের আইপিএলের শুরু থেকেই খেলেছেন। দিল্লি ক্যাপিটালসকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, পারফর্ম করেছেন উইকেটের সামনে-পেছনে। কোচ হিসেবে কাছ থেকেই পন্তকে দেখেছেন পন্টিং এবং ডুবে গেছেন বিস্ময় ও ভালো লাগায়। আইসিসি রিভিউ-এ দিল্লি কোচ ফিরে গেলেন গত বছরের আইপিএলের সময়টায়, যখন তার মনে ছিল শঙ্কার ঝড়।
পন্টিং বলেছিলেন, “সত্যি বলতে, অসাধারণ কিছুর চেয়ে কম নয় এটা (পন্তের ফেরা)। গত বছর আইপিএলের সময় তার সঙ্গে সময় কাটিয়েছি কিছুদিন। তার দুর্ঘটনার তিন-চার মাস পরের ঘটনা সেটি। আমার তখন ভয়ঙ্কর ভয় ছিল, সে হয়তো আর কখনও খেলতে পারবে না। যে শারীরিক ও মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হয়েছে…।”তবে পন্ত তখনও দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বলেই জানালেন পন্টিং। তিনি জানান, “তখনও পর্যন্ত সে হাঁটতে পারত না। ক্রাচে ভর দিয়ে চলতে হতো। মনে আছে, তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘পরের মৌসুম নিয়ে কি ভাবছো?’ সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘চিন্তা করবেন না, ঠিক হয়ে যাব।’ অবিশ্বাস্যভাবে নিজের দেখভাল করেছে সে। দিল্লি ক্যাপিটালস ফ্র্যাঞ্চাইজিও দারুণভাবে তার খেয়াল রেখেছে। ফিজিও প্যাট্রিক ফারহার্ট তাকে নিয়ে চমৎকার কাজ করেছে।”
২০২২ সালে ডিসেম্বরের শেষ দিকে উত্তরাখন্ডের রুর্কিতে ভয়ঙ্কর সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েন পন্ত। তার গাড়ী উল্ট গিয়ে আগুন ধরে গেলেও কোনোরকমে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তবে গুরুতর আহত হন তিনি। তার ডান হাঁটুর মূল তিনটি লিগামেন্টই ছিড়ে যায়। এছাড়াও কবজি, অ্যাঙ্কেল, পায়ের অগ্রভাগসহ চোট পান নানা জায়গায়। আঘাত পান পিঠে ও মাথায়। কয়েক দফায় অস্ত্রোপচার হয়।
এই সময়টায় আইপিএলের গোটা একটি মৌসুম, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ও ওয়ানডে বিশ্বকাপসহ অনেক ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি। দীর্ঘ পুনবার্সন প্রক্রিয়া পেরিয়ে ১৫ মাস পর এবারের আইপিএল দিয়ে তিনি মাঠে ফেরেন। ব্যাট হাতে দেখা যায় তার সেই পুরোনো রূপ। ১৩ ইনিংসে ৪৪৬ রান করেন তিনি ৪০.৫৪ গড় ও ১৫৫.৪০ স্ট্রাইক রেটে।
পন্তের ব্যাটিংয়ে ভালো করা নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না বলেই জানালেন পন্টিং। তারা ভাবনায় ছিলেন কিপার পন্তকে নিয়ে। তিনি জানান, “তার ব্যাটিং নিয়ে কারও সেভাবে দুর্ভাবনা ছিল না। কারণ সে ব্যাট হাতে বরাবরই দুর্দান্ত। কিন্তু তার উইকেট কিপিং, টানা ১৪ ম্যাচ ধরে প্রতিটি বলে উঠবস করা, ছুটে বেড়ানো, এসব নিয়ে অবশ্যই কিছু দুশ্চিন্তা ছিল।”
সেই শঙ্কাও উড়িয়ে দেন পন্ত। প্রথম ম্যাচ থেকেই কিপিং করেন এবং টুর্নামেন্টের যৌথভাবে সর্বোচ্চ ১৬টি ডিসমিসাল করেন তিনি। আইপিএলে ফর্ম ও ফিটনেসের প্রমাণ দিয়ে জাতীয় তলেও ফিরেছেন পান্ত। ভারতের বিশ্বকাপ তলে তাকে রাখা হয়েছে। পন্টিংয়ের আশা, বিশ্বকাপেও জ্বলে উঠবেন ২৬ বছর বয়সী ক্রিকেটার।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ