৭ জুন, ২০২৪ ১৭:৫৫

যে কম্পিউটার বিজ্ঞানীর কাছে ধরাশয়ী পাকিস্তান

অনলাইন ডেস্ক

যে কম্পিউটার বিজ্ঞানীর কাছে ধরাশয়ী পাকিস্তান

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটার সৌরভ নেত্রবালকার। তার একক নেপুণ্যে কানাডার পর পাকিস্তানকেও হারিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন এই আনকোরা দলটিই ‘এ’ গ্রুপের শীর্ষে। সামনে কেবল তাদের ভারত ও আয়ারল্যান্ড। একটা জিতলেই সুপার এইটের টিকিট প্রায় নিশ্চিত।

পাকিস্তানের বিপক্ষে টাই হওয়া ম্যাচ সুপার ওভারে গড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে সেই সুপার ওভারে বল করেন বাঁহাতি পেসার সৌরভ। যেখানে ১৮ রান তাড়া করতে নামা পাকিস্তানকে মার্কিনিরা আটকে দেয় ১৩ রানে। আর সেই জয়ের নায়ক সৌরভ। 

৩২ বছর বয়সী নেত্রবালকার আসলে ভারতীয়। ২০১০ সালে লোকেশ রাহুল, মায়াঙ্ক আগারওয়ালদের সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও খেলেছেন তিনি।

মুম্বাই থেকে উঠে আসা এই ক্রিকেটার কম্পিউটার বিজ্ঞানীও।

২০০৯ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার স্পোর্টস স্কলারশিপে থাকার সময় বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমির এক খেলায় সে সময়ের তারকা ক্রিকেটার যুবরাজ সিংয়ের স্টাম্প ভেঙে দিয়েছিলেন। যে বোলিং তাকে বিসিসিআই করপোরেট ট্রফিতে জায়গা করে দেয়।

ভারতীয় বোর্ড তখন করপোরেট ট্রফিকে বেশ গুরুত্ব দিত। নেত্রবালকার খেলার সুযোগ পান যুবরাজ, সুরেশ রায়না, রবিন উথাপ্পাদের সঙ্গে। ১৮ বছর বয়সী নেত্রবালকার সে টুর্নামেন্টে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করে ডাক পান ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দলেও। ততদিনে ভারতে কম্পিউটার প্রকৌশলে স্নাতকে ভর্তি হয়ে গেছেন। কিন্তু বিশ্বকাপ খেলবেন বলে প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা মিস করে বসেন।

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট ছিল নেত্রবালকারের (৬ ম্যাচে ৯ উইকেট)। এমন সাফল্যের পর ভারত জাতীয় দলে ঢোকার পথ অনেকটাই দৃষ্টিসীমায় চলে আসার কথা। অন্তত আইপিএল দলে ডাক পাওয়া কিংবা ঘরোয়া দল মুম্বাইয়ের নিয়মিত অংশ হওয়ার আশা তো ছিলই। কিন্তু মুম্বাইয়ে তখন অজিত আগারকার, জহির খান, আভিষ্কার সালবি ও ধাওয়াল কুলকার্নিদের দাপট, নেত্রবালকারের জায়গা পাওয়া তাই কঠিনই ছিল।

তবু ক্রিকেটে থাকবেন বলে ২০১৩ সালে পুনের একটি সফটওয়্যার টেস্টিং কোম্পানির চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এর কয়েক মাস পরই মুম্বাইয়ের হয়ে অভিষেক হয় রঞ্জি ট্রফিতে। তবে ভারত জাতীয় দলে ঢোকার রাস্তাটা খুলতে পারছিলেন না কিছুতেই। কম্পিউটার প্রকৌশলে নেওয়া ডিগ্রিটাও কাজে লাগছিল না। ভাবলেন, নিজের প্যাশন–প্রফেশনের রসায়ন ঘটিয়ে কিছু করা দরকার। সে চিন্তা থেকেই ২০১৪ সালে তৈরি করলেন ক্রিকডিকোড নামের একটি অ্যাপ। এই মোবাইল অ্যাপে ক্রিকেটাররা তাদের খেলা বিশ্লেষণ করতে পারেন।

এই কোডিংয়ের দক্ষতা বা প্রকৌশল জ্ঞান আর উল্টো দিকে ভারতের ক্রিকেটে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। দুই মিলিয়ে ২০১৫ সালে নেন নতুন সিদ্ধান্ত। ভর্তির সুযোগ পান যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার প্রকৌশল স্নাতকোত্তরে। 

২০১৬ সালের মে মাসে মাস্টার্স শেষ করে দুটি পথ ছিল নেত্রবালকারের সামনে। প্রথমত, ভারতের ফিরে প্রকৌশলে কাজ করা এবং আবার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরুর চেষ্টা করা। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রে থেকে সান ফ্রান্সিসকোতে চলে যাওয়া, যেখানে ওরাকলের চাকরির প্রস্তাব আছে। খেলা চালিয়ে গেলে একটা সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের জার্সি গায়ে তোলার সুযোগ মিলবে। নেত্রবালকার দ্বিতীয় পথটিই বেছে নেন।

তবে এটাও খুব একটা সহজ ছিল না।

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে নর্থ ওয়েস্ট রিজিয়নের হয়ে খেলেন নেত্রবালকার। এর মধ্যেই জেনে নেন যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলের হয়ে খেলতে কী কী দরকার। যা জানার পর ক্রিকেটে পরিশ্রম বাড়িয়ে দেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনি ও রোববার। নেত্রবালকার প্রতি সপ্তাহে দুটি শহরে খেলার লক্ষ্য নেন। শ্রীনিবাস সালভার নামের এক সতীর্থকে নিয়ে শুক্রবার কাজ শেষ করে রাতে সান ফ্রান্সিসকো থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে যেতেন। দুজনে তিন ঘণ্টা করে ছয় ঘণ্টার ড্রাইভিংয়ে যেতেন আরেক সতীর্থের বাড়িতে। সেখানে থেকে শনিবার খেলতেন। এরপর সান ফ্রান্সিসকোয় ফিরে আরেকটা ম্যাচ খেলতেন। ক্রিকেট নিয়ে এসব দৌড়ঝাঁপে মা-বাবার মানা থাকলেও টার্ফ উইকেটের জন্য লস অ্যাঞ্জেলে নিয়মিতই যাতায়াত করতেন তিনি।

এই লস অ্যাঞ্জেলেসেই ২০১৭-এর গ্রীষ্মে খেলেন মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ম্যাচ। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ইলেভেনের হয়ে নামা নেত্রবালকার যুক্তরাষ্ট্র একাদশের বিপক্ষে ৯ ওভার বল করে নেন ৩০ রানে ২ উইকেট। যা দেখে মুগ্ধ হন যুক্তরাষ্ট্রের কোচ পুবুদু দেসানায়েকে। যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলে ডাক পেয়ে যান কিছুদিন পরেই। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলেন লিওয়ার্ড আইল্যান্ডসের বিপক্ষে, নেন ৪৫ রানে ২ উইকেট।

৬ জুন ২০২৪ তারিখে নেত্রবালকার যুক্তরাষ্ট্রকে এনে দিয়েছেন আরেকটি ‘প্রথম’। আইসিসির পূর্ণ সদস্য কোনো দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের এটাই প্রথম জয়। যে জয়ে একজন ক্রিকেটার আছেন, আছেন কম্পিউটার প্রকৌশলীও। 

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর