১৯ অক্টোবর, ২০২১ ০৮:২৮
জিততেই হবে আজ

টাইগারদের চাই ক্রুজ সুলতান!

মেসবাহ্ উল হক, মাস্কাট থেকে

টাইগারদের চাই ক্রুজ সুলতান!

রাজধানী শহর মাস্কাটের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে মাতরা। এটি ওমানের সুদৃশ্যমান একটি সমুদ্রবন্দরও বটে। নয়নাভিরাম, চোখ জুড়ানো এই বন্দরে সুসজ্জিত করে রাখা হয়েছে বিশাল দুটি জাহাজ। একটির নাম ‘আল সাঈদ’, আরেকটি হচ্ছে ‘আল সালামা’। তবে বিশেষ জাহাজ দুটিকে এই নামে স্থানীয়রা ডাকেন না। তাদের কাছে জাহাজ দুটির আরেকটি নাম আছে, তা হচ্ছে ‘ক্রুজ সুলতান’। যেহেতু এই জাহাজ দুটি কেবলই ওমান সুলতানের খেদমতের জন্য রাখা হয়েছে, তাই স্থানীয়রা এই নামে ডাকেন। ক্রুজ সুলতান একদিকে যেমন সমুদ্রে সুলতানের রক্ষাকারী, অন্যদিকে ভ্রমণ পিপাসুদের বিমুগ্ধ করছে। দিনে ও রাতে জাহাজ দুটির ভিন্ন ভিন্ন রূপ। সূর্যালোকে দেখতে মনে হবে ক্রুজ সুলতানকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। যদিও সে কারণেই রাখা। আর অন্ধকার রাতে ক্রুজ সুলতান যেন মায়াবী রূপ ধারণ করে। দূর থেকে দেখে মনে হবে যেন জোনাকির রাজ্য। এমন চমৎকারভাবে আলোক সজ্জিত করে রাখা হয়েছে সেদিক থেকে চোখ ফেরানোই দায়। অনেকেই বলেন, জাহাজ দুটি নাকি সুলতানের বিপদের বন্ধু।

বিশ্বকাপ খেলতে ওমানে আসা বাংলাদেশ দলেও চাই, কয়েকটি ক্রুজ সুলতান। এমন কিছু বিপদের বন্ধ। ক্রুজ সুলতানের মতো ক্রিকেটার। যে ক্রিকেটাররা কেবলই বাংলাদেশ দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে থাকবেন, দলকে রক্ষা করবেন বিপদ থেকে, আবার যাদের খেলা দেখে মুগ্ধতার আবির ছড়িয়ে পড়বে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। ওমানে ক্রিকেটের কোনো উন্মাদনা নেই। এই মরুভূমিতে খেলাধুলা বলতে ফুটবলকেই বুঝে থাকেন। এখানে ক্রিকেট খেলেন কেবল প্রবাসীরা। তাদের নিয়েই ওমান দল। সেই দলটাই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনির বিরুদ্ধে ১০ উইকেটের কী দুর্দান্ত এক আগ্রাসী জয় নিয়েই না মাঠ ছাড়লো। সেই একই ভেন্যুতে একই দিনে বাংলাদেশ লজ্জায় ডুবল স্কটল্যান্ডের মতো ‘পুঁচকে’ দলের বিরুদ্ধে। মজার বিষয় হচ্ছে, এই ম্যাচে স্কটিশরা কিন্তু বাংলাদেশকে বলে-কয়ে হারিয়েছে। কারণ, ম্যাচের একদিন আগে স্কটল্যান্ড কোচ বলেছিলেন, বাংলাদেশ টি-২০তে ওমান কিংবা পাপুয়া নিউগিনির চেয়ে বড় কোনো দল নয়! মাহমুদুল্লাহদের হারিয়ে তার প্রমাণও দিয়েছে।

তারপরও কেন সেই স্কটল্যান্ডকে ‘পুঁচকে’ দল বলা হচ্ছে?

কারণ, তো একটাই -র‌্যাঙ্কিংয়ে ৬ নম্বর দলের বিরুদ্ধে ১৫ নম্বর দলটি তো ছোটই! তা ছাড়া বিশ্বকাপের আগেই তো অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে ওমানে পা রাখে বাংলাদেশ। যে কারণে দুই দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে হারার পরও স্কটল্যান্ডকে পাত্তাই দেয়নি লাল-সবুজের দল। মাহমুদুল্লাহদের আত্মবিশ্বাসটা যে ‘মিথ্যা আত্মবিশ্বাস’ ছিল তা প্রথম ম্যাচেই প্রমাণ করে দিল স্কটল্যান্ড।

বিশ্বকাপের আগে মিরপুরে বাংলাদেশ দল যখন স্লো আর টার্ন উইকেট বানিয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করার সাময়িক আনন্দে মশগুল, ঠিকই একই সময়ে স্কটিশরা এই মরুর বুকে স্পোর্টিং উইকেটে অনুশীলনে ব্যস্ত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। মাহমুদুল্লাহরাও নিজেদের ‘ফলস কনফিডেন্ট’ -এর ফাঁদে পড়েছে। আজ প্রতিপক্ষ স্কটিশদের চেয়েও ‘ভয়ংকর’ ওমান! উইকেট, মাঠ -এই মরুপ্রান্তরের সব কিছু তাদের চেনা জানা। প্রথম ম্যাচে দুরন্ত জয়ে তারা আরও বেশি উজ্জীবিত। কিন্তু বিশ্বকাপের পরের রাউন্ডে যেতে হলে এই ক্যারিশম্যাটিক ওমানকে থামাতেই হবে। জিততে হবে পাপুয়া নিউগিনির বিরুদ্ধেও। হয়তো আজই নিশ্চিত হয়ে যাবে, বাংলাদেশ কী পরের রাউন্ডে যাবে নাকি বিদায়ঘণ্টা বেজে যাবে! তবে এটাও ঠিক বাংলাদেশ দলের সত্যিকার যে সামর্থ্য, তাতে ওমানের মতো দল মোটেও বড় বাধা নয়। মাহমুদুল্লাহরা নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে গেছেন। নিজের সামর্থ্যইে যেন তাদের অবিশ্বাস জন্মে গেছে। তা না হলে কি আর স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারতে হয়।

তবে প্রথম ম্যাচে হারার পর গতকাল মাঠে অনুশীলনে টাইগারদের দেখে খুবই আগ্রাসী মনে হচ্ছিল। কারও মুখে হাসি নেই। ক্রিকেটাররা কেবলই যেন দাঁত-মুখ খিচে প্রাকটিস করে যাচ্ছেন। আজ স্বাগতিক ওমানের বিরুদ্ধে জিততে হলে একাদশের প্রত্যেককেই এক একটি ক্রুজ সুলতান হতে হবে। যারা নিজের কথা চিন্তা না করে দলের জন্য খেলবেন। নিজেকে সম্পূর্ণ উজাড় করে দেবেন। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ, সাকিব, মুশফিক -কিংবা দলের তারুণ্যে উদ্দীপ্ত ক্রিকেটাররা কী পারবেন আজ ওমানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দলের ‘ক্রুজ সুলতান’ হতে?


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর