৩১ অক্টোবর, ২০২১ ০৮:৩০

ভুলে ভুলে হলো ভরাডুবি

মেজবাহ্-উল-হক, দুবাই থেকে

ভুলে ভুলে হলো ভরাডুবি

বাংলাদেশের ম্যাচের দিন শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নাম বদলে মিরপুর শের-ই-বাংলা করলে খুব একটা বোধহয় ভুল হবে না! সেই একই উত্তেজনা। কানায় কানায় ভর্তি লাল-সবুজের সমর্থন। মাঠে সেই চেনা গর্জন। স্টেডিয়ামের বাইরে টিকিটের জন্য হাজারও ভক্তের আকুতি। এমন কি বাইশগজের আচরণ ঠিক একই! উইকেটে হঠাৎ হাঠাৎ বাউন্স। বল লো হয়ে যাওয়া। মিরপুরের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উইকেটের দারুণ মিল। কিন্তু এই পরিচিত কন্ডিশনেও নিজেদের মেলে ধরতে পারলেন না বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে যেন জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যায়। দুটি ক্যাচ মিস এবং তিনটি ওভারের বাজে বোলিংই সব শেষ করে দিয়েছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টাইগাররা দাঁড়াতেই পারেনি। এই আসরে ইংলিশরা যে সুপার পাওয়ার দল, তাদের বিরুদ্ধে জয় আশা করাটাও ছিল বাড়াবাড়ি। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জয়টা তো প্রাপ্যই ছিল। বাংলাদেশ জয়ের পথেই ছিল ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত। কিন্তু তারপরও নিজেদের ভুলে শেষ রক্ষা হয়নি।

শ্রীলঙ্কার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ‘প্রায়’ জিতে যাওয়া ম্যাচে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেল বাংলাদেশের। হ্যাঁ, কাগজে কলমে এখনো বিদায়ঘণ্টা বেজে যায়নি। ক্ষীণ একটা সম্ভাবনা আছে। তাতে অনেক ‘যদি’ ‘কিন্তু’ মিশে আছে। পরের দুই ম্যাচে পরাক্রমশালী দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তো জিততেই হবে, তারপর তাকিয়ে থাকতে হবে সমীকরণের দিকে। তাই ‘কার্যত’ বিশ্বকাপ যে বাংলাদেশর শেষই হয়ে গেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

এবার বাংলাদেশ দল এই সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসেছিল সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে। দারুণ সুযোগও ছিল। সব কিছু বাংলাদেশের অনুকূলেও ছিল। কিন্তু ভুলে ভুলে হয়ে গেল মাহমুদুল্লাহদের ভরাডুবি।

বাংলাদেশের ভুলের সূত্রপাত হয় প্রস্তুতি ম্যাচ থেকেই। দুটি ম্যাচেই শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারার পর সতর্ক হওয়ার দারুণ সুযোগ ছিল। কিন্তু না, প্রস্তুতি ম্যাচের হারকে পাত্তাই দিল না টিম ম্যানেজমেন্ট। ক্রিকেটাররাও সেখান থেকে কোনো শিক্ষা নিলেন না। এর ফলে প্রথম রাউন্ডের প্রথম ম্যাচেই হার।

তবে মজার বিষয় হচ্ছে, স্কটিশদের বিরুদ্ধে হারটা যেন বাংলাদেশের জন্য শাপেবর হয়ে গেল। প্রথম রাউন্ডে বি গ্রুপ থেকে রানার্সআপ হওয়ায় সুপার টুয়েলভে ১ নম্বর গ্রুপে জায়গা করে নিলেন  মাহমুদুল্লাহরা। নতুন ফিকশ্চারে বাংলাদেশের জন্য বাড়তি সুবিধা হচ্ছে, প্রত্যেকটি ম্যাচ দিনে হয়ে গেল। সংযুক্ত আবর আমিরাতে দিবা-রাত্রির ম্যাচে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে ‘ডিউ ফ্যাক্টর’। অর্থাৎ যে দল টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেবে তারা বেশি সুবিধা পাবে। কিন্তু দিনে খেলা পড়ায় ভাগ্যের ওপর ভরসা করতে থাকতে হয়নি।

কিন্তু সব অনুকূলে থাকার পরও নিজেদের ভুলে স্বপ্নের আসর থেকে ছিটকে পড়ছে বাংলাদেশ। সাকিবরা মানসিকভাবে বেশি চাপ নিতে গিয়ে নিজেদের সেরা পারফর্ম প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হলেন। ব্যাটিং ও বোলিং তো ঠিকঠাক হচ্ছেই না, সেই ফিল্ডিংও হচ্ছে যাচ্ছেতাই। একের পর এক ক্যাচ মিস হচ্ছে। স্ট্যাম্পিং মিস হচ্ছে। বাংলাদেশের সেরা ফিল্ডাররাও মাঠে ক্যাচ ছাড়ছেন।

বাংলাদেশ দলের সেরা ফিল্ডারদের মধ্যে একজন লিটন দাস। সেই লিটনই কিনা সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে দুই দুটি ক্যাচ ছেড়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ক্যাচ ছেড়েন আরেক সেরা ফিল্ডার আফিফ হোসেন। ক্যাপ্টেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাত থেকেও সহজ ক্যাচ পড়েছে। সব মিলে এই আসরে এখন পর্যন্ত ৯টি ক্যাচ মিস করেছে।

ক্রিকেটে ক্যাচ মিস মানে যে ম্যাচ মিস তা কে না জানে। এই ক্যাচগুলো নিতে পারলে তিন ম্যাচের মধ্যে অন্তত দুটি জয় থাকতো মাহমুদুল্লাহদের। আর দুই জয় থাকলে তখন সেমিফাইনাল অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যেত। সেখানে এখন স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় ছটফট করছে বাংলাদেশ।

ক্রিকেটে একজন ক্রিকেটারের পারফরম্যান্সের উত্থান-পতন থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যেন একসঙ্গে ফ্লপ করছেন। কারও ব্যাটে রান নেই। আবার কোনো দিন ব্যাটসম্যানরা রান পাচ্ছেন তো ফিল্ডাররা ক্যাচ ফেলে দিচ্ছেন, বোলাররা রান আটকে রাখতে পারছেন না। একের পর এক ভুলের কারণেই স্বপ্নের বিশ্বকাপ এখন হয়ে গেছে দুঃস্বপ্নের আসর!


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর