১৪ জুন, ২০২৪ ০৪:৩৮

এক আইএমইআই নম্বর দিয়ে দেড় লাখ মোবাইল!

অনলাইন ডেস্ক

এক আইএমইআই নম্বর দিয়ে দেড় লাখ মোবাইল!

প্রতীকী ছবি

দেশে শুধু একটি আইএমইআই নম্বরের নিবন্ধন দিয়েই দেড় লাখেরও বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ প্রতিটি মোবাইল ফোনের জন্য ১৫ সংখ্যার একটি স্বতন্ত্র আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টি) নম্বর থাকার কথা।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবি (টেলিকম এন্ড টেকনোলজি রিপোর্টারস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ) আয়োজিত এক সেমিনারে এমন তথ্য তুলে ধরেন মোবাইল অপারেটর রবি’র চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম। 

অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট নিয়ে এমন বিস্ফোরক তথ্য শুনে সেখানে উপস্থিত ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আতকে উঠে বলেন, কী বলেন! এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। 

এ সময় প্রতিমন্ত্রী সেমিনারে উপস্থিত ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের উদ্দেশে বলেন, ‘অবৈধ হ্যান্ডসেট প্রতিরোধ করতে হবে। আমি গোয়েন্দা প্রধানকে বলব, যেন বাজারে থাকা অবৈধ হ্যান্ডসেটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়।’

‘দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওই সেমিনারে শাহেদ আলম বলেন, ‘ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার (এনইআইআর) কার্যকর না হওয়া এবং গ্রে-মার্কেটের কারণে আমাদের জন্য একটি মোবাইল ডিভাইস লকিং গাইড লাইন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই গাইডলাইন কোনো কাজে আসছে না। কেননা এর শর্তগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সাংঘর্ষিক। সেটে থাকা দুটি সিম স্লটের মধ্যে একটি বন্ধ রেখে আরেকটা চালু রাখার ক্ষেত্রে এটা কাজ করছে না।’

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এনইআইআর বাস্তবায়ন করে উজবেকিস্তানে ৭০০ শতাংশ রাজস্ব বেড়েছে। আজারবাইজানের ৯৮ শতাংশ হ্যান্ডসেট এখন নিবন্ধিত হয়েছে। নিবন্ধন জটিলতার কারণে বাংলাদেশে এনইআইআর বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। 

প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, এনইআইআর সিস্টেম আপডেট করবো। এটা এখন একটিভ আছে। সেটা যাতে কোনো নাগরিক নিজেরা চেক করতে পারে সেটি চালু আছে। সচেতনতামূলক বার্তা দেব যে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য তারা রেজিস্ট্রেশন করবেন। বিদেশ থেকে কোনো ফোন নিয়ে আসলে যেন রেজিস্ট্রেশন করেন। আমাদের মোবাইলের রেজিষ্ট্রেশন সিস্টেম এবং কাস্টমস থেকে ট্যাক্স পেইড আমদানিকৃত মোবাইলে ফোনের ডেটাবেজ যেন বিটিআরসিতে সংরক্ষিত থাকে। যাতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ভোক্তা অধিদপ্তর যখনই অভিযানে যাবে তখন যেন ইনস্ট্যান্ট রিয়েল টাইম ভেরিফাই করতে পারে, যাতে করে তারা কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হয়।

পলক বলেন, ‘এনবিআর ডেটাবেজে ঢুকে অনিবন্ধিত ফোন ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে সেই সুযোগ তৈরি করা হবে। পাশাপাশি হ্যান্ডসেট রপ্তানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ক্যাশ ইনসেনটিভ দেব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।

মোবাইল উৎপাদনকারীদের পক্ষ থেকে কর ইনসেনটিভ প্রদান, চোরাই পথে ফোন আসা বন্ধ করার দাবি তোলা হলে এসব বিষয়ে প্রস্তাবনা তৈরি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীকে দেবেন বলে জানান টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী।

ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, দেশে অবৈধ মোবাইল ফোন ছড়িয়ে দেয় যারা তাদের বিরুদ্ধেও ডিবি সারাদেশে কাজ করতে আগ্রহী। এ নিয়ে যখন অভিযান করি, তখন দেখি আপনাদের মতো এমন অফিস বানিয়ে চীনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ এনে তারা এ মোবাইলগুলো বানাচ্ছে। দুই-তিন মাস চালানোর পর তা নষ্ট হয়ে যায়। আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের ধরতে সক্ষম হচ্ছি। যদি সংশ্লিষ্ট খাত থেকে আমাদের সহযোগীতা করা হয়, তাহলে সেটা ঢাকার মধ্যে হোক কিংবা বাইরে- আমরা অপরাধীদের ধরবোই। ইন্ডিয়াতে খুন করলেও আমরা ধরে ফেলি। ওমানে অপরাধ করলেও ধরে আনি।

ডিবি প্রধান বলেন, ‘আমরা প্রায়ই দেখি বিমানবন্দরে লাগেজ পার্টির মাধ্যমে লাখ লাখ মোবাইল ফোন দেশে ঢুকে পড়ে। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কম দামে সেগুলো ভিন্নপথে দেশে আনা হচ্ছে। রাজধানীর মোতালেব প্লাজা, গুলিস্তান পাতাল মার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্কসহ নামীদামি মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে কর ফাঁকির ফোন। মোতালেব প্লাজায় যাবেন, দেখবেন সেখানে একটা আইএমইআই দিয়ে ৫০টা মোবাইল ফোন তৈরি করছে। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদনকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

টিআরএনবির সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, বিটিআরসির মহাপরিচালক মনিরুজ্জামান জুয়েল, বাংলালিংক ডিজিটালের চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, এমটব মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার, টিআরএনবি সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রবিন প্রমুখ।

সেমিনারের শুরুতে দেশের মোবাইল ফোনের উৎপাদন, বাজার পরিস্থিতি, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) সভাপতি জাকারিয়া শহীদ। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর