সোমবার, ১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

যেসব ক্ষেত্রে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে চ্যাট জিপিটি

টেকনোলজি ডেস্ক

যেসব ক্ষেত্রে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে চ্যাট জিপিটি

সাম্প্রতিক সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন নিয়ে আলাপ-আলোচনার বেশ তোড়জোড় চলছে। এ বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে চ্যাটজিপিটি নামের একটি চ্যাটবট। মানুষের বিকল্প হিসেবে চ্যাটজিপিটি কতটা কার্যকরী কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে ওপেন এআই প্রযুক্তি বিস্ময় দেখিয়েছে তা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।

 

চ্যাটজিপিটির সক্ষমতা অনেককেই বিস্মিত করেছে। ২০১৩ সালের ঘটনা; অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা জানিয়েছিল যে, পরবর্তী ২০ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৪৭ শতাংশ চাকরি এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হবে। প্রায় ১০ বছর আগে করা ভবিষ্যদ্বাণীটি এখন অনেকটাই সত্যি হওয়ার পথে। চ্যাটজিপিটি বা এ ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রযুক্তি ভবিষ্যতে অনেক ক্ষেত্রে বিস্ময় দেখাবে।

 

বিজ্ঞাপন, কনটেন্ট তৈরি, টেকনিক্যাল রাইটিং, সাংবাদিকতা : ওপেন এআই প্রযুক্তি বিজ্ঞাপন, কনটেন্ট তৈরি, টেকনিক্যাল রাইটিং, সাংবাদিকতার মতো চাকরিগুলোয় ব্যাপক সক্ষমতা দেখিয়েছে। এসব ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি কনটেন্ট লিখতে, পড়তে এবং বুঝতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনি অনুমান করতে পারেন যে বিশাল পরিমাণ তথ্য বোঝা ও বিশ্লেষণ করার কাজটি ভবিষ্যতে এআই খুব দক্ষতার সঙ্গে করতে পারবে। বিশ্বজুড়ে মিডিয়া শিল্প ইতোমধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতা পরখ করেছে। চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইর সঙ্গে বাজফিড চুক্তি করেছে যাতে গণমাধ্যমটির নানা রকম কনটেন্ট তৈরিতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো যায়।

আইন পেশা : গোল্ডম্যান স্যাকসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আইন পেশায়ও এআই প্রযুক্তি ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন পেশায় কর্মী সংখ্যা কম; তাই এআই প্রযুক্তির মধ্যমে কার্যক্রমগুলো সহজে করা সম্ভব। লিগ্যাল ইন্ডাস্ট্রির লিগ্যাল অ্যাস্টিস্ট্যান্টদের কাজ মূলত নির্দিষ্ট বিষয়ে অনেক তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলোকে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপনযোগ্য করা। এই কাজটি এআই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে খুব ভালোভাবে করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারপরও এআই এ ধরনের সব চাকরিকেই প্রতিস্থাপিত করতে পারবে না, কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো সবসময়ই মানুষের বিচার-বিশ্লেষণ প্রয়োজন হবে। বিশ্লেষকদের মতে, কাজের গতি ও মান বাড়াতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।

শিক্ষকতা : শিক্ষার্থীরা চ্যাটজিপিটির সাহায্যে বাড়ির কাজ করে নিজের নামে চালিয়ে নিতে পারছে। যদিও অনেক শিক্ষকই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে রোচেস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির কম্পিউটিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স বিভাগের সহযোগী ডিন পেংচেং শি মনে করেন, চ্যাটজিপিটি খুব সহজে পাঠদান করতে পারছে। যদিও এটিতে এখনো ত্রুটি এবং সীমাবদ্ধতা আছে। আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে এই সীমাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব। তবে বিশেষজ্ঞরা জানান, শিক্ষার মতো মহান পেশায় শিক্ষকদের প্রয়োজন সবসময়ই থাকবে এবং সামনাসামনি শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই মানুষের সংশ্লিষ্টতার প্রয়োজন আছে।

ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট : ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট, ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার এবং এ ধরনের চাকরিগুলোয় অনেক তথ্য নিয়ে কাজ করতে হয়। ফলে এ ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে অদূর ভবিষ্যতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এআই খুব সহজেই বাজারের প্রবণতা বুঝতে পারবে, কোন বিনিয়োগটি ভালো করছে আর কোনটি খারাপ করছে, সহজেই তা বের করতে পারবে এবং তথ্য বিশ্লেষণ করে বলে দিতে পারবে কীভাবে এবং কোথায় বিনিয়োগ করলে সফলতার সম্ভাবনা বেশি।

ট্রেডার্স : বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ওয়াল স্ট্রিটের মতো স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর ট্রেডিং থেকে শুরু করে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং- সবই এআই টুলের সাহায্যে করা সম্ভব হতে পারে। এসব কাজের কিছু কিছু স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে। ফলে এখন যারা এসব তথ্য নিয়ে কাজ করছেন, তারা তাদের জ্ঞান অন্যত্র কাজে লাগাতে পারবেন। বিনিয়োগ ব্যাংকগুলো শিক্ষার্থীদের নিয়োগ করে এবং তারা ২-৩ বছর ধরে রোবটের মতো বিশাল তথ্য-উপাত্ত এক্সেলে বিশ্লেষণ করে বিজনেস মডেল তৈরি করে। এই কাজটি ভবিষ্যতে এআইর সাহায্যে সহজেই করা যাবে।

গ্রাফিক ডিজাইন : হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ডাল-ই নামক একটি এআই ইমেজ জেনারেটর টুল গ্রাফিক ডিজাইন ইন্ডাস্ট্রিতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। ডাল-ই তৈরি করেছে ওপেনএআই। এই টুলটি লিখিত নির্দেশনা থেকে যে কোনো বিষয়ের ছবি তৈরি করে দিতে পারে। সেখানে আরও বলা হয়, লাখ লাখ মানুষ যখন নিজেরাই ছবি তৈরি করতে পারবে তখন এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। কিন্তু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ড. কার্ল বেনেডিক্ট ফ্রে মনে করেন, চ্যাটজিপিটির মতো টুলগুলো গ্রাফিক ডিজাইনের মতো সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রগুলোতে কর্মীদের আরও মানসম্পন্ন কাজ প্রদানে সহায়তা করবে।

হিসাবরক্ষক : অ্যাকাউন্টিং বা হিসাবরক্ষণ কাজকে মোটামুটি স্থিতিশীল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ খাতেরও এখন এআই প্রযুক্তির জয়জয়কার। ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোর কমিউনিকেশন, কালচার, ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ব্রেট কারাওয়ে বলেন, প্রযুক্তি এখনো সবার চাকরি কেড়ে নেয়নি। কিন্তু এটি কিছু কিছু মানুষের চাকরি কেড়ে নেবে। আইনজীবী এবং হিসারক্ষকরাও এর অন্তর্ভুক্ত।

সর্বশেষ খবর