মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

কীভাবে বেছে নেবেন ভালো ক্যামেরা ফোন?

টেকনোলজি ডেস্ক

কীভাবে বেছে নেবেন ভালো ক্যামেরা ফোন?
ভালো ছবি তোলা কিংবা ভালো মানের ভিডিও রেকর্ড করার জন্য অনেকেই সর্বোত্তম স্মার্টফোন ক্যামেরা খোঁজেন। আবার বাজেটও অনেক ক্ষেত্রে মুখ্য বিষয়। তাহলে স্বল্প বাজেটে সুন্দর ফটোগ্রাফি হবে এমন স্মার্টফোন কী কী দেখে কেনা উচিত...

ছবির দুনিয়ায় বিপ্লব এনে দিয়েছে ফোনের ক্যামেরা। ব্যক্তিগত মুহূর্ত হোক কিংবা সামাজিক ঘটনা- সবকিছুই সরাসরি চলে যাবে ডিজিটাল আর্কাইভে। সেক্ষেত্রে দরকার ভালো ছবি তোলা কিংবা ভালো মানের ভিডিও রেকর্ড করার মোবাইল ক্যামেরা। তবে কোন ফোনে মিলবে ভালো ক্যামেরা তা নিয়ে অনেকেই রীতিমতো চিন্তায় থাকেন। আজকাল স্মার্টফোন ক্যামেরা উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ আরও কৌতূহলী হয়ে উঠছে যে, ভালো ক্যামেরা ফোন কী কী দেখে কেনা উচিত? জানব সেসব তথ্য...

সেন্সর : সেন্সর হলো ক্যামেরার অন্তর, ঠিক যেমন প্রসেসর হলো স্মার্টফোনের! সেন্সর যদি ছবি তোলার জন্য চমৎকার কাজ করে তবেই আপনি পাবেন সেরা ফটোগ্রাফি। তবে এটি নির্ভর করে এর আকারের ওপর। সাধারণত ক্যামেরার সেন্সরে আলো পৌঁছানোর পর সেটি বৈদ্যুতিক সিগন্যালে পরিণত হয়। পরে তা ডিজিটাল ছবিতে রূপান্তরিত করে। এ ক্ষেত্রে সিগন্যালটি স্পষ্ট না হলে ছবিতে প্রচুর নয়েস (দানার মতো দাগ) তৈরি হয়। কম আলোয় ছবি তুললে এমনটা হয়। তাই বড় সেন্সরের ক্যামেরা বেছে নেওয়া উচিত। অর্থাৎ সেন্সরের আকার যত বড়, ছবির মানও তত ভালো।

পিক্সেল সাইজ : ক্যামেরা যত বেশি মেগাপিক্সেল, ছবি তত ভালো আসবে- এ কথার কোনো ভিত্তিই নেই। কারণ একটা ফোনে ২০০ বা ১০৮ মেগাপিক্সেল হোক, তার চেয়ে ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার ফোন আরও ভালো পারফরমেন্স দিতে পারে। দেখতে হবে সেন্সরের আকার কত বড়। ১২ মেগাপিক্সেলের অনেক ক্যামেরায় ১০৮ মেগাপিক্সেলের চেয়ে বড় সেন্সর থাকতে পারে এবং সেটাই ভালো ফটোগ্রাফির জন্য বেশি কার্যকর। অর্থাৎ যত বড় সেন্সর, ক্যামেরাটি তত বেশি আলো ক্যাপচার করবে, ছবি ভালো আসবে।

অ্যাপারচার : অনেকে ক্যামেরা কত মেগাপিক্সেল সেটা দেখে ফোন কেনেন, কিন্তু তার অ্যাপারচার কত সেটা খেয়াল করেন না। সাধারণত স্মার্টফোনে ক্যামেরার নিচে অথবা বক্সের গায়ে লেখা থাকে অ্যাপারচার এফ ১.৮ অথবা এফ ২.০। এ সংখ্যাটা যত কম হবে, অ্যাপারচারের আকার তত বড় বুঝতে হবে। আর আকার যত বড় হবে বাইরে থেকে আলো তত বেশি আসবে এবং সেই আলো ক্যাপচার করে একটি ভালো ছবি আপনাকে দিতে পারবে।

ক্যামেরার সংখ্যা : একটা ভালো ক্যামেরা ফোন বুঝাতে কোম্পানি নানা প্রচারণা করে থাকে। তিনটি থেকে শুরু করে সাত-আটটি পর্যন্ত ক্যামেরা বসিয়ে দেয়। অথচ এতগুলো ক্যামেরার দরকারই নেই। ভালো ফটোগ্রাফির জন্য ম্যাক্সিমাম তিনটি ক্যামেরা দরকার। একটি হলো- ‘প্রাইমারি সেন্সর’, যেটা ভালো হতেই হবে। দ্বিতীয়টি হলো-‘আলট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স’। এ লেন্সটা যত বেশি মেগাপিক্সেল হবে, ন্যূনতম ১২ মেগাপিক্সেল হলে তাতে ছবির ডিটেইলস বেশি থাকবে। আর তৃতীয় ক্যামেরাটি হতে হবে ‘টেলিফটো জুম লেন্স’। এ লেন্স পোট্রেট ছবির জন্য দরকার। তাই ফোন কেনার আগে এটি যাচাই করে নিন।

ওআইএস  : স্মার্টফোনের ক্যামেরায় অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার (ওআইএস) আছে কি না সেটা যাচাই করে নিন। এটা শুধু ভিডিওর কাজে লাগে না, নাইট ফটোগ্রাফিতে দুর্দান্ত কাজ করে। কারণ, আমরা যখন ফটো তুলি তখন স্বাভাবিকভাবেই হাত একটু কেঁপে যায় আর সেটা নাইট ফটোগ্রাফিতে অনেক প্রভাব ফেলে। অনেক কোম্পানি ক্যামেরায় ওআইএস না দিয়ে ইলেকট্রনিকস ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার (ইআইএস) দিয়ে দেয়। যেটি ভিডিও ফুটেজকে সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রসেসিং করে। কিন্তু তবুও ইআইএস কখনো ওআইএসের মতো পারফর্ম করতে পারে না। তবে দামি ফোনের ক্ষেত্রে ইআইএস ফ্রেম ক্রপ করে ভালো ভিডিও করে দিতে পারে, কিন্তু কম দামি বা মিডরেঞ্জের ফোনের ক্ষেত্রে এটি ততটা কার্যকর না।

প্রো অথবা ম্যানুয়াল মুড : ভালো ক্যামেরা বোঝার জন্য অনেক সময় আমরা অনেক ফিল্টার আছে কি না তা দেখি। কিন্তু আসলে দেখা উচিত ক্যামেরায় প্রো বা ম্যানুয়াল মুড আছে কি না। এটার ব্যবহার শিখে গেলে আপনি দারুণ সব ছবি তুলতে পারবেন ফিল্টার ছাড়াই।

এফপিএস : আজকাল বিভিন্ন কোম্পানি গিমিকের জন্য ১২০ এফপিএস, ২৪০ এফপিএসে ভিডিও রেকর্ড করা যাচ্ছে বলে বিজ্ঞাপন দেয়। আসলে ওগুলো কোনো কাজের না। ভালো ভিডিও পেতে ফোরকে ৩০ অথবা ফোরকে ৬০ এফপিএসে ভিডিও রেকর্ড করার সুবিধা দিচ্ছে কি না এমন স্মার্টফোন দেখে নেবেন। এটি থাকলে ঝকঝকে ডিটেইলস ভিডিও পাওয়ার পাশাপাশি এডিটিং করতে পারবেন।

প্রসেসর : সবচেয়ে শেষে যে বিষয়টি খেয়াল করতে হবে, সেটা হলো- প্রসেসর। আপনার ফোনের প্রসেসর যত ভালো হবে, ছবি ও ভিডিও প্রসেসিং করার ক্ষমতা তত ভালো হবে। তাই বাজার যাচাই করে সবচেয়ে লেটেস্ট এবং ভালো মানের প্রসেসর দেখে স্মার্টফোন কেনার চেষ্টা করবেন। তাহলেই দুর্দান্ত সব ছবি আর ভিডিও পাবেন।

শাটার স্পিড : ক্যামেরার লেন্স একটি ছবি তুলতে কতখানি সময় নেয় তা শাটার স্পিড দিয়ে বুঝানো হয়। শাটার স্পিড যত বেশি হবে ততক্ষণ শাটার খোলা থাকবে এবং আরও অধিক আলো লেন্সে প্রবেশ করবে।

ডুয়াল-টোন ফ্ল্যাশ : ডিজিটাল ক্যামেরায় ফ্ল্যাশ ব্যবহার করে তোলা ছবিতে সব কিছুর রং বাস্তবসম্মত দেখায়। তবে ফোনের সাদা এলইডি ফ্ল্যাশে তোলা ছবিতে রং কিছুটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সমস্যাটা দূর করতে স্মার্টফোন নির্মাতারা দুটি ভিন্ন রঙের এলইডি ব্যবহার করে ফ্ল্যাশ তৈরি করছেন, যাতে ছবির রংও সঠিক আসে। একেই সাধারণত ডুয়াল-টোন ফ্ল্যাশ বলা হয়।

ফেজ ডিটেকশন ও লেজার অটোফোকাস : প্রাথমিকভাবে যখন প্রথম অটোফোকাস ফিচারটি ফোনে যোগ হয় তখন সেটি সাবজেক্ট ও ব্যাকগ্রাউন্ডের মধ্যকার ঔজ্জ্বল্য এবং রঙের তারতম্য (কন্ট্রাস্ট) বুঝে ফোকাস ঠিক করত। তবে এতে ছবি তোলার গতি কমে যেত। সঠিকভাবে ফোকাস করতেও সমস্যা হতো। সেটিকে সাহায্য করতে প্রথমে আনা হয় ফেজ ডিটেকশন, যা মূলত ক্যামেরার ঠিক মাঝখানের সঙ্গে কিনারার আলোর তারতম্য ব্যবহার করে ফোকাস করে থাকে। এতে সময় নেমে আসে অর্ধেকে। এরপর লেজার অটোফোকাস। ফলে এখনকার ফোনগুলো নির্ভুলভাবে দ্রুত সময়ে ফোকাস করতে সক্ষম।

সর্বশেষ খবর