শনিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিজনেস ল্যাপটপ এবং সাধারণ ল্যাপটপের মধ্যে পার্থক্য

বিজনেস ল্যাপটপ এবং সাধারণ ল্যাপটপের মধ্যে পার্থক্য
দ্রুততর প্রসেসর, বৃহত্তম র‌্যাম ও বৃহত্তর স্টোরেজ ক্ষমতাসহ বিজনেস ল্যাপটপগুলো ভারি অ্যাপ্লিকেশন চালাতে ভীষণ পক্ব। তবে সাধারণ ল্যাপটপগুলো এটি থেকে খানিকটা পিছিয়ে...

করোনাভাইরাস মহামারি বেশির ভাগ কর্মীদের অনলাইনে অফিস এবং শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে বাধ্য করেছে। ফলে বৈশ্বিক নতুন বাস্তবতায় ওয়ার্ক ফ্রম হোম এবং অনলাইন ক্লাসের জন্য, বাজারে দ্রুত ল্যাপটপের বিক্রি বেড়ে যায়। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্যমতে, মহামারির প্রথম বছরে ল্যাপটপ বিক্রি ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং তার ধারাবাহিকতা পরের বছরগুলোতেও অব্যাহত রয়েছে। তবে অনেকেরই জানা নেই, প্রচলিত ল্যাপটপগুলোর মধ্যে বিজনেস ল্যাপটপ, আর সাধারণের ব্যবহারের জন্য আলাদা ল্যাপটপ রয়েছে। তবে বিজনেস ল্যাপটপ এবং সাধারণ ল্যাপটপগুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি না এমনকি এগুলোর ফিচারগুলো সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকা প্রয়োজন! আজ জানব সেসব...

 

বিজনেস ল্যাপটপ কী?

সাধারণত কোম্পানির ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বিজনেস ল্যাপটপ ডিজাইন করা হয়। প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতারা সাধারণ ল্যাপটপের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এবং অত্যাধুনিক ফিচার যুক্ত করে এ ধরনের ল্যাপটপগুলো তৈরি করে থাকেন। ফলে ব্যাটারি লাইফ এবং সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কর্ম সম্পাদনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ল্যাপটপগুলো আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং ভিডিও কনফারেন্সের চাহিদাকে মাথায় রেখে ল্যাপটপগুলোর ব্যাটারি লাইফ, গতি এবং সামর্থ্য বিবেচনায়, নির্মাতা সংস্থাগুলো ল্যাপটপে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়েছেন।

 

বিজনেস বনাম সাধারণ ল্যাপটপ

বিজনেস ল্যাপটপ এবং সাধারণ নোটবুক ল্যাপটপের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হলো-

 

কর্মদক্ষতা কিংবা সক্ষমতা :

যে কোনো ল্যাপটপ কেনার আগে- শক্তি-সামর্থ্য এবং কর্মক্ষমতা বিবেচনায় নেওয়া হয়। বিজনেস ল্যাপটপগুলো উচ্চ-ক্ষমতার হয়ে থাকে। অনেক সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে বিসনেজ ল্যাপটপ আলাদা পরিচয় বহন করে। কেননা- বৃহত্তর র‌্যাম ক্ষমতা, বিশাল স্টোরেজ এবং দ্রুততম প্রসেসর। কোনো সমস্যা ছাড়াই এ ধরনের ল্যাপটপের ভারী অ্যাপ্লিকেশন চালানোর সক্ষমতাও রয়েছে। এই উন্নত বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে বিজনেস ল্যাপটপগুলো তাদের সমকক্ষের তুলনায় অনেক ভালো।

 

বিজনেস ল্যাপটপ দীর্ঘস্থায়ী হয় :

নির্মাতা কোম্পানিগুলো যখন ল্যাপটপ ডিজাইন করে, তখন তারা ধরেই নেন যে, ক্রেতারা ঘন ঘন সফটওয়্যার আপগ্রেড করবেন। এমনকি গ্রাহকদের সাধারণ ল্যাপটপ বিজনেস ল্যাপটপের মতো কঠিন হবে না। উভয় ধারণাই বিজনেস এবং সাধারণ ল্যাপটপ তৈরিকে প্রভাবিত করে। বিজনেস ল্যাপটপ দীর্ঘমেয়াদি, অর্থাৎ সারা দিন ব্যবহারের জন্য নির্মিত হয়। এই ল্যাপটপের ডিজাইনেও বেশি পরিবর্তন দেখা যায় না। দৃষ্টিনন্দন ডিজাইনগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ল্যাপটপগুলোকে সহজ করে তোলে এবং বদলযোগ্য ব্যাটারি ডিভাইসগুলোর সামগ্রিক আয়ু বাড়ায়। অর্থাৎ বিজনেস ল্যাপটপগুলোর টেকসই হয়; পানি-ধুলো প্রতিরোধী হয়। অন্যদিকে সাধারণ ল্যাপটপগুলো সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তৈরি হয় না।

 

সাধারণ ল্যাপটপের অনন্য ডিজাইন :

সাধারণ ল্যাপটপ বিজনেস ল্যাপটপগুলোর চেয়ে দেখতে সুন্দর। এ ধরনের ল্যাপটপে উজ্জ্বল, চকচকে ডিসপ্লে এবং কিবোর্ড থাকে। ঐতিহাসিকভাবে এ ধরনের ল্যাপটপগুলোয় প্রশস্ত টাচপ্যাড এবং ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা এগুলোকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে। আজকাল বিজনেস ল্যাপটপগুলোয় সাধারণ ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেটগুলোর বৈশিষ্ট্য যুক্ত করেছে। ডেল এবং লেনোভোর ল্যাপটপ কম্পিউটারগুলো তাদের মধ্যে অন্যতম।

 

বিজনেস ল্যাপটপগুলোর কনফিগারেশন :

নির্মাতারা ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে বিজনেস ল্যাপটপের লাইন ডিজাইন করে থাকেন। ফলস্বরূপ অনেক বিজনেস ল্যাপটপে নানা রকমের কনফিগারেশন দেখা যায়। যদিও সাধারণ ল্যাপটপগুলো কাস্টম স্পেকের সুযোগ প্রদান করতে পারে। বাড়তি স্টোরেজ বা হাই কনফিগারেশনের বিজনেস ল্যাপটপগুলো কাস্টমস বা বিকল্প অপশন দেয় না। ডেল এবং লেনোভো নিঃসন্দেহে কাস্টমাইজেশনের ক্ষেত্রে কম্পিউটার জগতে সেরা, তারা ক্রেতাদের প্রসেসর, ব্যাটারি এবং কিবোর্ড ব্যাকলাইটিং ইত্যাদি নির্বাচনের নানা অপশন দেয়।

 

বিজনেস ল্যাপটপ নিরাপত্তার জন্য তৈরি :

বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার বিজনেস ল্যাপটপের জন্য অসাধারণ- এমনকি এন্ট্রি-লেভেল মডেলগুলোও; যদিও তা এখনো সাধারণ ল্যাপটপের জন্য তুলনামূলক বিরল। বিজনেস ল্যাপটপগুলো সাধারণত সফটওয়্যার দিয়ে তৈরি, যা ডিভাইসগুলো পরিচালনা এবং নিরাপত্তাকে সহজ করে তোলে। আপাতত কোম্পানির জন্য বিজনেস ল্যাপটপে লেগে থাকা ভালো। এগুলোয় প্রায়শ অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার এবং ঐচ্ছিক নিরাপত্তা সাবস্ক্রিপশন অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং অনেকে ছোট কোম্পানির জন্য প্রযুক্তি সহায়তা প্রদান করে।

 

সাধারণ ল্যাপটপে অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার :

বিজনেস ল্যাপটপগুলো প্রি-ইনস্টল সফ্টওয়্যারের সুবিধা রয়েছে। তবে এ ধরনের ল্যাপটপ নির্মাতারা ডিভাইসকে বেশি ভারী করতে চান না। বেশির ভাগ ল্যাপটপ নির্মাতা সংস্থারা তাদের আইটি কর্মীদের অত্যধিক সফটওয়্যার ব্যবহারে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে সাধারণ ল্যাপটপগুলোয় আগে থেকে ইনস্টল করা সফটওয়্যার দিয়ে লোড করা থাকে।

 

দামের পার্থক্য :

বিজনেস ল্যাপটপের ব্যাটারি লাইফ, গতি এবং সামর্থ্য বিবেচনায় মূল্য বেশি হয়ে থাকে। তবে তা নির্ভর করে ল্যাপটপের বৈশিষ্ট্য ও মডেলের ওপর। অতিরিক্ত স্টোরেজ বা ব্যান্ডউইথ-সহ নোটবুক কম্পিউটার হলে দাম বাড়বে। অন্যদিকে ব্যান্ডউইথসহ কিন্তু বাড়তি স্টোরেজের প্রয়োজন নেই, তাহলে দাম কমবে। তবে দামি ল্যাপটপ মানেই যে সব ব্যবসায়িক চাহিদা পূরণ করবে এমনটিও নয়। কিছু সাধারণ ল্যাপটপ বিশেষত যেগুলো গেমিংয়ের জন্য তৈরি, সেগুলো বেশ ব্যয়বহুল হতে পারে। বিজনেস ল্যাপটপের ক্ষেত্রে সস্তা মূল্যে ঝুঁকবেন না। অন্যদিকে দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারের জন্য ব্যাটারিতে নজর দিন।

পরিশেষে বিজনেস ল্যাপটপের নানা গুণাবলি রয়েছে, যা সাধারণ ল্যাপটাগুলো দিতে পারে না। যেমন- উন্নত কর্মক্ষমতা, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি, অত্যাধুনিক ডিসপ্লে, উচ্চ-মানের কি-বোর্ড এবং ভালো ওয়ারেন্টি কভারেজ। আরও আছে নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য; যা ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য আদর্শ।

তথ্যসূত্র : বিজনেস নিউজ ডেইলি

সর্বশেষ খবর