শনিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

গেল বছরে মহাকাশে মানুষের সাফল্য

গেল বছরে মহাকাশে মানুষের সাফল্য

মহাকাশে পর্যটন ব্যবসা

২০২৩ সালের মে থেকে অ্যাক্সিয়ম-২ এর হাত ধরে মহাকাশ পর্যটন শুরু হয়। সেবার নাসার প্রাক্তন মহাকাশচারী পেগি হুইটসন এবং তিনজন গ্রাহক আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ভ্রমণ করেন। তবে ভ্রমণের জন্য প্রতি আসনের জন্য খরচ ৫৫ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, ব্রিটিশ ধনকুবের রিচার্ড ব্র্যানসন মহাকাশ পর্যটনের জন্য ভার্জিন গ্যালাকটিক নামে আরেকটি উদ্যোগ চালু করেছেন। ২০২৩ সালে ভার্জিন গ্যালাকটিক সাব-অরবিটাল রকেট-চালিত মহাকাশ বিমানের মাধ্যমে মহাকাশের প্রান্তে ছয়টি ভ্রমণ করেছে। এ আসনের জন্য খরচ করতে হবে ৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এদিকে, জেফ বেজোসের মহাকাশ পর্যটন সংস্থা ব্লু অরিজিনও তাদের সাব-অরবিটাল রকেট সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে।

 

এক বছর মহাকাশে নভোচারী

নাসার নভোচারী ফ্রাঙ্ক রুবিওর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ছয় মাস কাটানোর কথা ছিল। কক্ষপথে যাতায়াতের জন্য তিনি রাশিয়ান সয়ুজ মহাকাশযানে ছিলেন। তবে যানটির একটি কুল্যান্ট ফুটো হয়ে গেলে রাশিয়াকে আরেকটি যান পাঠাতে হয়। এ কারণে রুবিওর ফিরে আসতে ছয় মাস বিলম্বিত হয়। ৩৭১ দিন মহাকাশে কাটানোর পর অবশেষে সেপ্টেম্বরে পৃথিবীতে পা রাখেন তিনি। যা তাকে এনে দেয় মার্কিন নভোচারীদের মধ্যে মহাকাশে একটানা সর্বোচ্চ সময় কাটানোর রেকর্ড। তবে রুবিওকে নিয়ে হালকা কেলেঙ্কারিও ঘটে গেছে। কক্ষপথে জন্মানো প্রথম টমেটোগুলোর মধ্যে একটি হারিয়ে যায়, তিনি নাকি সেটি ছিঁড়ে খেয়ে ফেলেছিলেন বলে মনে করেন অনেকে। পরে অবশ্য মূল্যবান টমেটো খুঁজেও পাওয়া গেছে।

 

স্পেসএক্সের মার্স রকেট বিস্ফোরণ

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট উৎক্ষেপণ করেছে স্পেসএক্স। তবে দুই বারের প্রচেষ্টা বিফলে গেছে। বিস্ফোরিত হয়েছে রকেটগুলো। প্রথমবারের মতো মঙ্গল গ্রহে মানুষ নেওয়ার জন্য স্টারশিপ নামের একটি রকেট এবং মহাকাশযান চালু করেছে স্পেসএক্স। এপ্রিলে প্রথম প্রচেষ্টায় রকেটটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকলে স্পেসএক্স এটিকে ধ্বংস করে দেয়। নভেম্বরে দ্বিতীয় যানটি আরও অনেক দূর পর্যন্ত গিয়েছিল।

কিন্তু মহাকাশযান ও রকেট বুস্টার উভয়ই শেষ পর্যন্ত বিস্ফোরিত হয়। তবে পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের দুর্ঘটনাগুলো যে স্পেসএক্সের জন্য বড় বিপত্তি এমনটিও নয়। কেননা তারা রকেট উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে এরকম ব্যর্থতার জন্য পরিচিত। ২০২৫ সালের মধ্যে স্পেসএক্স নাসার জন্য চাঁদে মহাকাশচারী পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি, ইলন মাস্ক আশা করছেন ২০২৯ সালের মধ্যে মানুষকে মঙ্গলে পৌঁছে দেবে স্টারশিপ।

 

চাঁদে অবতরণের প্রতিযোগিতা

চাঁদে অবতরণ নিয়ে আবার নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তবে এবারের অংশগ্রহণকারীরা সবাই রোবট। প্রতিযোগিতাটি শুরু হয় এপ্রিলে, যখন জাপানের আইস্পেস তাদের প্রথম বাণিজ্যিক যান হাকুটো-আর ল্যান্ডারকে চাঁদে অবতরণের চেষ্টা করে। যদিও শেষ পর্যন্ত অবতরণে সময় সেটি ধ্বংস হয়ে যায়। রাশিয়ার স্পেস এজেন্সিও (রসকসমস) আগস্টে তাদের লুনা-২৫ মিশনটি সফলে ব্যর্থ হয়। এর কিছুদিন পরই ২৩ আগস্ট ভারতের মহাকাশ সংস্থা (ইসরো) চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করায়। অপরদিকে, জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সিও চাঁদে অবতরণের উদ্দেশে একটি মহাকাশযান পাঠিয়েছে।

 

নাসা প্রকাশিত প্রথম ইউএফও রিপোর্ট

অজ্ঞাত অস্বাভাবিক ঘটনা অধ্যয়নের জন্য নাসা একটি বিশেষজ্ঞের দল গঠন করে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে। দলটি মূলত আন-আইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট (ইউএফও) নিয়ে অধ্যয়ন করছে। দলটি জানায়, অনেক বিশ্বাসযোগ্য প্রত্যক্ষদর্শী এবং প্রায়শ সামরিক পাইলটরা আকাশে এমন সব বস্তু দেখেছেন, যেগুলো তারা চিনতে পারেননি। যদিও বেশির ভাগ ঘটনার রহস্য সমাধান হয়েছে। কিন্তু কিছু ঘটনা পরিচিত মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবে সঙ্গে সঙ্গে চিহ্নিত করা যায়নি।

 

আবার চাঁদে পা ফেলবে মানুষ

পাঁচ দশক পর চার মহাকাশচারী আবার চাঁদের বুকে পা ফেলবে বলে জানিয়েছে নাসা। ২০২৩ সালের এপ্রিলে তারা আর্টেমিস ২ মুন মিশনটি সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে এবং নভোচারীদের বাছাই করে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে এটি টেক-অফের জন্য প্রস্তুত হবে বলে জানানো হয়। বলা হচ্ছে, এই যাত্রার পরের গন্তব্য হবে মঙ্গল গ্রহ। আর্টেমিস ২ মিশনের একটি লক্ষ্য হচ্ছে, চাঁদে একটি স্থায়ী ফাঁড়ি স্থাপন। যেখানে নভোচারীরা থাকতে এবং কাজ করতে পারবেন।

 

অসিরিস-রেক্সের বিশেষ ডেলিভারি

২০২৩ সালে একটি মহাকাশযান পৃথিবীতে মহাকাশ থেকে গ্রহাণুর টুকরো নিয়ে আসে। নাসার অসিরিস-রেক্স ক্যাপসুল মহাকাশের গ্রহাণু থেকে পাথর, ধূলিকণাসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে থাকে। ২০২০ সালে বেন্নু নামক গ্রহাণু থেকে সফলভাবে একটি নমুনা সংগ্রহ করে ক্যাপসুলটি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ক্যাপসুলটি উটাহ মরুভূমিতে অবতরণ করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি মহাজাগতিক ধাঁধায় ফেলে দেয়। ক্যাপসুলটির নিয়ে আসা সম্পদগুলো বিজ্ঞানীদের ধারণার বাইরে ছিল।

তথ্যসূত্র : সিএনএন

সর্বশেষ খবর