শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

এআই কোড জেনারেশন সিস্টেম

টেকনোলজি ডেস্ক

এআই কোড জেনারেশন সিস্টেম

কোডের মধ্যে কোনো ভুল বা নিরাপত্তার জন্য হুমকি- এমন কিছু আছে কি না সেটা স্ক্যান করার এআই সেবা ‘ডিপকোড’। সাইবার নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে তৈরি এআই মডেল ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে ডিপকোড, কোড পরীক্ষা করার পাশাপাশি অটো কমপ্লিট বা নতুন কোডের সাজেশনও দিতে সক্ষম ডিপকোড।

গত এক বছরের কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, এআই ব্যবহার করে সফটওয়্যার নির্মাতারা কাজের গতি প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পেরেছেন। ডেভেলপাররা সব সময়ই কাজে আটকে গেলে ‘স্ট্যাকওভারফ্লো’-এর মতো ফোরামের শরণাপন্ন হয়ে আসছেন, সেই জায়গাটি এআই কোড জেনারেশন সিস্টেম দখল করেছে।

গিটহাব কোপাইলট : জিপিটি৩ ও ৪ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে জনপ্রিয় কোড হোস্টিং সেবা গিটহাব তৈরি করেছে ‘কোপাইলট’। সেবাটিকে প্লাগইন হিসেবে আইডিইতে যুক্ত করে নিলে, কোড লেখার সময় সেটার কিছু অংশ লেখার পর বাকিটা অটো কমপ্লিট করা যাবে। অটো কমপ্লিটের পাশাপাশি সেবাটি ব্যবহারের জন্য অবশ্যই থাকতে হবে কোপাইলট সাবস্ক্রিপশন, আর প্লাগইনটি আপাতত শুধু ভিজ্যুয়াল স্টুডিওতেই কাজ করবে। বর্তমানে সেবাটি মূলত জাভা কোডিংয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজের হলেও, ধীরে ধীরে পাইথন ও অন্যান্য জনপ্রিয় ল্যাঙ্গুয়েজেও কোপাইলট পারদর্শী হয়ে উঠবে। কোড অটো কমপ্লিটের পাশাপাশি ফ্রেমওয়ার্ক, ফাংশন তৈরি এবং সাজেশনের কাজও করতে পারে কোপাইলট। যারা জাভা নিয়ে কাজ করে তাদের জন্য এটি আদর্শ।

ট্যাবনাইন : গিটহাব কোপাইলটের আদলে তৈরি করা হয়েছে ‘ট্যাবনাইন কোড কমপ্লিশন’ টুল। জাভার পাশাপাশি অন্যান্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এবং প্রচলিত সব আইডিইতে ব্যবহারযোগ্য ট্যাবনাইন, ফলে এর মধ্যেই সেবাটি হয়ে উঠেছে জনপ্রিয়। এলজি, অ্যাকসেনঞ্চর বা স্যামসাংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে ট্যাবনাইনকে কাজে লাগাতে শুরু করেছে। প্রোগ্রামের শুরুর দিকের অংশ দেখে বাকি কোড তৈরি করে দিতে পারে ট্যাবনাইন। শুধু তাই নয়, ফাংশনের ডিক্লারেশন দেখে সেটার বাকি অংশ লিখে নিতে পারে নিজ থেকেই, আর কোডের কমেন্ট পড়ে অ্যাপের বাকি অংশের কোড ব্লক তৈরি করে দিতেও সক্ষম এটি। সবচেয়ে বড় বিষয়, ট্যাবনাইনের বেসিক ফিচার ব্যবহার করা যাবে বিনামূল্যে আর প্রফেশনাল টুলসের মাসিক খরচও খুবই কম।

আলফাকোড : গুগলের ডিপমাইন্ড প্রজেক্টের ফসল ‘আলফাকোড’, যার দ্বিতীয় সংস্করণ নিয়ে বর্তমানে কাজ চলছে। গুগলের জেমিনি এআই মডেলের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এই কোডিং সিস্টেম বেশ কিছু প্র্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে কাজ তো করতে পারেই, আলফাকোডের মধ্যে আছে হাজারো বিল্ট-ইন লাইব্রেরি। সেগুলো কাজে লাগিয়ে বাকি সব কোডিং সিস্টেমের চেয়ে বহুগুণ দ্রুত কোড লেখা সম্ভব। গুগলের মূল লক্ষ্য ছিল আলফাকোডকে যত দূর সম্ভব নির্ভুল কোড জেনারেশনের জন্য তৈরি করা। এখন পর্যন্ত আলফাকোড সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত নয়। আলফামাইন্ডকে কোডিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করিয়ে গুগল এখনো এটিকে ট্রেনিং দিয়েই যাচ্ছে। আগামী বছরের শুরুর দিকে গুগল জেমিনি আলট্রা সেবার অংশ হিসেবে আলফাকোড উন্মোচনের সম্ভাবনা আছে।

চ্যাটজিপিটি (জিপিটি৪) : চ্যাটজিপিটি এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় এআই সেবা, কোডিংয়ের জন্য তো বটেই। জিপিটি ৩, ৩.৫ এবং জিপিটি-৪ সব মডেল কাজে লাগিয়েই তৈরি করা যায় যেকোনো কোড। এর মধ্যে জিপিটি ৩-এর লেখা কোড সবচেয়ে নির্ভুল, যদিও তার জ্ঞানের পরিধি ‘জিপিটি-৪’-এর চেয়ে অনেক কম। চ্যাটের মাধ্যমে কী ধরনের কোড দরকার, সেটা বুঝিয়ে দিলে কোড জেনারেট করা যাবে, আবার ভুল কোড সংশোধনীর কাজেও চ্যাটজিপিটি পারদর্শী। জেনারেট করা কোড আরও রিফাইন করা থেকে অন্য ল্যাঙ্গুয়েজে ট্রান্সলেটের কাজও করতে পারে চ্যাটজিপিটি। সমস্যা একটাই, চ্যাটজিপিটির লেখা কোডে ভুলের পরিমাণ এখনো তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। তাই চ্যাটজিপিটির লেখা কোড আবারও ডিবাগ করা লাগতে পারে। নতুন প্রোগ্রামারদের জন্য চ্যাটজিপিটি বেশি কাজের, একটি কাজের জন্য কীভাবে কোড লেখা শুরু করা যেতে পারে, সেটা সহজেই দেখিয়ে দিতে পারে চ্যাটজিপিটি। এই সেবাটিও বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাবে, আর প্রিমিয়াম ফিচারের ফি সামান্যই।

কোডটি৫ প্লাস : সেলসফোর্সের তৈরি কোডটি৫ ও টি৫ প্লাস নিজে থেকে কোড লিখতে সক্ষম নয়। বরং নিজস্ব কোডিং এআই তৈরির জন্য অনন্য এক ফ্রেমওয়ার্ক। ওপেন সোর্স এই সিস্টেম ব্যবহার করে নিজস্ব কোডিং মডেল ডাটাসেট দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা সম্ভব কোড সামারি, জেনারেশন, ট্রান্সলেশ, রিফাইনমেন্ট এবং ভুল সংশোধন করতে পারে এমন এআই। অনেক প্রতিষ্ঠানই চাইবে না তাদের কোড পাবলিক এআই, যেমন চ্যাটজিপিটির ডাটাসেটের অংশ হয়ে যাক। তাদের জন্য কোডটি৫ হতে পারে চমৎকার এক সিস্টেম।

ডিপকোড : কোডের মধ্যে কোনো ভুল বা নিরাপত্তার জন্য হুমকি- এমন কিছু আছে কি না সেটা স্ক্যান করার এআই সেবা ‘ডিপকোড’। সাইবার নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে তৈরি এআই মডেল ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে ডিপকোড, কোড পরীক্ষা করার পাশাপাশি অটো কমপ্লিট বা নতুন কোডের সাজেশনও দিতে সক্ষম ডিপকোড। সেবাটি এখনো বিনামূল্যেই ব্যবহার করা যাবে, তবে সব ফিচারের জন্য লাগবে প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন। বিভিন্ন আইডিইতে প্লাগইন হিসেবে যুক্ত করে বা গিটহাব রেপোজিটরিতে যুক্ত করে ব্যবহার করা যাবে এই সেবা।

ডাব্লিউপিকোড : ওয়ার্ডপ্রেসের নিজস্ব এই সেবাটির মাধ্যমে ওয়ার্ডপ্রেস অ্যাডমিনরা সহজেই তাঁদের ওয়েবসাইটের বিভিন্ন অংশের জন্য কোড স্নিপেট তৈরি করতে পারবেন। আগে সেবাটির নাম ছিল ‘ইনসার্ট হেডারস অ্যান্ড ফুটারস’। হেডার ও ফুটারের পাশাপাশি সাইটের বাকি অংশের জন্যও কাজ করে ডব্লিউপি কোড, যেমন- চাইলে পিএইচপি কোড, জাভাস্ক্রিপ্ট বা সিসএসএস স্ক্রিপ্ট থেকে এইচটিএমএল কোডের অংশও এই প্লাগইন ব্যবহার করে তৈরি করা যাবে। ওয়ার্ডপ্রেসের বাইরে অবশ্য সিস্টেমটি কাজে লাগবে না। মূলত শৌখিন ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখেই প্লাগইনটি তৈরি করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর