শিরোনাম
সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

পৃথিবীর সেরা কয়েকটি মহাকাশ সংস্থা

পৃথিবীর সেরা কয়েকটি মহাকাশ সংস্থা

মহাকাশ কেন্দ্রগুলো সারাক্ষণ মহাবিশ্ব নিয়ে নানান রকমফের গবেষণায় ব্যস্ত থাকে। তাদের মাধ্যমে আমরা মহাবিশ্বের গ্রহ-নক্ষত্র, নীহারিকা, ব্ল্যাক হোল, গ্রহাণু, ধূমকেতু এবং আরও অনেক তথ্য জানতে পারি।  পৃথিবীতে প্রায় ৭২ মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। যাদের বেশির ভাগ যৌথভাবে কাজ করে...

 

মহাকাশ বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের নানা গবেষণায় মাঝে মধ্যেই চমক দেখান। আর প্রযুক্তিগত সক্ষমতার কারণে তাদের গবেষণাও আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে প্রায় ৭২ মহাকাশ কেন্দ্র রয়েছে। তবে সফল মিশন, বাজেট এবং অর্জনের দিক থেকে এদের মধ্যে কেউ কেউ অনেক এগিয়ে।

 

১. ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NASA), [আমেরিকা]

►  প্রতিষ্ঠাকাল : ১৯৫৮ সাল

►  বার্ষিক বাজেট : ২০.৭ বিলিয়ন ডলার

নাসা বিশ্বের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে সফল মহাকাশ কেন্দ্র। এটি মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৮-তে পথ চলা শুরু হয় এই সংস্থার। প্রতিষ্ঠার ১০ বছরের মাথাই ১৯৬৯ সালে চাঁদে নভোচর পাঠায় এ সংস্থা। এ ছাড়া মঙ্গল নভোযান বা মহাশূন্যে অতিশক্তিশালী জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ পাঠানোর মতো অনন্য কীর্তি রয়েছে আমেরিকার এই মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের।

 

২. চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (CNSA), [চীন]

►  প্রতিষ্ঠাকাল : ১৯৯৩ সাল

►  বার্ষিক বাজেট : ১১ বিলিয়ন ডলার

১৯৯৩-তে আত্মপ্রকাশ করে চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা CNSA। এরা মূলত ব্যক্তিগতভাবে মহাকাশ গবেষণা করে থাকে। মহাকাশে তার নিজস্ব ছোট ‘স্পেস স্টেশন’ রয়েছে। মাত্র ৩০ বছরের গবেষণায় তারা মহাকাশে এই ‘স্পেস স্টেশন’ তৈরি করেছে।

 

৩. ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA),

[ ইউরোপ ]

►  প্রতিষ্ঠাকাল : ১৯৭৫ সাল

►  বার্ষিক বাজেট : ৭ বিলিয়ন ডলার

ইউরোপের ২২টি দেশের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা  বা  (ESA)। এরা একক সংস্থার পরিবর্তে বিভিন্ন মহাকাশ সংস্থার সুবিধা পায়। এমনকি এরা একসঙ্গে একাধিক স্পেস প্রোগ্রামে কাজ করতে পারে। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি আমাদের সৌরজগতের চাঁদ এবং গ্রহ নিয়ে গবেষণা করে।

 

৪. রাশিয়ান ফেডারেল স্পেস এজেন্সি (ROSCOSMOS), [রাশিয়া]

►  প্রতিষ্ঠাকাল : ১৯৯২ সাল

►  বার্ষিক বাজেট : ৩.২৭ বিলিয়ন ডলার

রাশিয়ান মহাকাশ সংস্থা বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত মহাকাশ সংস্থা। একে অবশ্য সব মহাকাশ গবেষণার কেন্দ্রস্থল বলা হয়। গত শতাব্দীর প্রথমদিকে মহাকাশ গবেষণায় আমেরিকার থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৯০-তে সোভিয়েতের পতনের পর রাশিয়ায় ফের নতুন করে শুরু হয় জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা। ১৯৯২-তে প্রতিষ্ঠা হয় রাশিয়ান ফেডারেল স্পেস এজেন্সি বা ROSCOSMOS-এর। গবেষণার পাশাপাশি স্পেস ওয়ার নিয়েও গবেষণা চালায় এই সংস্থা।

 

৫. ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO), [ভারত]

►  প্রতিষ্ঠাকাল : ১৯৬৯ সাল

►  বার্ষিক বাজেট : ১.৫ বিলিয়ন ডলার

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা মূলত গ্রহ অনুসন্ধানে বেশি আগ্রহী। তারা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়ের মহাকাশ মিশনে কাজ করে থাকে। কয়েক বছর আগে প্রথমবারের চেষ্টাতেই এ সংস্থার তৈরি মহাকাশযান পৌঁছে যায় মঙ্গলের কক্ষপথে। আগামী এক দুই বছরের মধ্যেই মহাশূন্যে নভোচারী পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে এই সংস্থা। উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের বহু দেশ ISRO-এর মাধ্যমেই মহাকাশে তাদের নভোযান পাঠিয়ে থাকে।

 

৬. স্পেস এক্স [আমেরিকা]

►  প্রতিষ্ঠাকাল : ২০০২ সাল

►  বার্ষিক বাজেট : নিশ্চিত নয়।

‘স্পেস এক্স’ বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তি ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত মহাকাশ সংস্থা। এরাই হলো বিশ্বের প্রথম বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা। এরা মূলত পৃথিবীর কক্ষপথে সফলভাবে উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে। পাশাপাশি এরা স্পেস মিশনের জন্য পুনরায় ব্যবহারযোগ্য রকেটও উৎপাদন করে থাকে। সেই রকেটগুলো আইএসএস, মহাকাশে সরঞ্জাম এবং নভোচারী পাঠানোর কাজে ব্যবহার হয়। এরা ‘মঙ্গল মিশন’ নিয়ে কাজ করছে। ২০২৬ সালে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠাবে।

 

৭. জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (JAXA), [জাপান]

►  প্রতিষ্ঠাকাল : ১৯৯৩ সাল

► বার্ষিক বাজেট : ২.০৩ বিলিয়ন ডলার

জাপান কেবল তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির জন্যই নয়, মহাকাশ কর্মসূচির জন্যও সমগ্র বিশ্বে বিখ্যাত। JAXA মূলত মহাবিশ্বে গ্রহাণু অনুসন্ধান এবং চাঁদ গবেষণার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এমনকি তারা বিভিন্ন দেশের অন্যান্য স্পেস এজেন্সির জন্যও উন্নত স্যাটেলাইটও তৈরি করে। এরা যোগাযোগ প্রযুক্তিতে বেশি নজর আগ্রহ দেখায়। বর্তমানে তারা লেজার কমিউনিকেশন সিস্টেম অধ্যয়নের জন্য সনির প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে।

 

৮. জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার (DLR),

[জার্মানি]

►  প্রতিষ্ঠাকাল : ১৯৬৯ সাল

►  বার্ষিক বাজেট : ২.৫৫ বিলিয়ন ডলার

জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার স্বল্প পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন, সৌর শক্তি প্রযুক্তির বিকাশ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজ করছে। এরা জার্মান ফেডারেল সরকারের পক্ষে মহাকাশ কর্মসূচির পরিকল্পনা করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংস্থাটি গ্যালিলিও (গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম), মার্স এক্সপ্রেস এবং শাটল রাডার টপোগ্রাফি মিশনের মতো প্রোগ্রামগুলো চালু করেছে। পাশাপাশি পরিবেশগত নিরাপত্তা, পরিবহন নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণসহ এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে কাজ করে।

 

৯. ইতালীয় মহাকাশ সংস্থা [ইতালি]

►  প্রতিষ্ঠাকাল : ১৯৮৮ সাল

►  বার্ষিক বাজেট : ১.৮ বিলিয়ন ডলার

ইতালীয় স্পেস এজেন্সি ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৬৪-এ তাদের প্রথম উপগ্রহ ‘সান মার্কো-১’ উৎক্ষেপণ করে। এরপর তারা মহাকাশ গবেষণার জন্য অনেক উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছিল। সবশেষ ১৯৯৬ সালে মহাবিশ্বকে আরও স্পষ্টভাবে পরীক্ষা করার জন্য তাদের প্রধান উপগ্রহ BeppoSAX করে। পরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তারা XMM-নিউটন, মার্স রিকন্যাসেন্স অরবিটার, দ্য ভেনাস এক্সপ্রেস এবং আরও অনেক প্রোগ্রামে কাজ করেছে।

 

১০. ন্যাশনাল সেন্টার ফর স্পেস স্টাডিজ, [ফ্রান্স]

►  প্রতিষ্ঠাকাল : ১৯৬১

►  বার্ষিক বাজেট : ২.৪৩ বিলিয়ন ডলার

ফ্রেঞ্চ স্পেস এজেন্সি (ESA) (ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি) মূলত ফ্রান্সের প্রতিনিধিত্ব করে। সংস্থাটির সদর দপ্তর ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত এবং এরা মূলত দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। ফরাসি মহাকাশ সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার সময় (ESA)-এর মহাকাশ প্রোগ্রামের জন্য মহাকাশচারীদের প্রশিক্ষণ দিত। বর্তমানে তারা প্রতিরক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, গবেষণা এবং সম্পদের টেকসই উন্নয়নে কাজ করে।

 

তথ্যসূত্র : ওয়ান্ডারলিস্ট

সর্বশেষ খবর