শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার ভয়ংকর অভিজ্ঞতা

টেকনোলজি ডেস্ক

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার ভয়ংকর অভিজ্ঞতা

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের দেখতে গিয়ে আর ফিরতে পারেননি টাইটান ডুবোযানের পাঁচ যাত্রী। আটলান্টিকের গভীরে নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর ২২ জুন টাইটানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে পাওয়া যায় কয়েকটি দেহাংশ। প্রায় একই পরিণতি হতে পারত সাংবাদিক মাইকেল গিলেনের। পদার্থবিদ গিলেন এককালে আমেরিকার প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম ‘এবিসি’তে বিজ্ঞান বিভাগের সম্পাদকের দায়িত্ব সামলাতেন। প্রায় ১৪ বছর ধরে ওই কাজ করেন তিনি। টেলিভিশনেও সাংবাদিকতা করেছেন। ‘বেস্টসেলার’ বইয়ের লেখক হিসেবেও পরিচিত রয়েছে তার। গিলেনই প্রথম সাংবাদিক যিনি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছ থেকে খবর করার জন্য দুজনকে সঙ্গে নিয়ে ডুবোযানে চড়ে আটলান্টিকের গভীরে যান। সেটি ছিল ২০০০ সালের ঘটনা। গিলেনের অভিযানের বহু বছর পর টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করতে ওশানগেট সংস্থার ডুবোযান টাইটানে আটলান্টিকের অতলে গিয়েছিলেন পাঁচ যাত্রী। ওই ডুবোযানটিতে ছিলেন ওশানগেট সংস্থার প্রধান কর্মকর্তা স্টকটন রাশ, ব্রিটেনের ধনকুবের হামিশ হার্ডিং, পাকিস্তান বংশোধূত ব্রিটিশ ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলেমান এবং ফরাসি নাবিক পল-হেনরি নাজিওলে। তবে অভিযান শুরুর পৌনে দুই ঘণ্টার মধ্যেই টাইটানের সঙ্গে সহযোগী জাহাজ পোলার প্রিন্সের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ২২ জুন কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূল থেকে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার দূরে টাইটানের ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পাওয়া যায়। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রায় ১,৬০০ ফুট দূরে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার গভীরে ছিল ডুবোযানটি। মনে করা হচ্ছে, সমুদ্রের পানির প্রবল চাপে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে টাইটানিয়াম এবং কার্বন ফাইবারের তৈরি ডুবোযান টাইটান সাবমার্সিবল। গিলেন জানিয়েছেন, ২০০০ সালে নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূল থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে পৌঁছেছিল তাদের ডুবোযান ‘মির-১’। ১৯৮৭ সালে রাশিয়ার তৈরি ওই ডুবোযানে তার সঙ্গী ছিলেন ব্রায়ান এবং রুশ চালক ভিক্টর। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের খাঁজে কীভাবে আটকে গিয়েছিলেন গিলেনরা? সে অভিজ্ঞতার কথা জানাতে টুইটার হ্যান্ডলে একটি ফুটেজ পোস্ট করেছেন গিলেন। সে দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ডিজিটাল মাধ্যমের সাহায্যে কিছু মুহূর্ত তৈরি করিয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের কাছে একটি সাক্ষাৎকারে গিলেন জানান, আটলান্টিকের গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে এগোনোর সময় আচমকাই পানির প্রবল স্রোত তাদের ডুবোযানটিকে টেনে নিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে টাইটানিকের প্রপেলারগুলোর দিকে এগোতে থাকে ডুবোযানটি। ওই প্রপেলারগুলোর এক- একটির ওজন ২১ টন। টাইটানিকের পিছনের দিকে ওই প্রপেলারের নিচে একটি খাঁজে আটকে পড়ে ডুবোযানটি। নিশ্চিত মৃত্যুমুখে সেভাবেই পেরিয়ে গিয়েছিল প্রায় আধা ঘণ্টা। খাঁজ থেকে বের হওয়ার জন্য ডুবোযানটিকে বারবার আগানো-পিছানোর চেষ্টা শুরু করে দেন তারা। তবে বৃথা চেষ্টা! ওই ঘটনার বহু বছর পর এর বিবরণ দিয়ে একটি বই লিখেছিলেন গিলেন। ‘বিলিভিং ইজ সিয়িং’ নামের ওই ‘বেস্টসেলার’-এ গিলেন লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছিল, আমরা অতি দ্রুতগতিতে প্রপেলারের দিকে এগোচ্ছিলাম। সে গতি ক্রমশ বাড়ছিল।’ হঠাৎই প্রচ- আওয়াজ। ডুবোযানের ভিতর থেকেও গিলেনরা টের পেয়েছিলেন, পানির স্রোতে প্রবল শব্দে কিছু একটা ভেঙে পড়ছে। তিনি জানিয়েছেন, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে বিশালাকার টুকরো ভেঙে পড়তে শুরু করেছিল তাদের ডুবোযানটির ওপর। নিজের বইয়ে গিলেন লিখেছিলেন, ‘পরে জানতে পারি, দুর্ঘটনাবশত সমুদ্রের অতলে স্রোতের মধ্যে আটকে পড়েছিল ডুবোযানটি। মুহূর্তের মধ্যে টাইটানিকের প্রপেলারে গিয়ে ধাক্কা মারে ‘মির-১’। একটা গর্ত থেকে দেখতে পেলাম, সেটির ওপর টাইটানিকে মরচে ধরা অংশ ভেঙে পড়ছে।’ ‘আমরা কি আটকে পড়েছি?’ ভয়ে চিৎকার করে উঠেছিলেন গিলেনের এক সঙ্গী। গিলেন জানিয়েছেন, মৃত্যুমুখে আটকে পড়ে অন্তিম মুহূর্তের অপেক্ষা শুরু করে দিয়েছিলেন। সে সময় গিলেনদের মনে হয়েছিল, ওই খাঁজ থেকে আর বের হতে পারবেন না তারা। গিলেনের দাবি, সে সময় আচমকাই এক ‘অদৃশ্য শক্তি’র প্রবেশ হয়েছিল ডুবোযানে। তিনি লিখেছেন, ‘মুহূর্তের মধ্যে সব নিস্তব্ধ। আচমকাই (ডুবোযান) ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। মনে হলো, আমরা আবার ভাসতে শুরু করেছি।’ আটলান্টিকের অতল থেকে ডুবোযানটি উপরে উঠে এসেছিল।

সর্বশেষ খবর