রোবট হলো- প্রোগ্রামিং মেশিন। একে মূলত কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অত্যন্ত জটিল কাজও সম্পাদন করতে সক্ষম। তবে ভাবনার কিছু নেই, এরা মানুষের ক্ষতি করবে না। সাধারণত এদের শুধু কর্মক্ষেত্রে অর্থাৎ কলকারখানায় কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। রোবট মূলত কর্মক্ষেত্রে দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্যভাবে অসংখ্য কাজ সম্পাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। ১৯৫৬ সালে প্রথম কর্মক্ষেত্রে রোবট ব্যবহার করা হয়। যার নাম ইউনিমেট। এই রোবটের কাজের সফলতার ফলে কর্মক্ষেত্রে কাজের জন্য রোবটের আরও বিকাশ ঘটে। পৃথিবীর অনেক করপোরেশন কোম্পানি রোবট কেনা শুরু করে। কর্মক্ষেত্রে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। গেল এক দশকে বৈশ্বিকভাবে রোবটের ইনস্টলেশন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কর্মক্ষেত্রে রোবটের ইনস্টলেশন বাড়ায় অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, মানব কর্মীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। করোনা মহামারি-পরবর্তী ২০২১ সালের তথ্যমতে, সমগ্র বিশ্বে কর্মক্ষেত্রে ৯০ লাখেরও বেশি রোবট ব্যবহার হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রোবোটিক্স (IFR) জানিয়েছিল, পরবর্তী বছরগুলোয় এই তালিকায় আরও প্রায় ৪০ লাখ রোবট যুক্ত হবে। আজকের বিশ্ব স্পষ্টতই অটোমেশনের যুগ পার করছে। কারখানাগুলোয় রোবটের ইনস্টলেশন (প্রতিস্থাপন) দেখতে পাচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রোবোটিক্স (IFR) রোবট ব্যবসায়ের ওপর প্রতি বছরই একটি বার্ষিক সমীক্ষা পরিচালনা করে। সম্প্রতি সংস্থাটি ‘ওয়ার্ল্ড রোবোটিক্স ২০২৪’ রিপোর্ট প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়েছে- বিশ্বব্যাপী কল-কারখানাগুলোয় ৪,২৮১,৫৮৫ ইউনিট রোবট কাজ করছে। যা আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। টানা তৃতীয় বছরের মতো- বার্ষিক রোবট ইনস্টলেশন অর্ধ মিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় ৫ লাখ ইউনিট ছাড়িয়েছে। আঞ্চলিক তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে নতুন মোতায়েন করা সমস্ত রোবটের ৭০ শতাংশ এশিয়ায়, ১৭ শতাংশ ইউরোপে এবং ১০ শতাংশ আমেরিকায় ইনস্টল করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রোবোটিক্সের প্রেসিডেন্ট মারিনা বিল বলেন, ‘নতুন ওয়ার্ল্ড রোবোটিক্সের’ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- বিশ্বজুড়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎপাদনকারী শৈল্পিক রোবটের সংখ্যা সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ২০২৩ সালে রোবটের বার্ষিক ইনস্টলেশনে ৫৪১,৩০২ ইউনিটের চিত্রটি ছিল প্রযুক্তি বাজারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড। যেসব দেশে মানবকর্মীদের পাশাপাশি রোবটিক ইনস্টলেশন বেড়েছে তাদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে আশ্চর্যজনকভাবে জাপান এবং জার্মানির দেশগুলোর আধিপত্য বেড়েছে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারতের শিল্প-কারখানাগুলোয় রোবটের ইনস্টলেশন বেড়েছে। অপরদিকে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, স্পেন, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, জার্মানি এবং ফ্রান্সে রোবটের ব্যবহার বেড়েছে। আর আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোতে রোবটিক্স শিল্পের ব্যবহার বেড়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রোবোটিক্স (IFR)-এর ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুসারে, কর্মক্ষেত্রে যেসব দেশে রোবটের ব্যবহার বেড়েছে, সেগুলোকে ঘনত্ব আকারে দেখানো হলো- তাইওয়ানে রোবটের ঘনত্ব ১২৯, ফিনল্যান্ডে রোবটের ঘনত্ব ১৩০, স্পেনে রোবটের ঘনত্ব ১৩১, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রোবটের ঘনত্ব ১৩৫, ডেনমার্কে রোবটের ঘনত্ব ১৪৫, সুইডেনে রোবটের ঘনত্ব ১৫৭, ইতালিতে রোবটের ঘনত্ব ১৫৯, জার্মানিতে রোবটের ঘনত্ব ২৬১, জাপানে রোবটের ঘনত্ব ৩৩৯ এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় রোবটের ঘনত্ব ৩৪৭।
উল্লেখ্য, রোবটের ঘনত্ব (ডেনসিটি) হলো- উৎপাদনে নিযুক্ত ১০,০০০ জনের বহুমুখী শিল্পে এক আনুপাতিক রোবটের সংখ্যা।
তথ্যসূত্র : আইএফআর প্রেস