সীমান্ত কন্যা শেরপুর। প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড খ্যাত ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলা লাগোয়া। জেলার তিনটি উপজেলা শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতি ও নালিতাবাড়ী ঘিরে রয়েছে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ গারো পাহাড়, যা একেবারে মেঘালয় সংলগ্ন। হাত বাড়ালেই মেঘালয় যেন ছোঁয়া যায়। এখানকার শাল, গজারি, ইউক্যালিপটাস, আকাসিয়া, সেগুন, মেহগনি, রাবারসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ, ঝর্ণা ও ছড়ার জলের কলকল ধ্বনি প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করে।
সম্প্রতি যোগ হয়েছে চা বাগান, কাজুবাদাম, চেরি, কফি ও ড্রাগনের চাষ। এছাড়া পাহাড়জুড়ে আদিবাসী নৃগোষ্ঠীর জীবনধারা, সংস্কৃতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ একে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। আঁকাবাঁকা সীমান্ত সড়ক ধরে যাতায়াতও সহজ হয়েছে।
এই সড়কটি সিলেট থেকে শুরু হয়ে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, জামালপুরের বকশিগঞ্জ হয়ে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখা যায় মেঘালয়ের পাড়ের চিত্র। এখানকার লাল মাটি ও সবুজ বনাঞ্চল প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে গেছে অন্তত চারটি খরস্রোতা নদী, যাদের লাল বালু পাহাড়ের সবুজের সঙ্গে মিলেমিশে সৃষ্টি করেছে এক অপরূপ সৌন্দর্য। তবুও, পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও সরকারি উদ্যোগের অভাবে এই সৌন্দর্য রয়ে গেছে অন্তরালে।
গজনী অবকাশ কেন্দ্র, নব্বইয়ের দশকে গড়ে ওঠা একটি পর্যটন স্পট, এখনও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পায়নি। অপরিকল্পিত অবকাঠামো, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। মধুটিলা ইকো পার্কে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ, কিন্তু পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুবিধা না থাকায় এখানেও ভাটা পড়েছে আগ্রহে।
এছাড়াও নালিতাবাড়ীর তারানী পাহাড়, আন্তর্জাতিক মানের খ্রিষ্টান ধর্মীয় উপাসনালয় ও ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান যথার্থ মূল্যায়ন পায়নি। একইভাবে, শ্রীবরদীর বালিঝুড়ি অঞ্চল ও সোনাঝুড়িতে প্রস্তাবিত পর্যটন এলাকা দীর্ঘদিন ফাইলবন্দি।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “এখানে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা পরিকল্পনা করছি, মোটেল স্থাপন ও পর্যটন পুলিশের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।”
তবু প্রশ্ন থেকেই যায়—এত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কেন শেরপুর এখনও পর্যটনের মানচিত্রে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারেনি?
বিডি প্রতিদিন/আশিক