মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঝুঁকি ও জঞ্জাল ফুট ওভারব্রিজে

বিশেষ প্রতিনিধি

ঝুঁকি ও জঞ্জাল ফুট ওভারব্রিজে

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ফুট ওভারব্রিজের পাটাতন ভেঙে পড়েছে। দৈন্যদশা রমনা ফুট ওভারব্রিজেরও। ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর অধিকাংশ ফুট ওভারব্রিজ নানা অব্যবস্থাপনায় অরক্ষিত। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ফুট ওভারব্রিজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েকটি ভঙ্গুর ও ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। অনেক ওভারব্রিজ হকার, ভবঘুরে, নেশাসক্তদের দখলে। আবর্জনার জঞ্জালে পরিপূর্ণ। জনবহুল জায়গায় নির্মিত এসব ফুট ওভারব্রিজ ভেঙে যে কোনো সময় বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পথচারী পারাপারের জন্য তৈরি এসব ফুট ওভারব্রিজের অল্পসংখ্যকই মানুষ ব্যবহার করছে। উপযুক্ত জায়গায় নির্মাণ না করায় বিভিন্ন ফুট ওভারব্রিজে মাদকাসক্ত ও ছিনতাইকারী চক্রের অবাধ বিচরণ। অনেক ওভারব্রিজ ময়লা-আবর্জনা আর অবৈধ দখলে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করায় বেড়েছে অপব্যবহার। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা শাহবাগের ফুট ওভারব্রিজটিতে পথচারীরা উঠতে চান না। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বারডেমের মধ্যে সংযোগকারী ফুট ওভারব্রিজটির পাটাতন ভেঙে পড়েছে। রাজধানীর ব্যস্ত সদরঘাট চৌরাস্তায় অবস্থিত ফুট ওভারব্রিজটি জনবহুল এলাকায় হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হওয়ার কথা। কিন্তু এই ফুট ওভারব্রিজটি বর্তমানে ছিন্নমূল মানুষের বিশ্রাম ও মলমূত্র ত্যাগের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্রিজের উপরে দেখা যায়, মলমূত্রের দুর্গন্ধময় পরিবেশ। আবার  কেউ দিব্যি ঘুমিয়ে আছেন এর উপরই। ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হন পথচারীরা। অভিযোগ স্বীকার করে সিটি করপোরেশন বলছে, অব্যবহৃত কিছু ফুট ওভারব্রিজে এ ধরনের সমস্যা রয়েছে। তবে সমস্যা সমাধানে ডিসিসি তৎপর রয়েছে বলেও জানা গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের  মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারের প্রাকটিস এখনো আমাদের এখানে তৈরি হয়নি। দৌড়ে অনেকেই রাস্তা পার হয়ে যায়। অব্যবহৃত কোনো জিনিস থাকলে সেটি বিভিন্নভাবে অপব্যবহারও হয়। ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারের ব্যাপারে পুলিশ মাঝে মধ্যে নির্দেশনা দিলে রাস্তায় কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। কিন্তু অল্প সময়েই সেটা অকার্যকর হয়ে পড়ে। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে সংযোগকারী ফুট ওভারব্রিজটি তৈরি হয় আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ সরকারের আমলে। রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও শিল্পকলা একাডেমিকে ঘিরে একটি সাংস্কৃতিক বলয় তৈরির অংশ হিসেবে এই ফুট ওভারব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন অব্যবহৃত এই ফুট ওভারব্রিজটির বিভিন্ন অংশের সিমেন্ট খসে পড়েছে। রেলিং ভেঙে গেছে। যে কোনো মুহূর্তে এটি ভেঙে ব্যস্ত রাস্তায় মানুষ কিংবা যানবাহনের ওপর পড়তে পারে। এটি দ্রুত ভেঙে ফেলার উদ্যোগ না নিলে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। এদিকে উত্তরার রাজলক্ষী, আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড়ের ফুট ওভারব্রিজগুলোর অবস্থাও নাজুক। মানুষ পারাপারের ভারে এই তিনটি ফুট ওভারব্রিজ বর্তমানে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। গত সপ্তাহে আজমপুর ফুট ওভারব্রিজের পশ্চিম পাশের রেলিংয়ের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। পরে সেটি ঝালাই করে দেওয়া হয়। রেলিংয়ের বাকি অংশগুলোও অত্যন্ত নড়বড়ে-নাজুক। রাজলক্ষী ফুট ওভারব্রিজের সিঁড়ির স্টিলের পাতগুলো ক্ষয়ে ছুরির মতো ধারালো হয়ে আছে। অনেক পাত ভেঙে গেছে। মানুষ পারাপারের সময় শাড়ি, লুঙ্গি, জুতা ছিঁড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই। অন্যদিকে সকালে স্কুল ও অফিস শুরুর সময় এবং দুপুরে স্কুল-কলেজ ছুটির সময় ফুট ওভারব্রিজগুলোতে প্রচণ্ড ভিড় হয়। এসময় সড়কের ট্রাফিক জ্যামের মতোই তিনটি ফুট ওভারব্রিজের উপর মানুষের জট লেগে যায়। এ জন্য অবিলম্বে উত্তরার রাজলক্ষী, আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড়ের ফুট ওভারব্রিজগুলোর পাশাপাশি আরও তিনটি নতুন ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা প্রয়োজন। পুরনো এসব ফুট ওভারব্রিজে মানুষের যে চাপ তাতে অল্প সময়ের মধ্যেই এগুলো মানুষ পারাপারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এসএম সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফুট ওভারব্রিজের সিঁড়িগুলো ইউজার ফ্রেন্ডলি করতে হবে।       অবশ্যই ফুট ওভারব্রিজকে খালি রাখতে হবে। কোনো  দোকানপাট বসানো যাবে না। এছাড়া ফুট ওভারব্রিজগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। নিচের রাস্তায় হেঁটে পারাপারের ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে। মানুষ বাধ্য না হলে ফুট ওভারব্রিজে উঠতে চায় না।

সর্বশেষ খবর