মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কুতুবখালী খাল এখন খোলা ড্রেন

আহমদ সেলিম রেজা

কুতুবখালী খাল এখন খোলা ড্রেন

যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী খাল দখল করে পশ্চিম পাড়ে গড়ে উঠেছে পাকা সড়ক। পূর্ব পাড়ও এখন ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। এ পাড়েও পাকা সড়ক নির্মাণের আশ্বাস পেয়ে স্থানীয় অধিবাসীরা ময়লা-আবর্জনা ফেলে দ্রুত খালটি দখলের প্রতিযোগিতায় মেতেছেন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ইন্ধনেই ভরাট হচ্ছে এই খাল। খালের পশ্চিমপাড় এভাবেই গত দুই দশকে ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে পাকা রাস্তায় রূপান্তরিত হয়েছে। পাশাপাশি খালটি পরিণত হয়েছে ড্রেনে। চার দশক আগেও এই খালের প্রস্থ ছিল ৪০ ফুট। সেই খাল এখন কার্যত খোলা ড্রেনে পরিণত হয়েছে। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ডাউন পয়েন্টে এসে খালের প্রস্থ দাঁড়িয়েছে ১২ ফুট।

সরেজমিন দেখা যায়, ধোলাইপাড় থেকে দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ডাউন পয়েন্ট পর্যন্ত খালের পশ্চিম পাড় বাধাই করে সরকারি উদ্যোগে ১২ ফুট পাকা রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। যার পুরোটাই এক সময় ছিল খাল। পূর্ব পাড়েও এখন ১২ ফুট রাস্তা নির্মাণের আয়োজন চলছে। এজন্য দ্রুতই ভরাট হচ্ছে খালের পূর্ব পাড়। এপাড়টিও পশ্চিম পাড়ের মতো বাঁধাই করে সরকারি উদ্যোগে পাকা রাস্তা করে দেওয়া হবে বলে প্রচার আছে। স্থানীয়রা জানায়, পাঁচ বছর আগেও খালের পূর্ব পাড়ে কোনো রাস্তা ছিল না। ফলে স্থানীয় লোকজনের চলাচলে খুবই অসুবিধা হতো। খালের পাড় দিয়ে একটি সরু পথে সবাইকে চলতে হতো।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫০নং ওয়ার্ডের কমিশনার দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, খাল দখল হচ্ছে না। দখল রোধ করতে সরকার খালের উভয় পাড় বাঁধাই করে রাস্তা করে দিচ্ছে। সিটি নির্বাচনের আগেই পশ্চিম তীর বাঁধাই করে রাস্তা হয়েছে। পূর্ব তীরের কাজ চলছে। তবে খালের পূর্ব তীর ডিএসসিসির অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় এর উন্নয়ন কাজ তদারকি করছে দনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ।

জানা যায়, এক সময় বুড়িগঙ্গা নদীকে শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদীর সঙ্গে সংযুক্ত রেখেছিল ধোলাই খাল। গেণ্ডারিয়া-মীরহাজারীবাগ-ধোলাইপাড়-কুতুবখালী-কাজলা হয়ে সেই খালের একটি অংশ গিয়ে মিশেছিল শীতলক্ষ্যার সঙ্গে ডেমরায়। মীরহাজারীবাগ থেকে বাঁক নিয়ে খালের অপর অংশটি সায়েদাবাদ-ধলপুর হয়ে গিয়ে মিশেছিল তুরাগের সঙ্গে। খালের এ অংশটি এর মধ্যে বক্স কালভার্ট রোডে পরিণত হয়েছে। গেণ্ডারিয়া-মীরহাজারীবাগ-ধোলাইপাড় পর্যন্ত খালের অংশটি বক্স কালভার্ট রোড হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্র জানায়, ব্রিটিশ আমলে এ খাল দিয়ে পালতোলা নৌকা, ছোট ছোট লঞ্চ এবং কাঠ ও ধানের নৌকা চলাচল করত। তখন সংযোগ খালটি প্রশস্তে ছিল ৮০-৯০ ফুট। পাকিস্তান আমলে পঞ্চশ দশকে শীতলক্ষ্যা নদীর জোয়ারের পানি থেকে ডেমরা, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, কুতুবখালী, কদমতলী, শ্যামপুর এলাকার বিস্তীর্ণ ধানী জমির ফসল রক্ষা করতে ডিএন্ডডি বাঁধ নির্মাণের পর খালটি প্রথম দখলদারদের কবলে পড়ে। পরবর্তীতে ডিএন্ডডি বাঁধের ভিতর বিশেষ করে খালের উভয় তীরে আবাসন গড়ে উঠতে শুরু করলে ধীরে ধীরে খালটি আরও সংকুচিত হয়ে পড়ে।

সর্বশেষ খবর