মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

খুলনার সড়কদ্বীপগুলো সৌন্দর্যহীন

ষসামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনার সড়কদ্বীপগুলো সৌন্দর্যহীন

খুলনা মহানগরীর কেডিএ এভিনিউর তেঁতুলতলা মোড়। নগরজীবনে প্রকৃতির ছোঁয়া দিতে এখানকার সড়কদ্বীপে সাদা বক, পাহাড়ি ঝরনা ও চিরন্তন গ্রামীণ প্রতিকৃতি (মডেল) স্থাপন করা হয়। এগুলো রক্ষায় চারপাশে লোহার রড ও কাঁটাতারের বেড়াও দেওয়া হয়। কিন্তু এসবের কিছুই এখন আর অবশিষ্ট নেই। চুরি হয়ে গেছে। ফলে সড়কদ্বীপটি এখন শ্রীহীন। আর প্রতিকৃতিগুলো ঢাকা পড়েছে ধুলার আস্তরণে। খুলনা সিটি করপোরেশনের নজরদারির অভাব ও সৌন্দর্যবর্ধনে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর অসহযোগিতা এই হতশ্রী চেহারার মূল কারণ বলে জানা গেছে।

সরেজমিন জানা যায়, নগরীর মজিদ সরণি সড়কের সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড দিকের অংশের সড়কদ্বীপের কোথাও কাঁটাতারের বেড়া ও লোহার পাইপ নেই। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো গাছগুলোতেও অযত্নের ছাপ। যা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বেয়ে সড়কে পড়েছে। সড়কদ্বীপগুলোয় রঙের প্রলেপ পড়েনি অনেকদিন। শাপলা ফুল, চায়ের আড্ডা, ঝাড়বাতি, পাহাড়, পালকি বধূর প্রতিকৃতি ধুলার আস্তরণে ঢেকে গেছে। চারপাশে ময়লা-আবর্জনারও ছড়াছড়ি। নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সড়কদ্বীপে নির্মিত গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীকগুলো এখন অসুন্দরের প্রতিচ্ছবি হয়ে দেখা দিয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ শিববাড়ী মোড়ের বিজয়স্তম্ভের চারপাশে পিতলের নজেল দিয়ে একসময় পানির ফোয়ারা বের হতো। সেগুলো চুরি হয়ে গেছে। এখন প্লাস্টিকের নল দিয়ে বেরোয় পানির ফোয়ারা। জানা যায়, ২০০৬ সাল থেকে সিটি করপোরেশন বিভিন্ন সময়ে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, ভিউ ফাইন্ডার, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, সুনসিন সিমেন্ট, ফরনেক্স, প্লয়িং অ্যাডভারটাইজমেন্ট, বিল ডাকাতিয়া অ্যাড ফার্ম, উদয়ন আর্ট পাবলিসিটির সঙ্গে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কদ্বীপের সৌন্দর্যবর্ধনের চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে সড়কদ্বীপের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করবে। এক্ষেত্রে সড়কদ্বীপের মাঝে নির্মিত বিলবোর্ডগুলোতে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের প্রচারণা চালাবে। চাইলে অন্য প্রতিষ্ঠানকে ভাড়াও দিতে পারবে। তবে সবক্ষেত্রেই সিটি করপোরেশনকে নির্দিষ্ট হারে ‘বিলবোর্ড প্রচারণা কর’ দিতে হবে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সড়কদ্বীপে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে সিটি করপোরেশন ওই প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

খুলনা সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে নগরীর শিববাড়ী থেকে জোড়াগেট পর্যন্ত সড়কদ্বীপের সৌন্দর্যবর্ধনের দায়িত্ব দেওয়া হয় গ্রামীণফোনকে। ২০১৩ সালের পর থেকে তারা সড়কদ্বীপের সৌন্দর্য তদারকির সব কাজ বন্ধ করে দেয়। করপোরেশনের পক্ষ থেকে কয়েক দফা চিঠি দিলেও তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ২০১৪ সালে সোনাডাঙ্গা এমএ বারি সড়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় সুনসিন সিমেন্ট কোম্পানিকে। তারা এখানে বর্ণিল সব ডিজাইন ও সবুজের ক্যানভাস তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেও গত এক বছরেও কোনো কাজ করেনি। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সিটি করপোরেশন চুক্তি বাতিল করেছে। সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে বয়রা বাজার পর্যন্ত মুজগুন্নি সড়কদ্বীপে ফরনেক্স অ্যাডভারটাইজমেন্ট ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তারা কিছু কিছু স্থানে গাছ লাগালেও বর্তমানে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর