মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

যানজটে মুক্তির ইউলুপ

লাকমিনা জেসমিন সোমা

যানজটে মুক্তির ইউলুপ

রামপুরা ব্রিজসংলগ্ন হাতিরঝিল প্রকল্পের দক্ষিণ ইউলুপ শিগগিরই উদ্বোধন হবে ছবি : জয়ীতা রায়

একপাশে নয়নাভিরাম হাতিরঝিল অন্যপাশে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পেছনে বিস্তৃত বনশ্রী-মেরাদিয়ার জনবসতি। মাঝখানে দৃষ্টিনন্দন এক ‘ইউলুপ’ আর কদিন বাদেই রামপুরা ব্রিজের নিত্য যানজটের অবসান ঘটাবে। বিটিভি গেটের সামনে দিয়ে দুই পাশে ছড়িয়ে পড়া হাতিরঝিল ‘ইউলুপ’-এর নির্মাণকাজ এখন শেষ পর্যায়ে। হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত দুই ইউলুপের একটি এটি। দেশের প্রথম স্বীকৃত ইউলুপ হিসেবে আগামী দিনে রাজধানীর যানজট লাঘবে মাইলফলক হিসেবে থাকবে এটি। নগরীর যানজট নিরসনে ভিন্ন মডেলের আরও ২২টি ইউলুপ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে উত্তর সিটি করপোরেশন। আর দক্ষিণ সিটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা প্রথমে পর্যবেক্ষণ করবেন, পরে উত্তর সিটি সফল হলে তারাও বিষয়টি ভেবে দেখবেন। রাজধানীর রাস্তায় প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে হাজার হাজার যানবাহন। মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রাইভেট কার ও গণপরিবহন। সেই সঙ্গে বাড়ছে যানজট। প্রতিদিনের অসহনীয় যানজটে নাভিশ্বাস উঠছে রাজধানীবাসীর। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ত্রুটিপূর্ণ ট্রাফিক সিস্টেমের কারণেই এ যাটজট নিরসনে কূলকিনারা পাচ্ছে না সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো। বিশেষ করে এ নিয়ে মহাবিপদে আছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। সংস্থা দুটির সঙ্গে বিষয়টি সরাসরি সম্পৃক্ত না হলেও নগরবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দুই মেয়রকেই এ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। এরই মধ্যে যানজট সমস্যা নিরসনে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর জয়দেবপুর চৌরাস্তাসংলগ্ন তেলিপাড়া থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় পর্যন্ত ২২টি ইউলুপ তৈরির মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিয়েছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। সিটি মেয়র আনিসুল হক জানিয়েছেন, এটি বাস্তবায়ন হলে আগামী জুনের মধ্যে উত্তর সিটির ৩০-৪০ ভাগ যানজটই কমে যাবে।

জানা গেছে, দায়িত্ব গ্রহণের পর মেয়র আনিসুল হক গুরুত্বের ভিত্তিতে যে উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেন তার মধ্যে যানজট অন্যতম। আর সে কারণেই আনিসুল হক দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই যানজট নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করে ডিএনসিসি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিমানবন্দর-উত্তরা সড়কে প্রকৌশলী কামরুল হাসানের উপস্থাপিত একটি মডেল পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে এর কার্যকারিতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়ায় সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ট্রাফিক), ডিটিসিএ, বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও নগর ও পরিবহন বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আরও বিস্তারিত পরামর্শ নেওয়া হয়। পরামর্শ অনুযায়ী হাতিরঝিল সাতরাস্তা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়কে ২২টি ইউলুপ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর জন্য একটি টিম গঠন করে ডিএসসিসি। প্রকৌশলী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি মডেল তৈরি করা হয়। একটি টিম গঠনের মাধ্যমে একটি বিস্তারিত মডেল তৈরি করা হয়। দুটি বেসরকারি পরামর্শক সংস্থার সহযোগিতায় স্থপতি তানভীর নেওয়াজ এবং ড. এস এম সালেহউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি মডেল তৈরি করা হয়। মডেল অনুসারে জয়দেবপুর চৌরাস্তাসংলগ্ন তেলিপাড়া থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় পর্যন্ত রাস্তাটিতে দুই ধরনের ইউলুপ তৈরি করা হবে। বড় ও ছোট গাড়ির জন্য ‘টাইপ-এ’ এবং ছোট গাড়ির জন্য ‘টাইপ-বি’ ধরনের ইউলুপ ডিজাইন করা হয়েছে। টাইপ-এ এর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১৪৪ ফুট প্রশস্ত এবং ‘টাইপ বি’ এর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০৪ ফুট প্রশস্ততায় ইউলুপগুলো তৈরি করা হবে। একটি ইউলুপ থেকে অপর ইউলুপের দূরত্ব হবে ৮০০ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার পর্যন্ত। তবে বর্তমানে জায়গা সংকুলান নিয়ে কিছুটা সংকট তৈরি হওয়ায় গতি পাচ্ছে না ইউলুপগুলো তৈরির কাজ। ডিএনসিসির দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২২টি ইউলুপ করতে প্রায় ৩৮ বিঘা জমির দরকার। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথের ৩১ দশমিক ২৫ বিঘা, রেলওয়ের ১ দশমিক ৬১ বিঘা, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের ১ দশমিক ৮৩ বিঘা। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ জমিগুলো খালিই পড়ে আছে। অর্থাৎ জমিগুলো নতুন করে অধিগ্রহণের দরকার হবে না। সংশ্লিষ্ট তিন দফতর এগুলো সিটি করপোরেশনকে ব্যবহার করতে দিলেই তারা দ্রুত কাজ সম্পন্ন করে ফেলতে পারবেন। এদিকে ডিএনসিসির এ প্রকল্পের সফলতা নিয়ে সংশয়ে আছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তারা বলছেন, ঢাকা উত্তর যদি সফল হয় তবেই তারা ইউলুপ প্রকল্প গ্রহণ করবে। কিন্তু তার আগে এ প্রকল্পের ঝুঁকি নেওয়ার মতো অবস্থা তাদের নেই। যদিও পুরান ঢাকার যানজট নিয়ে বিশেষ করে পল্টন থেকে গুলিস্তান হয়ে সদরঘাটের দিকে যেতে অসহনীয় যানজটে নাকাল হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, বর্তমান পরিবহন ব্যবস্থায় ইউলুপ তৈরি হলে ২০ শতাংশ যানজট কমবে। তবে প্রতিটি রুটে পরিবহন কোম্পানি ৪/৫টিতে নামিয়ে আনা গেলে যানজট ৪০ শতাংশ কমানো সম্ভব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর