মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

অস্তিত্ব সংকটে খুলনার ২২ খাল

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

অস্তিত্ব সংকটে খুলনার ২২ খাল

অবৈধ দখলের কারণে খালের আয়তন কমে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে

খুলনায় ময়ূর নদী ও সংযুক্ত ২২ খালের দখলযজ্ঞ থেমে নেই। প্রভাবশালীরা যেভাবে পেরেছে খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছে। এমনকি ব্যক্তি নামে খালের জমি রেকর্ড করে অন্যের কাছে তা বিক্রিও হয়েছে। অবৈধ দখলের কারণে খালের আয়তন কমে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে শহরের বড় অংশজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। 

গত ১০ বছরে ময়ূর নদী ও ২২ খালের প্রায় ১৪ হাজার বর্গমিটার জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। এর মধ্যে ময়ূর নদীর বেদখল হওয়া জমির পরিমাপ ১০৭৫ বর্গমিটার। সংযুক্ত হাতিয়া নদীর ৫৬৮০ বর্গমিটার ও ক্ষুদের খালের ১০১০ বর্গমিটার জমি বেদখল হয়েছে। বাস্তুহারা খাল, স্লুইসগেট খাল, গল্লামারী নর্থখাল, কাস্টমঘাট ইত্যাদি এলাকায় খালের অস্তিত্ব নেই।

‘ময়ূর নদী ও সংযুক্ত খালসমূহ রক্ষা’ শীর্ষক খুলনার প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিবেদন এবং সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ময়ূর নদীর ওপর গল্লামারী ব্রিজ ঘেঁষে বাঁশের ওপর উঁচু মাঁচা করে মোবাইল, হাঁড়িপাতিল বিক্রির দোকান করা হয়েছে। ব্রিজের গা ঘেঁষে কলাবাগান ও ভবনের পাকা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। খুলনা সিটি করপোরেশনের উদ্যোগেই নিরালা খালের ৬০ ফিটের প্রশস্ততা কমিয়ে ছোট ড্রেনে রূপ দেওয়া হয়েছে।

বাটকেমারী খাল নগরীর বয়রা ইসলামিয়া কলেজের পেছন থেকে ক্ষুদের খাল পর্যন্ত বিস্তৃত। ৯০ দশকের দিকে খালের প্রশস্ততা ৫০-৬০ ফুট ছিল। দখলের ফলে বর্তমানে শতকরা ৬৭ ভাগ কমে গেছে।

গত ১০ বছরে আড়ংঘাটা খালের বেদখল হয়েছে ৩৪৮ বর্গমিটার জায়গা, দিয়ানা চৌধুরী খালের ৩৪১ বর্গমিটার, বাস্তুহারা খালের ২৪২ বর্গমিটার, দুয়ানে খালের ১৩৭ বর্গমিটার, তালতলা খালের ১২১ বর্গমিটার, কাদেরের খালের ৪০৫ বর্গমিটার, নিরালা খালের ১২০৪ বর্গমিটার, ছড়িছড়া খালের ১২৩ বর্গমিটার, খোলাবাড়িয়া খালের ৫১ বর্গমিটার, নারকেল বাড়িয়া খালের ৫০০ বর্গমিটার, হরিণটানা খালের ১৭৮ বর্গমিটার, মতিয়াখালী খালের ২৬৩ বর্গমিটার, শুরি খালের ২১৭ বর্গমিটার, রংমারী খালের ২৪৬ বর্গমিটার, কাশেমবাড়ি খালের ৪৮৯ বর্গমিটার,  মাথাভাঙ্গা খালের ৭৫ বর্গমিটার জায়গা বেদখল হয়ে গেছে।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তুষার কান্তি রায় বলেন, খালের আশপাশের জমির মালিকদের খাল ভরাট করার প্রবণতা বেড়েছে।

এ ছাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদের খাল ভরাট করে রাস্তা তৈরির প্রবণতাও বেড়েছে।

খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি আশরাফ-উজ জামান বলেন, বেদখল হওয়া খালের জায়গা উদ্ধার করে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে না পারলে খুলনা মহানগরী ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, বন্যা, পরিবেশ বিপর্যয় ও পানি সংকটের সম্মুখীন হবে।

সর্বশেষ খবর