শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটো বন্ধ হবে কবে?

জয়শ্রী ভাদুড়ী

মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটো বন্ধ হবে কবে?

যাত্রী জিম্মি করা মেয়াদোক্তীর্ণ সিএনজি অটোর মেয়াদ আবারও বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে ছবি : জয়ীতা রায়

নিবন্ধনে ৯ বছর মেয়াদপ্রাপ্ত (ইকোনমিক লাইফ) সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলছে ১৫ বছর ধরে। এবার আরও ছয় বছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন অটোরিকশার মালিকরা। যাত্রীদের জিম্মি করে সরকারের কাছ থেকে একের পর এক সুবিধা আদায় করে নিচ্ছেন তারা। যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ইচ্ছামতো ভাড়া। মিটারে যাত্রী তোলা কবেই বন্ধ। আবারও ধর্মঘটের হুমকি দিয়ে ছয় বছর আগে শেষ হয়ে যাওয়া অটোরিকশার মেয়াদ বাড়াতে চাইছেন মালিকরা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামছুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটোরিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এটাই সঠিক সময়। প্রথম দিকে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হলেও এটা এখন শুধরে নেওয়ার সুযোগ আছে। মালিকদের ফাঁদে পা দিলে সরকারকে আরও ছয় বছর অপেক্ষা করতে হবে। এ সমস্যা সমাধানে কয়েকটি বিষয়ে জোর দিয়ে তিনি বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ অটোরিকশার মেয়াদ না বাড়িয়ে সরকারকে নতুন অটোরিকশা নামাতে হবে এবং একটি প্রতিষ্ঠানের আওতায় এনে এগুলো পরিচালনা করতে হবে। চালক হতে হবে বেতনভুক্ত। হাজার হাজার মালিকের হাতে থাকলে এ খাতের জটিলতা কমানো সম্ভব নয়। নীতিমালা অনুযায়ী, মালিকেরা অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত হারে প্রতিদিনের টাকা জমা নেবেন। কিন্তু মালিকেরা কখনই নির্ধারিত হার মানেননি, অতিরিক্ত টাকা নিয়েছেন। অটোরিকশা চলবে মিটার অনুযায়ী এবং নির্ধারিত ভাড়ায়। চালকেরা শুরুর দিন থেকে তা অগ্রাহ্য করে যাচ্ছেন। যাত্রীদের স্বার্থ রক্ষা বাদ দিয়ে অটোরিকশার মালিক ও চালকদের দাবির মুখে সরকার পাঁচ দফা ভাড়া এবং চার দফা জমার পরিমাণ বাড়িয়েছে। নয় বছর বয়সসীমার অটোরিকশার মেয়াদ তিন দফা বাড়িয়ে ১৫ বছর করেছে।

ঢাকায় অটোরিকশা চলাচলের শুরুতে সরকার নির্ধারিত জমা ছিল ৩০০ টাকা। ২০০৭ সালে প্রথম দফায় ভাড়া ও জমা বাড়ানো হয়। জমা বাড়িয়ে করা হয় ৪৫০ টাকা। ২০০৮ সালে আবার জমা বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়। তবে ভাড়া প্রথম ২ কিলোমিটারের জন্য ২৫ টাকাই রাখা হয়। কিন্তু পরের প্রতি কিলোমিটারে ৭ থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। ২০১১ সালে আবার কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া বাড়িয়ে ৭ টাকা ৬৪ পয়সা করা হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ভাড়া ও জমা সবই বাড়ানো হয়। জমা ৯০০ টাকা, প্রথম ২ কিলোমিটারের ভাড়া ৪০ টাকা, পরে প্রতি কিলোমিটার ১২ টাকা এবং বিরতিকালীন চার্জ প্রতি মিনিটে ২ টাকা করা হয়। এরপরও মালিকরা নিজেদের ইচ্ছামতো জমা এবং ভাড়া বাড়িয়ে নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। চালকেরা যাত্রীদের জিম্মি করে আদায় করছেন ইচ্ছামাফিক ভাড়া। যেতে চাইছেন না যে কোনো গন্তব্যে। ফলে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

অটোরিকশার এ অনাচারের মধ্য দিয়ে টানা ১৫ বছর পার হয়েছে। বিআরটিএ ও মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে এখন প্রায় ১৫ হাজার ১৯৮টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। নিবন্ধন পাওয়ার সময় এগুলোর বয়সসীমা (ইকোনমিক লাইফ) ছিল ৯ বছর। অর্থাৎ হিসাব অনুযায়ী, এ সময়ের মধ্যে মালিকরা বিনিয়োগ তুলে পর্যাপ্ত লাভ করবেন। কিন্তু পরে মালিকদের চাপে অটোরিকশাগুলোর বয়সসীমা তিন দফায় ছয় বছর বাড়ানো হয়। ১২ হাজার ৭১৫ অটোরিকশা দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় কেনা। বাকি তিন হাজারের মতো অটোরিকশার প্রতিটির দাম পড়েছে চার লাখ টাকা। কিন্তু গত ১৫ বছরে প্রতি অটোরিকশা থেকে মালিক সরকারি হিসাব ধরলে ২৭ লাখ টাকা আয় করেছেন। বাস্তবে তারা একটি অটোরিকশা থেকে আয় করেছেন ৫০ লাখ টাকা। এত লাভের পরেও নিয়ম লঙ্ঘন করে বিভিন্ন সময় চালকদের জমার পরিমাণ বাড়িয়েছেন মালিকরা। আর এ টাকা তুলে নিজেদের লাভ রাখতে চালকরা জিম্মি করছেন যাত্রীদের। এখন একটি সিএনজি অটোরিকশা হাত বদল হতে ১২ থেকে ১৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়।

এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ অটোরিকশার মেয়াদ বাড়িয়ে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। এসব যানবাহন রাস্তা থেকে তুলে নতুন যানবাহন নামানো উচিত। আর এর মালিকানা কিছু মানুষের হাতে তুলে না দিয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখার সুপারিশ করেন তিনি।

 

সর্বশেষ খবর