মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

অপরিকল্পিত পার্কিংয়ে বাড়ছে যানজট

জয়শ্রী ভাদুড়ী

অপরিকল্পিত পার্কিংয়ে বাড়ছে যানজট

রাজধানীতে অপরিকল্পিত পার্কিংয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। রবিবার নগরীর দিলকুশা থেকে তোলা। ছবি : রোহেত রাজীব

রাজধানীতে অপরিকল্পিত পার্কিংয়ের কারণে যানজট ও জনদুর্ভোগ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। নগরীর কয়েকটি স্থানে বাণিজ্যিক স্থাপনার ভিড়ে পার্কিং স্পেস তৈরি করা হলেও সেগুলোর কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না। নগরীর ৮০ ভাগ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে নেই গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত জায়গা। বাণিজ্যিক ভবনগুলোর স্বীকৃত পার্কিং স্পেসে গড়ে তোলা হয়েছে দোকান, ব্যবসাসহ নানা স্থাপনা। আবাসিক ভবনগুলোতেও ফ্লোর স্পেস অনুযায়ী পার্কিংয়ের জায়গা রাখা হচ্ছে না। ফলে রাস্তায় অপরিকল্পিত পার্কিং নেওয়ায় বাড়ছে যানজট। নগরজুড়ে এ অরাজকতা দূর করতে একটি কার্যকর পার্কিং নীতিমালা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। এর পাশাপাশি ট্রাফিক আইনের কঠোর বাস্তবায়ন ও জনসচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন তারা।

দেশের ব্যাংক-বীমা ও বাণিজ্যকেন্দ্র খ্যাত মতিঝিল-দিলকুশায় পার্কিং নৈরাজ্য সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি রাস্তার দুই পাশে গাড়ি রাখা হয়েছে যার যার মতো। রাস্তায় গাড়ি রেখে দিনভর অফিস করছেন অনেকে। অথচ মতিঝিল ও দিলকুশায় গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য সাধারণ বীমা ভবন ও সিটি সেন্টারে জায়গা রাখা হয়েছে। এসব জায়গায় গাড়ি রাখতে বাধ্য করা যাচ্ছে না গাড়ি মালিকদের।

৩৭তলা সিটি সেন্টারে ৬২৪টি গাড়ি রাখার জায়গা রয়েছে। বেশির ভাগ জায়গাই সারা দিন ফাঁকা থাকে। সাধারণ বীমার পার্কিং স্পেসেও গাড়ি রাখা হচ্ছে খুবই কম। গাড়ি মালিক, চালকরা রাস্তায় গাড়ি রাখতেই বেশি পছন্দ করেন। শুধু এ এলাকায়ই নয়, রাজধানীর বেশির ভাগ ভবন ও বিপণিবিতানে গাড়ি রাখার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ফলে রাস্তার ওপর রাখা হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ি। এতে শহরের সংকীর্ণ রাস্তা হয়ে পড়ছে আরও সংকীর্ণ। বাড়ছে যানজট। একাধিক কার্যদিবসে মতিঝিল-দিলকুশা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার ওপর পার্কিং করা অসংখ্য গাড়ি। যেন গাড়ি শো-রুমের সামনে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রাস্তায় গাড়ি পার্কিং রোধ করতে মতিঝিল সিটি সেন্টারের ১০টি ফ্লোর বরাদ্দ আছে কার পার্কিংয়ের জন্য। এর মধ্যে গত বছরের নভেম্বরে ৪টি ফ্লোরে ঘণ্টায় ১০ টাকা হারে পার্কিং সুবিধা চালু করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। কিন্তু তেমন সাড়া মিলছে না। শুধু মতিঝিল-দিলকুশা এলাকাই নয়, সচিবালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, বনানী, গুলশান, উত্তরাসহ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার চিত্রও একই রকম। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, রেস্তোরাঁ, শিক্ষাঙ্গনের সামনের সড়ক থাকছে ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। মামলা ও জরিমানা করেও অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে পারছে না পুলিশ।

এদিকে রাজধানীতে প্রতিদিনই বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা। বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে রাজধানীতে অন্য যানবাহনের পাশাপাশি প্রাইভেট কার যোগ হয়েছে ১৬ হাজারের বেশি। যে হারে গাড়ি বাড়ছে সে তুলনায় পার্কিংয়ের জায়গা না বাড়ার ফলে যানজট দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। অবৈধ পার্কিং বন্ধে মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট ও পুলিশি অভিযান চালানো হয়। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় গাড়ি চালকরা বাধ্য হয়েই রাস্তার ওপর গাড়ি রাখেন। নগর ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার ওপর অবৈধ পার্কিং থেকে টোল তোলে স্থানীয় বিভিন্ন সিন্ডিকেট। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত আছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এ ছাড়া অবৈধ পার্কিং করা এসব গাড়ি থেকে পুলিশ নিয়মিত টাকা নেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় পার্কিং নিয়ে রীতিমতো বাণিজ্য চলছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় রাজধানীবাসীকে প্রাইভেট কার ব্যবহার কমিয়ে গণপরিবহন ব্যবহারের প্রতি জোর দিতে হবে।

এ ছাড়াও ট্রাফিক পুলিশের আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি কার্যকর পার্কিং নীতিমালা তৈরি করতে হবে। গাড়ির মালিক এবং চালকরা বলছেন, রাজধানীতে পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ সময় রাস্তায় গাড়ি রাখতে হয়। আর এতেই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা থাকলে রাস্তায় গাড়ি রাখার দরকার হতো না।

সূত্র জানায়, কার্যদিবসে রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ছয় লাখ গাড়ি চলাচল করে। পার্কিংয়ের জন্য জায়গা লাগে প্রায় দুই লাখ গাড়ির। পার্কিংয়ের জায়গা না পেয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি রেখে যানজটের সৃষ্টি করছেন গাড়িচালকরা। ওয়ান-ইলেভেনের সময় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে প্রায় দুই হাজার গাড়ি পার্কিং স্পেস বের করা হয়েছিল। তদারকির অভাবে সেসব জায়গা আবারও বেদখল হয়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর