বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

অরক্ষিত ফ্লাইওভার

জয়শ্রী ভাদুড়ী

অরক্ষিত ফ্লাইওভার

মগবাজারে নতুন ফ্লাইওভারের নিচে সবজি বাজার, খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে মুরগি বাজার ও হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে আস্তাবল ছবি : জয়ীতা রায়

চালু হওয়ার এক মাস পার না হতেই মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচে চায়ের দোকান, অবৈধ পার্কিং, ফলের দোকান দিয়ে দখল করা হচ্ছে ফাঁকা জায়গা। আর রাত হলেই ফ্লাইওভারের নিচে বসছে মাদকের আড্ডা। ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা দখলের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ঘোড়ার আস্তাবল, বাসস্ট্যান্ড জুতার দোকান, মুদি দোকান আর হকারের স্থায়ী আবাসস্থল হিসেবে পরিণত হয়েছে। সবজি, মাছ, মাংসের বাজার বসছে ফ্লাইওভারের নিচে। দখলদারদের কবলে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলো।

রাজধানীর পাঁচটি ফ্লাইওভারের মধ্যে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার, কুড়িল ফ্লাইওভার এবং মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচের অংশ চলে গেছে অবৈধ দখলকারীদের হাতে। শুধু মহাখালী এবং বনানী ফ্লাইওভার নিচের অংশ এখনো ফাঁকা আছে।

গতকাল মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের মালিবাগ থেকে রাজারবাগ যাওয়ার রাস্তায় দেখা যায় ফ্লাইওভারের নিচে গড়ে উঠেছে লেগুনা স্ট্যান্ড। লেগুনাগুলো সারি করে রেখে দখল করা হয়েছে ফ্লাইওভারের নিচের এ অংশ। কিছুদূর গিয়ে রাজারবাগ-২ নম্বর গেটের গ্রিন লাইন কাউন্টারের সামনে চায়ের দোকান দিয়ে দখল করা হয়েছে জায়গা। অন্যদিকে শান্তিনগর বাজার ও এফডিসির সামনে গিয়ে দেখা যায় ফ্লাইওভারের জায়গা দখল করে সবজি ও মাছের বাজার দিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। কাঁচামাল রেখে দখল করা হচ্ছে জায়গা। মাছের আঁশ, সবজির উচ্ছিষ্ট ফেলে নোংরা করে রাখা হচ্ছে ফ্লাইওভারের নিচের এ অংশ।

ফ্লাইওভারের নিচের সড়কটি দিয়ে মালিবাগ মোড় থেকে শান্তিনগরের দিকে যেতেই চোখে পড়ে ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা দখল করে রেখে দেওয়া হয়েছে অসংখ্য বাস, মাইক্রোবাস, জিপ, প্রাইভেট কার। এগুলোর কোনোটিতে চলছে মেরামত, কোনোটি আবার কাজ ছাড়াই পার্ক করে রাখা। এ পার্কিংকে ঘিরে ব্যবসা চালাচ্ছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এখানেই চলছে গাড়ি মেরামত, রং করা এবং ধোয়ামোছার কাজ।

চায়ের দোকান, জুতার দোকান, শীতের পোশাক, ভাতের হোটেল, ঘোড়ার আঁস্তাবল, পার্কিং, বাসস্ট্যান্ড সবকিছুরই দেখা মিলবে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার চালু হয়। চার লেনবিশিষ্ট এ উড়ালসড়ক কাজলা থেকে নিমতলী পর্যন্ত বিস্তৃত। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে নিমতলী পর্যন্ত হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের বিভিন্ন অংশে দুই শতাধিক চা ও ফলের দোকান এবং ভাতের হোটেল গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে উড়ালসড়কের নিচে যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তের পাশে শাকসবজির দোকান এবং পশ্চিমে আনন্দবাজারে ইটপাথরের ব্যবসা চলছে। বঙ্গবাজার, টিকাটুলীর রাজধানী সুপার মার্কেট ও সায়েদাবাদ এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে ছিন্নমূল মানুষের বাস। কাপ্তানবাজার অংশে মুরগির খাঁচা ও বর্জ্যের কারণে দুর্গন্ধে উড়ালসড়কের নিচ দিয়ে চলাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ এলাকার বাসিন্দা সোহেল খান বলেন, এভাবে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে হাতেগোনা কিছু মানুষ। এসব দখলদারের জন্য রাস্তায় তৈরি হচ্ছে যানজট। বহাল তবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে গেলেও দেখার কেউ নেই।

গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া অংশে অস্থায়ী জুতার দোকান, ফলের দোকান, ভাতের হোটেল বসেছে। ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের সামনে ভাড়ায় মোটরসাইকেলের পার্কিং গড়ে উঠেছে। বঙ্গবাজার থেকে নিমতলী গেটের আগ পর্যন্ত ঘোড়ার আঁস্তাবল আর ময়লার ভাগাড় গড়ে উঠেছে। বঙ্গবাজার ও ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের দুপাশে চার সারিতে শতাধিক বাস রাখা আছে। এতে সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ এলাকায় এলোমেলোভাবে রাখা হয়েছে রিকশাভ্যান। রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ দেখলে মনে হবে এটা গাড়ির কোনো শোরুম। একদিকে চলছে গাড়ি মেরামত অন্যদিকে চলছে গাড়ি রং করা। নগরবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, মগবাজার ফ্লাইওভার চালু হলেও এর দেখাশোনার দায়িত্ব কে পাবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। এ সুযোগে অবৈধ দখলদাররা আস্তানা গড়ে তুলছে। নগরে ৫৪টি সেবা সংস্থার সমন্বয় করতে গিয়ে এ টানাপড়েন তৈরি হচ্ছে। এজন্য সিটি করপোরেশনের ভিতরের যাবতীয় বিষয়ের দায়িত্ব মেয়রদের দেওয়া উচিত। ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ দখল ঠেকাতে গাছ লাগিয়ে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর