মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

শীতে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট হৃদরোগ স্ট্রোক

জয়শ্রী ভাদুড়ী

শীতে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট হৃদরোগ স্ট্রোক

শীতে চর্বি ঝরানোর প্রস্তুতি থাকতে হবে। রমনা পার্ক থেকে তোলা ছবি : জয়ীতা রায়

ষড়ঋতুর চক্রে এখন প্রকৃতিতে জেঁকে বসেছে শীত। হিমবুড়ির আগমনী বার্তায় কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে চারপাশ। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আর শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নগরজীবনে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ আর স্ট্রোকের প্রকোপ। শুধু তাই নয়, শীত এলে ব্যায়ামে অনীহা এবং পিঠা-পুলির লোভ সামলাতে না পেরে শরীরের ওজন বৃদ্ধি নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় নগরবাসীকে।

গতকাল রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকে ১০টা এই এক ঘণ্টায় পাঁচজন রোগীকে জরুরি সেবা দেওয়া হয়। একজন রোগীকে সেবা দিতেই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে রোগী নিয়ে হাজির হয় আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স। রোগীর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচজন রোগীর মধ্যে চারজনের বয়সই পঞ্চান্নোর্ধ্ব। আর একজন রোগীর বয়স ৪৮। রোগীদের প্রত্যেকেই শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন।

একই অবস্থা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত নার্স জানান, ডিসেম্বরের শুরু থেকে জরুরি বিভাগে যেসব রোগী এসেছেন তাদের সিংহভাগই হৃদরোগে আক্রান্ত। সারা বছর হৃদরোগ, স্ট্রোকে যে পরিমাণ রোগী আসেন তার দ্বিগুণ রোগী আসেন ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে। শীতে রোগের প্রকোপের বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শীতে শুধু প্রকৃতির পরিবর্তন হয় তাই নয়, শরীরেও বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন হয়। প্রকৃতিতে তাপমাত্রার ওঠানামার সঙ্গে দেহেও তাপমাত্রার প্রভাব পড়ে। মানুষের রোগবালাই সবচেয়ে কম থাকে নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রায় (১৫-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। তাপমাত্রা কম বা বেশি হলে অসুখ-বিসুখের প্রকোপ বেড়ে যায়। মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, যেমন : মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড ও ফুসফুস বিভিন্ন রকমের রোগে আক্রান্ত হয়। ফুসফুসের সাধারণ অসুখ থেকে মারাত্মক ধরনের নিউমোনিয়া, অ্যাজমার প্রকোপও বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, শীতে হার্টঅ্যাটাক ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে হঠাৎ যখন তাপমাত্রা বেশি কমে যায়, তখন এই ঝুঁকি অনেক বাড়ে।

এই ঝুঁকি বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, হঠাৎ মাত্রাতিরিক্ত শীতের মুখোমুখি হলে মানুষের রক্তনালি সংকুচিত হয়ে পড়ে। এতে অভ্যন্তরীণ রক্তচাপ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে রক্তের ভিতরে কিছু জৈব-রাসায়নিক পরিবর্তনও ঘটে। এ কারণে রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। তাই আগে থেকেই যাদের রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের রক্ত জমাট বেঁধে থ্রম্বসিস বেশি ঘটে। আর এই থ্রম্বসিস বা জমাট রক্ত বাঁধার ঘটনা যখন হার্টের করোনারি আর্টারিতে হয়, তখন হার্টঅ্যাটাক হতে পারে। মস্তিষ্কের সেরিব্রালে হলে স্ট্রোক করতে পারে। এ কারণে ভোরের দিকে স্ট্রোক এবং হৃদরোগে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়। একইভাবে শীতের কারণেও ঝুঁকি বাড়ে এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের। তাই রোগের ঝুঁকি কমাতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, শীতের সময় শরীর গরম রাখতে পারে এমন কাপড় পরতে হবে। গোসলের সময় বরফ-শীতল পানি এড়িয়ে চলা এবং মাঝে মধ্যে আদা চা বা গরম দুধ পান করতে পারলে ভালো হয়। ঋতুর পরিবর্তনে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনে পরিবর্তন আসায় ওজন বেড়ে যায় অধিকাংশ মানুষের। ফলে সারা বছর ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিশ্রম পণ্ডশ্রমে পরিণত হয়। শীতে ওজন বাড়ার কারণ হিসেবে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন, ঠাণ্ডার কারণে ব্যায়াম কম করা, পানি কম খাওয়া, পিঠা জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া এবং দিন ছোট হওয়ায় নিয়মিত রুটিনে পরিবর্তন আসায় মানুষ অনেক সময় মুটিয়ে যায়। এ ছাড়া শীতে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন বেশি হওয়ায় খাওয়া বেশি হয়ে যায়। তাই এ ওজন ঠিক রাখতে দিনের খাবারে ক্যালোরি হিসাব করে রুটিন করে নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ঘরে করা যায় এমন ব্যায়ামসহ ব্যাডমিন্টন খেলায় মনোযোগী হলে ওজন বৃদ্ধির সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব।  

সর্বশেষ খবর