মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাড়ছে মানুষ বাড়ছে রাজধানী

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বাড়ছে মানুষ বাড়ছে রাজধানী

নগর বাড়ছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে। রাজধানীর উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পে তৈরি হচ্ছে তিন ক্যাটাগরিতে ১৮ হাজার ৭৩২টি ফ্ল্যাট। ইতিমধ্যে সাড়ে ৩ হাজার ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে —রোহেত রাজীব

কাজের খোঁজে প্রতিদিনই রাজধানীমুখী হচ্ছে হাজারো মানুষ। একজন থেকে দুজন হয়ে তৈরি হচ্ছে পরিবার। কোটি মানুষকে জায়গা করে দিতে বাড়ছে রাজধানীর পরিসর। সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে উঠছে অট্টালিকা। তবে যেখানে-সেখানে ইচ্ছেমতো বসতি তৈরি না করে পরিকল্পনা মাফিক এবং নিয়মানুযায়ী নগরায়ণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। নগরবিদ মোবাশ্বের হোসেন বলেন, আমাদের স্বভাব হলো সমস্যা হলে তা সমাধান করার উপায় খুঁজি। সমস্যাই যেন তৈরি না হয় সেজন্য পরিকল্পনা মাফিক কাজ করার অভ্যাস খুব কম। কিন্তু বাসযোগ্য শহর তৈরি করতে গেলে অবশ্যই মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, কোন এলাকায় কত উঁচু দালান তোলা যাবে এসব বিষয় নকশা অনুমোদনের সময় অবশ্যই খেয়াল করতে হবে। বসতি তৈরি হওয়ার আগে পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। তা ছাড়া পরবর্তীতে ঢেলে সাজাতে গেলে এগুলো নগরীর গলার কাঁটা হয়ে বিঁধবে।

জানা যায়, পরিকল্পিত নগরায়ণ এবং বাসস্থানের মৌলিক চাহিদা পূরণে রাজধানীর উত্তরা ও পূর্বাচলে আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। উত্তরার প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এগিয়ে চলছে পূর্বাচল প্রকল্পের কাজ। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানায় উত্তরখান, দক্ষিণখান, আশুলিয়া, সাভার, টঙ্গী, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জ এলাকায় গড়ে উঠছে বসতি। অনেকেই আবাসন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে অথবা ব্যক্তিমালিকানায় কিনছেন জায়গা। নিজের স্থায়ী বসতি তৈরি করছেন দালানকোঠা। কিন্তু বাড়ি তৈরির সময় অনেকেই মানছেন না ইমারত বিধিমালা। আর এসব কারণে পয়ঃনিষ্কাশন থেকে শুরু করে জলাবদ্ধতার সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের বিভিন্ন শহরের মধ্যে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ১১তম। কিন্তু ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা পৌঁছে যাবে ষষ্ঠ স্থানে। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টের রিপোর্ট ২০১৬ অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা এক কোটি ৭০ লাখ। ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাবে দুই কোটি ৭৪ লাখে। এ সময় ঢাকা পেছনে ফেলবে করাচি, মেক্সিকো সিটি, কায়রো, সাও পাওলো এবং নিউইয়র্কের মতো শহরগুলোকে। জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী গ্রাম থেকে শহরে বাস করা লোকের সংখ্যা বাড়ছে। এখন বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশ শহরে বাস করে। ১৯৫০ সালে এ হার ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ। ২০৫০ সালে শহরে বাস করার হার মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ হবে বলে জাতিসংঘ মনে করছে। জাতিসংঘের ওই রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সবচেয়ে জনবহুল শহর হচ্ছে টোকিও। এর জনসংখ্যা তিন কোটি ৭৮ লাখ। এর পরের অবস্থান দিল্লির জনসংখ্যা আড়াই কোটি। দুই কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে সাংহাই আছে তৃতীয় অবস্থানে। এর পর আছে মেক্সিকো সিটি (দুই কোটি আট লাখ), সাও পাওলো (দুই কোটি আট লাখ), মুম্বাই (দুই কোটি ৭০ লাখ), ওসাকা (দুই কোটি এক লাখ), বেইজিং (এক কোটি ৯৫ লাখ), নিউইয়র্ক (এক কোটি ৮৬ লাখ), কায়রো (এক কোটি ৮৪ লাখ), ঢাকা (এক কোটি ৭০ লাখ), করাচি (এক কোটি ৬১ লাখ)। কিন্তু ২০৩০ সালের বিষয়ে জাতিসংঘ যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাতে চিত্রটা এরকম : প্রথম টোকিও (তিন কোটি ৭২ লাখ), দ্বিতীয় : দিল্লি (তিন কোটি ৬১ লাখ), তৃতীয় : সাংহাই (তিন কোটি আট লাখ), চতুর্থ : মুম্বাই (দুই কোটি ৭৮ লাখ), পঞ্চম : বেইজিং (দুই কোটি ৭৭ লাখ), ষষ্ঠ : ঢাকা (দুই কোটি ৭৪ লাখ)। এভাবে প্রতিদিন বাড়ছে রাজধানীর জনসংখ্যা। সরকারি-বেসরকারি খাতে নতুন লোকবলের আগমন হলেও সে তুলনায় তাদের আবাসন সুবিধা বাড়ছে না। বর্তমানে সরকারি প্রতিষ্ঠানে এক লাখ ৪৮ হাজার ৯১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন। কিন্তু তারা মাত্র আট শতাংশ আবাসন সুবিধা পান। সরকারি চাকুরেদের এই আবাসন সংকট নিরসনে তিনটি পৃথক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান তারা।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাহবুব জামান বলেন, চাকরির তাগিদে আমরা এখন স্থায়ীভাবে ঢাকার বাসিন্দা। প্রতিমাসে বাড়ি ভাড়া দিতেই বেতনের অর্ধেক টাকা চলে যায়। তাই কিস্তিতে সরকার যদি আমাদের জন্য ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে তাহলে জীবনযাত্রা অনেক সহজ হয়ে যায়। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের আবাস এই নগরীতে। স্বল্প আয়ের মানুষের বসবাসের তাগিদে তৈরি হয়েছে বস্তি। মাঝেমাঝেই উচ্ছেদ আর অধিগ্রহণে উদ্বাস্তু হয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয় বস্তিবাসী মানুষকে। বস্তিবাসী মানুষের জন্য স্বল্প পরিসরে আবাসন প্রকল্প নিলেও সেগুলোর বণ্টন নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। কড়াইল এলাকার বাসিন্দা মিজান উদ্দিন বলেন, ৯৬ একর জায়গার মধ্যে এক লাখ মানুষের বসবাস। ছোট্ট ঘরের মধ্যে গাদাগাদি করে আটজন থাকি। এই ঘরের ভাড়া দিতে হয় তিন হাজার টাকা। রিকশা চালিয়ে এই বাসা ভাড়া পরিশোধ করে সংসার চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

সর্বশেষ খবর