মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

চিড়িয়াখানায় শুদ্ধাচার চর্চা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চিড়িয়াখানায় শুদ্ধাচার চর্চা

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা তিন বছর আগেও ছিল আর্থিক দৈন্যদশায়। পশু থাকত অনাহারে। খাঁচার অনেক প্রাণী ছিল জীর্ণশীর্ণ। দর্শকশূন্য চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচায় রাখা হতো তিতিরপাখি। খাঁচা থাকলেও ছিল না সিংহ। ভাঙা খাঁচা থেকে বের হয়ে যেত হনুমান ও বানর। ছিল না কোনো সীমানাপ্রাচীর। কিন্তু তিন বছরের ব্যবধানে দৈন্যদশা থেকে স্বাবলম্বী হয়েছে চট্টগ্রামের একমাত্র চিড়িয়াখানাটি। বেড়েছে দর্শনার্থী। প্রতিদিন গড়ে আসছে তিন হাজার দর্শনার্থী, ছুটির দিনে এ সংখ্যা সাত হাজার পেরোয়। ফলে ঘুচছে আর্থিক দৈন্যতা। গত তিন বছরে টিকিট বিক্রির অর্থ দিয়েই আড়াই কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। যোগ হয়েছে দুটি বাঘ ও একটি সিংহ। ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে শিগগিরই আসছে ছয়টি জেব্রা। ১৯৮৯ সালে নগরের ফয়েজ লেকের পাশে ৬ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত চিড়িয়াখানায় এখন ৬৭ প্রজাতির তিন শতাধিক পশুপাখি আছে। প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা। চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মুহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচারের অনুশীলন থাকলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবেই। এই শুদ্ধাচারের উত্তম দৃষ্টান্ত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। দায়িত্ব নেওয়ার সময় অ্যাকাউন্টে ছিল এক লাখ ৭৬ হাজার ১২০ টাকা। এখন আড়াই কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ, ৩২ লাখ টাকায় দুটি বাঘ, ৪৮ লাখ টাকায় ৬টি জেব্রা ক্রয়ের পরও ব্যাংকে জমা আছে ৬০ লাখ টাকা। চিড়িয়াখানার নামে করা এফডিআরের ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সব কাজই করা হয়েছে টিকিট বিক্রির টাকায়। ২৫ বছর ধরেই চিড়িয়াখানার মিটিংয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। দক্ষিণ পাশে ছিল বর্জ্যের ভাগাড়। চিড়িয়াখানার পেছনে ছিল অনেকগুলো ঝুপড়ি ঘর। ভিতরের সড়কগুলোর অবস্থা ছিল বেহাল। প্রাণীদের জন্য ছিল না পানির স্থায়ী ব্যবস্থা। কাগজে-কলমে প্রাণীকে গরুর মাংস খাওয়ানোর কথা উল্লেখ থাকলেও খাওয়ানো হতো মুরগির মাংস। এমনকি ক্রয়কৃত খাবারের একটা অংশ কেয়ারটেকাররা তাদের নিজ বাড়ির গরু ছাগলকেও দিত। আয়ের একমাত্র উৎস টিকিট বিক্রির কোনো হিসাব ছিল না।

জানা যায়, চিড়িয়াখানার টিকিট বিক্রির ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে সীমানাপ্রাচীর, পশুদের জন্য দেওয়া হয় খাঁচা, আবর্জনার ভাগাড়কে করা হয়েছে নান্দনিক বৈঠকখানা। তিতিরপাখির পৃথক ঘর হয়েছে। বানানো হয়েছে সিঁড়ি। ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে প্রধান ফটক। চিড়িয়াখানার ভিতরে ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে দীর্ঘ রাস্তা। সর্বত্র বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। বাচ্চাদের জন্য করা হয়েছে ‘কিডস জোন’। দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে পরিচ্ছন্ন শৌচাগার। লাগানো হয়েছে ১ হাজার ফলদ বৃক্ষ। বাড়ানো হয়েছে আরও অনেক সুবিধা।

 

সর্বশেষ খবর