মঙ্গলবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

দূষণ ছড়াচ্ছে হাতিরঝিল

মানিক মুনতাসির

দূষণ ছড়াচ্ছে হাতিরঝিল

ভয়াবহ দূষণ ছড়াচ্ছে দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল। ভরা বর্ষা মৌসুমে ঝিলের পাড় ভরা পানি থাকলেও তা কুচকুচে কালো রং ধারণ করেছে। আর এই পানির সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ময়লা পচে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ঝিলের আশপাশ এলাকার মানুষ এবং পথচারীরাও এই দূষণের ভুক্তভোগী। বিশেষ করে কারওয়ানবাজার সোনারগাঁও হোটেল সংলগ্ন মেইন রোড, সাতরাস্তা, রামপুরা ব্রিজ, মধুবাগ এলাকার ভিতরে পর্যন্ত হাতিরঝিলের ঝাঁজালো গন্ধ নাকে এসে ধাক্কা মারছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, অতিষ্ঠ দর্শনার্থীদের বাধ্য হয়ে নাকে রুমাল চেপে সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা গেছে। ফলে দৃষ্টিনন্দন এই হাতিরঝিলের সামগ্রিক পরিবেশ এখন বিপর্যয়ের মুখে। ঝিলের পানিতে ভাসছে ময়লা পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত আবর্জনা। গত কয়েক দিন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ঝিলের পানি কিছুটা কমেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে পানিতে ভাসমান ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ। এই ময়লা-আবর্জনা আর দুর্গন্ধের জন্য সম্প্রতি ঝিলে দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে গেছে বলে জানা গেছে। এমনকি ঝিলের ভিতর দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির জানালার কাচ খুললেই ভিতরে ঢুকছে দুর্গন্ধ। গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় মানুষ জরুরি কোনো প্রয়োজন ছাড়া গাড়ির জানালাও খুলতে পারছেন না। আর দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে পথচারীরা মুখে রুমাল চেপে দ্রুত প্রকল্প এলাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন প্রতিনিয়ত।

সরেজমিন দেখা গেছে, দর্শনার্থীদের ফেলা কাগজের টুকরো, পলিথিন, খাবারের বক্স, থুথু, কফ, চিপসের প্যাকেট ও অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। পরবর্তীতে এসব আবর্জনার পচনে দূষিত হচ্ছে ঝিলের পানি। ঝিলে নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে পাবলিক টয়লেট থাকা সত্ত্বেও অনেক দর্শনার্থী ঝিলের রাস্তার ও ব্রিজের পাশে মলও ত্যাগ করছেন অহরহ। যা পুরো এলাকার পরিবেশকে দূষিত করছে। এদিকে ঝিলের রাস্তার পাশে স্থাপন করা ময়লা ফেলার দৃষ্টিনন্দন বিন উধাও হয়ে গেছে বহু আগেই।

 হাতিরঝিল প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, আশপাশের ময়লা-আবর্জনা ঢুকে পড়ছে ঝিলের পানিতে। যা পরবর্তীতে দূষণ ছড়াচ্ছে। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় ঢাকা ওয়াসার নির্মাণাধীন পানি শোধনাগারটির কাজ শেষ না হওয়াও দূষণ বৃদ্ধির একটা অন্যতম কারণ।

এরপর পানির দুর্গন্ধ তাড়াতে ঝিলের পানিতে বিভিন্ন ধরনের ভাসমান উদ্ভিদ লাগানো হচ্ছে। এদিকে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলো ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেনি। এখনো করছে না। ফলে এ ঝিলের পরিবেশ এখন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। হাতিরঝিলে গোপন নালা দিয়ে ময়লা ঢোকার সুযোগ নেই। ড্রেনেজ সিস্টেমের মধ্য দিয়ে হাতিরঝিলে বৃষ্টির পানি ঢুকবে এবং হাতিরঝিল চারপাশের বৃষ্টির পানি ধারণ করবে—এটাই ছিল প্রকল্পের উদ্দেশ্য। কিন্তু  তা হয়নি। ফলে পরিবেশও রক্ষা হচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন। জানা গেছে, ঝিলের সঙ্গে মহাখালী, মগবাজারের টঙ্গী ডাইভারশন রোড, মধুবাগ, বেগুনবাড়ি, নিকেতন, তেজগাঁও, বাড্ডা ও রামপুরা এলাকার দশটি সংযোগ আছে। যেগুলো দিয়ে আশপাশের এলাকার বৃষ্টির পানিসহ ময়লা পানি, শহরের পয়োবর্জ্য ও শিল্পবর্জ্য এসে ঢুকে পড়ছে ঝিলে। ফলে পানি দূষিত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এসব সংযোগ বন্ধ করা না গেলে কিংবা পনি শোধন কেন্দ্রটি দ্রুত চালু না করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তির অন্য কোনো পথ নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর