মঙ্গলবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

আকাশ বাড়ির সবুজ উঠান

জয়শ্রী ভাদুড়ী

আকাশ বাড়ির সবুজ উঠান

রাজধানীতে শখের ছাদ বাগান জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মিরপুর ডিওএইচএস থেকে তোলা ছবি : জয়ীতা রায়

শ্রাবণের ফুলঝুরি মেঘ দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি ডেকে এনে ভিজিয়ে দিল পুরোটা। ঘণ্টা দেড়েক বৃষ্টিতে ভিজে রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএসে ঠিকানা মিলিয়ে খুঁজতে লাগলাম কাঙ্ক্ষিত বাসার নম্বর। পাশের নির্মাণাধীন বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আকাশের অবস্থা বুঝতে গিয়ে চোখ আটকে গেল পাশের বাড়ির ছাদের কার্নিশে। বৃষ্টির ছোঁয়ায় লকলকিয়ে উঠেছে পুঁইশাকের কচি ডোগা, পাশেই বাতাসের সঙ্গে লড়াই করে চলছে কলা গাছের কচি পাতা। ছাদে কলা গাছ দেখে একটু বিস্ময় নিয়ে বাড়ির নম্বর মিলাতে গিয়ে দেখি এটাই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য।

কলিংবেল বাজাতেই হাসি মুখে দরজা খুলে দিলেন দিলারা কাদের।

গল্পের এক পর্যায়ে পরিবেশন করা হলো গরম পুরি। মুখে দিয়ে পুদিনা পাতার নির্যাসে ভিন্নতার ছোঁয়া। পুরির রেসিপি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বাজার থেকে পুদিনা কিনে এনে সেখান থেকে কিছু মূল আমার ছাদে বিছিয়ে দিয়েছিলাম। যত্ন পেয়ে পুরো পুদিনা বাগান হয়ে গেছে। শুধু পুদিনা নয় রয়েছে প্রায় ২০০ গাছ। সবুজের প্রতি সবার থাকে অমোঘ আকর্ষণ। গল্পের পাতা উল্টিয়ে বললাম তাহলে চলুন একটু আপনার ছাদ বাগান ঘুরে আসি। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়ে ছাদে উঠে চোখ তো ছানাবড়া হওয়ার অবস্থা। আম, জাম, জাম্বুরা, বেগুন, ঢেঁড়স, পেয়ারা, আমড়া, আদা, লেবু, কদবেল, কাঁচামরিচ, পাথরকুচি, থানকুনি সব রকমের গাছের সমাহার। ফলদ থেকে শুরু করে ঔষধি কোন ধরনের গাছ নেই তাই খুঁজে দেখতে লাগলাম।

ছাদ বাগান গড়ে তোলার গল্প শুনতে চাইলে বলেন, গাছের প্রতি আমার অন্যরকম ভালোবাসা। ছোটবেলা থেকেই গাছ লাগাতাম। ২০১০ সালে ছাদে বাগান শুরু করেছিলাম। কিন্তু মালী মাটির সঙ্গে সারের পরিমাণ বেশি দিয়ে দিয়েছিল। তখন প্রায় সব গাছ মারা যায়। এরপর ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আবার গাছ লাগাতে শুরু করলাম। এখন নিজের হাতেই বিভিন্ন রকমের সবজি লাগাই। কলা গাছে অনেক কলা আসছে, আমের মৌসুমে আম, জাম্বুরা। আজকেও এক ঝুড়ি বেগুন, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা তুলেছি নিজেদের খাবারের জন্য। শখের বশে করা বাগান থেকেই আমার মৌসুমি ফলের জোগান চলে আসে। সবুজে মোড়া এই ছাদে আসলে আমার মনটাই ভালো হয়ে যায়।

শ্যামলীর পিসি কালচারে ময়নাল হোসেন বাসার ঝুল বারান্দাকেই বানিয়ে ফেলেছেন উঠান। পাশে রাখা বিভিন্ন প্রজাতির বনসাই। বারান্দায় দাঁড়াতেই পায়ের ফাঁক গলে উঁকি দিয়ে যায় সবুজ ঘাস। ময়নাল হোসেন এবং তার স্ত্রী মেহেরিন আক্তার মিলে তৈরি করেছেন শখের ছাদ বাগান।

বেলকুনিতে ঘাস লাগানোর কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেন, ইট-কাঠের এই শহরে কোথায় পাব সবুজ ঘাস। তাই ঝুল বারান্দাকেই বানিয়েছি সবুজ উঠান। যেমন ভাবা তেমন কাজ। চারপাশে কাঠ দিয়ে আটকে ভিতরে কয়েক স্তরে মাটি ফেলে বিছানা তৈরি করেছি। এর উপরে লাগিয়েছি ঘনসবুজ ঘাস। পানি আর রোদ পেয়ে বাড়ন্ত হয়ে উঠেছে ঘাসগুলো। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায় আমার। ছাদে গাছ লাগিয়ে তৈরি করেছি ছাদবাগান। প্রায় ১৫ বছর ধরে আমাদের দুজনের পরিশ্রম আর ভালোবাসায় আজকের অবস্থায় এসেছে আমাদের ছাদবাগান।

ছাদে গিয়ে দেখি চিলেকোঠার টবে উঁকি দিচ্ছে কাঁচামরিচ আর ঝুমকো বেগুন। সিঁড়ি ধরে নামতেই চোখ জুড়ায় আম, জাম আর লিচু মিলিয়ে প্রায় ৩১৮টি গাছের কচি পাতার ঘ্রাণ। বড় গাছের বৃত্ত থেকে মাথা তুলে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে লালশাকের কোমল পাতা। আর ছাদের ধার ঘেঁষে হাওয়ায় দোল খাচ্ছে লাউ, মিষ্টিকুমড়া আর পুঁইশাকের কচি ডোগা। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের ছাদের দৃশ্য এটি। এই দম্পতির মতো এমন উদ্যোগী মানুষের সংখ্যা এখন বাড়ছে। রাজধানীর গণ্ডি পেরিয়ে এ বাতাস ছড়িয়ে পড়ছে মফস্বলের অলিগলিতে। শস্য শ্যামল বাংলার প্রকৃতি চোখ জুড়ায় তার সবুজের অভয়ারণ্যে। কিন্তু সভ্যতার চাকায় ভর করে আকাশছোঁয়া অট্টালিকার ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি।

তাই প্রকৃতি বাঁচিয়ে সবুজের স্পর্শ পেতে নীলাভ আকাশের নিচের খোলা ছাদকেই বেছে নিচ্ছেন দালানের বাসিন্দারা। প্রথম দিকে ছাদের কোণায় টবে রকমারি মৌসুমি ফুল লাগানো ছিল মানুষের শখ। এই শৌখিনতা থেকে এখন কৃষি খাতে অবদান রাখতে শুরু করেছে ছাদের ফলমূল-সবজি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর